ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘অভিমানে’ সভা-সমাবেশে নেই পাঁচ নেতা

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৪
‘অভিমানে’ সভা-সমাবেশে নেই পাঁচ নেতা

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে আছেন পাঁচ প্রভাবশালী নেতা। নিজ নিজ এলাকায় নিজের অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকলেও নগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে সাংগঠনিক কোন সভা কিংবা কর্মসূচীতে তারা থাকছেন না।



পাঁচ নেতা হলেন, নগর আওয়ামী লীগের চার সহ সভাপতি ডা.আফছারুল আমিন, নূরুল ইসলাম বিএসসি, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও খোরশেদ আলম সুজন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী।

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসকদের আমলে কিংবা আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় চট্টগ্রামের রাজপথে থেকে দলকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে এসব নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে জানেন নেতাকর্মীরা।
দাপটের সঙ্গে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় ধরে এরাই ছিলেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সহচর।

কিন্তু সময়ের ব্যবধানে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ছেন এসব নেতা। গত ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকে অনেকটা ‘অভিমানে’ দূরে সরে আছেন তারা। কারন, পাঁচ নেতাই মনে করেন, নতুন কমিটিতে তাদের যোগ্য স্থান হয়নি।

সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল। তিনি বলেন, দলের সঙ্গে আছি, কাজ করছি। তবে আগের মত কতটুকু একাত্ম হতে পারব তা একান্তই নির্ভর করছে সময়ের উপর। ভবিষ্যতেই সব প্রশ্নের জবাব মিলবে।

গত ১৩ নভেম্বর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি এবং আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে ৯ জনকে সহ-সভাপতি করা হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটি ঘোষণার পর গত তিন মাসে কমপক্ষে সাতবার বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে নগর আওয়ামী লীগ। ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ছাড়া অন্য নেতারা কোন সভাতেই উপস্থিত ছিলেন না। বাবুল প্রথমদিকে নিয়মিত থাকলেও ইদানিং তিনিও আর যাচ্ছেন না।

ডা.আফছারুল আমিন চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-খুলশী) আসন থেকে এবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি গত মন্ত্রীসভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সর্বশেষ নগর আওয়ামী লীগ নবনির্বাচিত মন্ত্রী ও সাংসদদের সংবর্ধনার আয়োজন করলেও সেখানেও যাননি আফছারুল আমিন।

দলীয় কর্মসূচীতে অনুপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে ডা.আফছারুল আমিন বলেন, সহ-সভাপতি হিসেবে আমার কাজ সভাপতির অনুপস্থিতিতে দলের কাজ এগিয়ে নেয়া। আমার উপরে তো তিনজন সহ-সভাপতি আছেন। আমি চার নম্বর সহ-সভাপতি, আমি গেলেই বা কি, না গেলেই বা কি। আমার জন্য তো সাংগঠনিক কাজ থেমে থাকবেনা। আর পদ দিয়ে কি হবে, রাজনীতিটাই তো আসল। আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় রাজনীতি করি।

সংবর্ধনায় না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নগর আওয়ামী লীগ নবনির্বাচিতদের সংবর্ধনা দিয়েছে। আমি তো পুন:নির্বাচিত। আমি কেন সংবর্ধনা নেব ?

নগরীর কোতয়ালী আসন থেকে গতবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন পাঁচ নম্বর সহ-সভাপতি নূরুল ইসলাম বিএসসি। এবার আসনটি মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ ‍বাবলুকে ছেড়ে দেয়ায় তিনি শেষ মুহুর্তে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।

পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত বিএসসি’র সঙ্গে গত নির্বাচনের পর মহিউদ্দিনের বিরোধ শুরু হয়। বিএসসি আফছারুল আমিনসহ দলের একাংশকে নিয়ে বেশ কিছুদিন আলাদাভাবে দলীয় কর্মকাণ্ডও পরিচালন‍া করেন। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনের আগে মহিউদ্দিন ও বিএসসি একসাথে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নগর আওয়ামী লীগের মূলধারায় আবার জায়গা করে নিতে পারেননি বিএসসি।

অভিমানে দূরে সরে আছেন কিনা জানতে চাইলে নূরুল ইসলাম বিএসসি বাংলানিউজকে বলেন, কিসের অভিমান, আমার কোন অভিমান নেই। আমার শরীরটা বেশ কিছুদিন ধরে খুব খারাপ যাচ্ছে। প্রায়সময় আমাকে ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। সেজন্য দলীয় কর্মসূচীতে থাকতে পারছিনা।

চট্টগ্রাম আদালতে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের নেতৃত্বদানকারী ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলও রাজনীতিতে সজ্জন হিসেবে পরিচিত। গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের যে কোন কর্মসূচীতে সামনের সারিতে থাকা বাবুলকে ইদানিং আর তেমন সক্রিয়ভাবে দেখা যাচ্ছেনা রাজপথে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, আমি অতীতে যেমন সক্রিয় ছিলাম, এখনও আছি। দলের প্রয়োজনে আমি যে কোন জায়গায় থেকে কাজ করতে রাজি আছি।

দলীয় নেতাদের মতে, ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা খোরশেদ আলম সুজনের বড় প্রভাব আছে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। সংস্কৃতিমনা, তুখোড় বক্তা এবং রাজপথের আন্দোলনকারী হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা আছে নগর আওয়ামী লীগে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সুজনের নিজস্ব একটি বলয়ও আছে।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুজন বন্দর আসন থেকে মনোনয়ন পেলেও পরে তা পাল্টে আরেক প্রার্থীকে দেয়া হয়। এরপরও গত পাঁচ বছর ধরে মাঠে সরব ছিলেন সুজন। সর্বশেষ ১৮ দলের হরতাল-অবরোধ মোকাবেলায় মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে পুরো বন্দর এলাকা চষে বেড়িয়েছেন সুজন। কিন্তু নগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার পর খানিকটা আড়ালে চলে গেছেন তিনিও।

খোরশেদ আলম সুজন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি সবসময় রাজপথের মানুষ। রাজপথই রাজনীতিকদের শেষ আশ্রয়, এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আবার যখন প্রয়োজন হবে রাজপথে নেমে যাব, রাজপথেই দেখা হবে। ’

এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীও তুখোড় বক্তা হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত। নতুন কমিটি ঘোষণার পর রাজনীতির মাঠে নেই রেজাউল করিমও। এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার তার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

দলীয় সূত্রমতে, ডা.আফছারুল আমিন, খোরশেদ আলম সুজন এবং ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল-তিন নেতা গত কমিটিতে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনজনই সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন। আর রেজাউল করিম চৌধুরী মনে করেন, নতুন কমিটিতে জ্যেষ্ঠ্যতা মানা হয়নি।

নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘যেসব নেতা দূরে সরে আছেন, তাদের প্রায় সবার নিজস্ব কর্মী আছে। নেতাদের কারণে কর্মীরাও দূরে আছেন। এটা দলের জন্য ভাল হচ্ছেনা। আমরা চেষ্টা করছি, ভুল বোঝাবুঝি, অভিমানের অবসান ঘটিয়ে তাদের আবারও নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় করতে। ’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।