ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সুশীল হতে পারবো না: সলিমুল্লাহ খান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৪
সুশীল হতে পারবো না: সলিমুল্লাহ খান

চট্টগ্রাম: সুশীল সমাজের কড়া সমালোচনা করে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড.সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, বিবেকের তাড়নায় তিনি কখনও সুশীল হতে পারবেন না।

শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা চক্রে তিনি এ কথা বলেন।



আগামী প্রজন্মের জন্য অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে আমাদের করণীয়-শীর্ষক এ আলোচনা চক্রে তিনি বলেন, সত্যিকারের ধর্মভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠা করতে হলে বাংলাদেশকে আগে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ।

উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রসঙ্গ নিয়ে বলতে গিয়ে ভারতের রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ, নরেন্দ মোদি, কেজরিওয়াল, আন্না হাজারের প্রসঙ্গ টানেন স্পষ্টকথনের জন্য আলোচিত এ বুদ্ধিজীবী।
তিনি বলেন, ভারতে এক লোক দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনশন করেছিলেন, কি যেন নাম-আন্না হাজারে, এরা ন্যায় কিংবা সমতার কথা বললেও এদের সবার কর্মকাণ্ডের ভেতরে এক ধরনের ফ্যাসিস্ট শক্তির বহি:প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশে একটি শ্রেণী আছেন যারা সুশীল সমাজের নামে কর্মকাণ্ড করেন যারা আসলে ওই আন্না হাজারেপন্থী। অনেকে আমাকে সুশীল সমাজ বলেন। আমি বলি, নাউজুবিল্লাহ সুশীল হতে পারবনা।

তিনি বলেন, প্রথম আলো একটা পত্রিকা আছে তারাও নিজেদের সুশীল ভাবে। কিন্তু নোবেল পুরস্কার কিংবা আন্না হাজারের অনশনের কথা চিন্তা করলে আমরা আসল চিত্রটা দেখব। অর্থনীতিতে কোন নোবেল পুরস্কারই নেই, অথচ অর্মত্য সেনের মত মেধাবী মানুষ সেটা প্রচার করে বেড়ান।

তিনি বলেন, প্রথম আলো কোনদিন গরীবের পক্ষে একটা লাইন লিখেনাই, অথচ তারাই শ্লোগান দেয়-যতদিন তোমার হাতে দেশ ততদিন পথ হারাবেনা বাংলাদেশ। আমার হাতে কলা ধরিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে আমি নাকি বাংলাদেশের মালিক। ছোট ছোট ছেলেদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে বলা হচ্ছে, তারা দেশের মালিক। এসব কাজের নাম যদি হয় সুশীল, তাহলে আমি বিবেকের তাড়নায় সুশীল হতে পারবনা।

তিনি বলেন, প্রথম আলো গরীবের পক্ষে লিখেনা, সেজন্য তাদের আমরা সুশীল ভাবতে পারবনা। আমি জানিনা প্রথম আলে‍া জেনেশুনে এ কাজ করছে কিনা। তবে তারা যে শ্লোগান দিচ্ছে তা ফ্যাসিস্ট শ্লোগান।

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সলিমুল্লাহ খান বলেন, অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলতে হলে ভারত ভাগ, পাকিস্তান গঠনের কথাও বলতে হবে। ১৯৪৭ সালে যারা পাকিস্তান গঠনের পক্ষে ছিলেন তাদের অনেকেই পরে আবার বাংলাদেশ গঠনের পক্ষেও ছিলেন। ন্যায়, সাম্য, সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ গঠন করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, দু’টি প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলাদেশ কি অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে নাকি সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হবে ? আমি মনে করি ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেতনাটি একাত্তর সালে নাকচ করেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেদিন হিন্দু, মুসলিম এক হয়েছিল বলেই আমরা পাকিস্তানকে পরাজিত করতে পেরেছিলাম।

তিনি বলেন, ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে হিন্দু-মুসলমান এক হয়েছিল। গাল ভরা বাক্য দিয়ে হবেনা। ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ এত সহজে আসেনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আগে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র হতে হবে। কারণ, অন্যায় আচরণ থেকেই সাম্প্রদায়িকতার উৎপত্তি।

খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যাপক গাজী সালেহউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি রথীন সেনের সঞ্চালনায় আলোচনা চক্রে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি কামরুল হাসান বাদল। বক্তব্য রাখেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান সাগর।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।