ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নূরজাহান-এস এ গ্রুপ

চার শিল্পপতির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪
চার শিল্পপতির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

চট্টগ্রাম: ঋণ পরিশোধের চেক প্রতারণার অভিযোগে বাণিজ্যিক ব্যাংকের দায়ের করা পৃথক মামলায় চার ধনাঢ্য শিল্পপতির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।

শিল্পপতিরা হলেন, নূরজাহান গ্রুপের মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহম্মদ এবং তার ভাই একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও একই গ্রুপের মেসার্স জাসমিয়া ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান।



এছাড়াও আছেন এস এ গ্রুপের সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাবউদ্দিন আলম ও তার স্ত্রী একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আলম।

এদের মধ্যে জহির আহম্মদ ও টিপু সুলতান যৌথভাবে একটি মামলায়, টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে এককভাবে তিনটি মামলায় এবং শাহাবউদ্দিন দম্পতির বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।


চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এস এম মুজিবুর রহমান এসব গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো.ওমর ফুয়াদের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টির সত্যতা বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন।

চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, শাহাবউদ্দিন দম্পতির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় নির্ধারিত ছিল সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি)। আর নূরজাহান গ্রুপের দুই কর্ণধারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর শুনানির সময় নির্ধারিত ছিল আজ (মঙ্গলবার)। কিন্তু অভিযোগ গঠনের শুনানিতে অভিযুক্তরা হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর আগ্রাবাদ ফিনলে হাউসের ঠিকানায় এস এ গ্রুপের সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেডের নামে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়। এসব ঋণ পরিশোধের জন্য সামান্নাজের পক্ষ থেকে ২০১৩ সালের ২১ মে অগ্রণী ব্যাংককে তিনটি চেক প্রদান করা হয়।

এর মধ্যে কমার্স ব্যাংকের অনুকূলে চার কোটি ৫০ লাখ ৫ হাজার টাকা ও ২০ কোটি ৪৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার দু’টি এবং ঢাকা ব্যাংকের অনুকূলে ৪৯ কোটি ১০ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করা হয়।

যেদিন চেক দেয়া হয় ওইদিনই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে সেগুলোর বিপরীতে টাকা গ্রহণ করতে গেলে ‘অপর্যাপ্ত তহবিলের’ জন্য চেকগুলো ডিজঅনার হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানকে জানানো হলেও এবং দু’দফায় লিগ্যাল নোটিশ দেয়ার পরও তারা এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

এরপর ২০১৩ সালের ৪ জুলাই অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখার সিনিয়র অফিসার সুলতান আহমেদ বাদী হয়ে নিগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট এর ১৩৮ ও ১৪০ ধারায় মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় শাহাবউদ্দিন আলম ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন আলমকে অভিযুক্ত করা হয়।

মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়ে আসার পর অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারণ করেন মহানগর দায়রা জজ। আসামিরা হাজির না হওয়ায় আদালত আগামী ৬ মার্চ আবারও অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নগরীর পাহাড়তলী থানার ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম সংলগ্ন নূরজাহান গ্রুপের মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের নামে কমার্স ব্যাংক থেকে ৫৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়। এ ঋণ পরিশোধের অংশ হিসেবে ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার বিপরীতে পাঁচ কোটি টাকার একটি চেক দেন। একইদিন চেকের বিপরীতে কমার্স ব্যাংকের পক্ষ থেকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে ‘অপর্যাপ্ত তহবিলের’ জন্য চেক ডিজঅনার হয়।

এরপর কয়েক দফা লিগ্যাল নোটিশ দিয়েও ঋণগ্রহীতার সাড়া না পেয়ে কমার্স ব্যাংকের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখার ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় জহির আহম্মদ ও তার ভাই টিপু সুলতানকে আসামি করা হয়। এ মামলায় আদালত আগামি ৪ মার্চ অভিযোগ গঠনের পরবর্তী সময় নির্ধারণ করেছেন।

এদিকে সোনালী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে নেয়া ঋণের বিপরীতে ২০১২ সালের ২৮ জুন পাঁচ কোটি টাকার দু’টি এবং চার কোটি টাকার একটিসহ মোট তিনটি চেক প্রদান করেন নূরজাহান গ্রুপের মেসার্স জাসমিয়া ভেজিটেবল অয়েলের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেক তিনটি ৫ আগস্ট জমা দেয়ার পর ‘অপর্যাপ্ত তহবিলের’ কারণে ডিজঅনার হয়।

২০১২ সালের ২৮ অক্টোবর সোনালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বাদী হয়ে আদালতে পৃথকভাবে তিনটি মামলা দায়ের করেন।

মঙ্গলবার এসব মামলায় অভিযোগ গঠনের নির্ধারিত দিনে আসামি আদালতে হাজিরা না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত আগামী ৫ মার্চ অভিযোগ গঠনের পরবর্তী সময় নির্ধারণ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।