ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

খেজুরের রস, ক্ষীরপুলি আর ঢাকের তালে পৌষ পার্বণ

উজ্জ্বল কান্তি ধর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৪
খেজুরের রস, ক্ষীরপুলি আর ঢাকের তালে পৌষ পার্বণ

চট্টগ্রাম: শীতের সকালের কুয়াশা কেটে যায়নি তখনো, আছে মিষ্টি রোদের হাতছানি। মিষ্টি রোদ শরীরে মেখে বর্ণিল পোশাকে ক্যাম্পাসে হাজির শিক্ষার্থীরা।

ঢাকের তালে আনন্দে মেতে উঠেন কয়েক’শ ছাত্রছাত্রী।


শনিবার নগরীর বাদশা মিয়া রোডে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনিস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতি দিয়ে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য ‘পৌষ পার্বণ ও বাউল সন্ধ্যা’ উৎসব।



তরুণীদের কারো মাথার খোঁপায় সাদা আর লালফুল, পরনে বাঙ্গালীর ঐতিহ্যের বাহক জামদানী শাড়ি। সেই সাজেই কারও হাতে আইপ্যাড, খুব ব্যস্ত ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে। আবহমান সংস্কৃতিকে হাতের কাছে পেয়ে উদ্দীপ্ত সবাই।

উৎসবে ইনিস্টিটিউটকে ছায়া দেয়া গাছগুলোও সেজেছে রঙিণ সাজে, মঞ্চকে সাজানো হয়েছে রঙিন ঘুড়ি দিয়ে। শিল্পী রশিদ চৌধুরীর গ্যালারিতে তরুনীরা বসেছে খেজুরের রস, কদমু, ক্ষীরপুলি, পাশোয়ান, ঘাসফুল, চিতই, পানতুয়া, ঝুনি, মুখশল্লা, নকশী পিঠা আর পাহাড়ী কেংদওমু, বাঁশের ভিতর বিন্নি চালের ভাতসহ রকমারী পিঠার পসরা নিয়ে। যেন আমাদের চিরাচরিত গ্রামবাংলার পৌষপার্বণের একখণ্ড চিত্র।
 
চারুকলা ইনিস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন নাগরদোলা এ ‘পৌষ পার্বণ ও বাউল সন্ধ্যা’র আয়োজন করেছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ঢাকের তালে অনুষ্ঠান শুরুর পর প্রথমে ছাত্রছাত্রীদের আমাদের হাজার বছরের আবহমান বাংলার রুপের বর্ণনা তুলে ধরেন চারুকলার শিক শিল্পী মনসুরুল করিম, ড. ফয়জুর আমিন, আব্দুল কাইয়ুম, নাসিমা খাতুন ও নাসিম বানু।

বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, আমাদের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্যের নিজস্ব সংস্কৃতি কালের পরিক্রমায় নগর সংস্কৃতি থেকে বিদেশী অপসংস্কৃতির কারণে মুছে গেছে হাজারো উৎসব , এখন আমরা হারাতে বসেছি আমাদের নাড়ীর ছোঁয়া গ্রামবাংলার সংস্কৃতিও, সেখানেও অতি দ্রুত গ্রাস করছে এই অপসংস্কৃতি। এই গ্রাস থেকে আমাদের এই বিশাল ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে রা করতে তরুণ প্রজন্মকে এর পরিচয় ও সংযোগ ঘটাতে হবে করাতে আমাদেরকেই। তাহলেই এই অপস্কৃতির বিষ উপরানো সম্ভব।

নাগরদোলার সংগঠক শাকিল উদ্দিন বলেন, চারুকলার ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক কার্যক্রমের সাথে আমাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সম্পর্ক অত্যস্ত নিবিঢ়্। এই হারানো সংস্কৃতির শেকড়ে পৌঁছাতে আমাদের এই আয়োজন।

উৎসবে আরও আছে ইনস্টিটিউটের ৪৭ তম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের বাংলার প্রকৃতি বিষয়ক জল ও তৈলচিত্র প্রদর্শনী। ইনস্টিটিউটের ৬টি ব্যাচের ৬টি স্টলে আবহমান বাংলার মাঠির থালা, বেতে তৈরী ঝুড়িতে প্রদর্শন করা হচ্ছে কয়েকশ রকমের পিঠা পরিরবেশনও করা হচ্ছে অশ্বথ গাছ ও কলা গাছের পাতায় করে।
 
৪৭তমব্যাচের ছাত্রী মাকরায় মং বাংলানিউজকে বলেন, তিনি এই ধরনের  উৎসবে প্রথমবার অংশ নিয়েছেন খাগরাছড়ির পাহাড়ের লোকজ পিঠাকে সমতলের লোকজ পিঠার সাথে রেখে পরিচিত করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। এত দুই অঞ্চলের সংস্কৃতির হচ্ছে মিরন মেলা।

অনুষ্ঠানের দর্শনার্থী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র ছাত্র রাফি আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, তিনি এই ধরনের উৎসবে এই প্রথমবার এসেছেন, দেখলেন রকমারী ও স্বাদ নিলেন রকমারী সুস্বাধু পিঠার যা সচরাচর দেখা ও পাওয়া যায়না এই প্রথম শুনলেন নিজেরে চোখের সামনে ঢাকীদের ঢোল বাজানো।

মেলার দ্বিতীয় পর্বে বিকেলে রয়েছে পুতুল নাচ, সন্ধ্যায় পুতুল নাচ, ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনায় নৃত্য,গান ও আবৃত্তি। রাতে কুষ্টিয়ার রেজা ফকির ও তাঁর দলের বাউল গান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।