ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সাতকানিয়া অভিমুখে লংমার্চের ডাক দিলেন মহিউদ্দিন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৪
সাতকানিয়া অভিমুখে লংমার্চের ডাক দিলেন মহিউদ্দিন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়া উপজেলা অভিমুখে আগামী ৩০ জানুয়ারি লংমার্চ কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিচারের দাবিতে সোমবার বিকেলে নগরীর লালদিঘী ময়দানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমন্বয় পরিষদ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে মহিউদ্দিন লংমার্চের ডাক দেন।



সারাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে সম্প্রতি সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। সোমবার সংগঠনের প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিউদ্দিন বলেন, অসাম্প্রদায়িক চট্টগ্রাম গড়ার জন্য লংমার্চের ডাক দিয়েছি। ৩০ জানুয়ারি সকাল ১০টার মধ্যে আপনারা সবাই বাস, ট্রাক নিয়ে মিছিল করে লালদিঘী ময়দানে হাজির হবেন। বিকেল ৩টার মধ্যে আমরা সাতকানিয়ায় পৌঁছে সেখানে সমাবেশ শুরু করব।

জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে মহিউদ্দিন বলেন, সাতকানিয়া-বাঁশখালীতে হিন্দু ভাইদের ঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে। রাস্তার পাশের গাছ কেটে অবরোধ করছে। সাধারণ মানুষের উপর হামলা হচ্ছে। এসব আর সহ্য করব না। ৩০ জানুয়ারি কমপক্ষে এক’শ বাস-ট্রাক নিয়ে আমরা সাতকানিয়ায় যাব, সেখানে সমাবেশ করব।

উল্লেখ্য দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকা সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ‘জামায়াতের ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভি।

সমাবেশে মহিউদ্দিন জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলেন, নদভিকে আমরা ঘুরিয়ে দিয়েছি। নদভি এখন আর আপনাদের নেই। তিনি লালদিঘীতে সমাবেশে এসে বলে গেছেন, সাতকানিয়া একসময় ছোট পাকিস্তান ছিল, নির্বাচনের পর স্বাধীন হয়েছে।

মহিউদ্দিন বলেন, সাতকানিয়ার অনেকে চট্টগ্রাম শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। তারাই টাকা পাঠিয়ে সাতকানিয়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা করছেন, হুমকি দিচ্ছেন। অনেকে বিদেশে টাকা উপার্জন করে সাতকানিয়ায় মানুষের ঘরে আগুন লাগানোর জন্য সেই টাকা ব্যবহার করছেন। আগামীতে সাতকানিয়ায় একটি ঘরে আগুন জ্বললে আমি চট্টগ্রাম শহরে দশটি ব্যবসা বন্ধ করে দেব। আমি বিপদ ঘটিয়ে দেব।

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম ঘরে ঢুকে গেছে। তাদের টাকাপয়সা দিলে আবার বের হয়ে আসবে। এতদিন একটি গোষ্ঠী তাদের টাকাপয়সা দিয়ে বের করেছিল।

তিনি বলেন, বাঙালী কারও কাছে কখনও মাথানত করেনা। কোন সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে চট্টগ্রামবাসী মাথা নত করবে না। চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে আমরা দেবনা।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সংবিধানে সংখ্যালঘু বলে কোন শব্দ নেই। সংখ্যালঘু শব্দটি অসাংবিধানিক। যেসব দুষ্কৃতিকারী, সন্ত্রাসী পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সৃষ্টি করছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে তাদের দ্রুত বিচার করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেন। সেজন্য অনেকে আমার নেত্রীকে নাস্তিক বলেন। আসলে নেত্রী ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ধর্মকর্ম করেন। তিনি সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন করেছেন। সেজন্য জামায়াত নেত্রীকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।

তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের উপর নির্যাতন নিয়ে অনেকে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন। আওয়ামী লীগকে ভুল বুঝবেন না। আপনারা যেমন আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত বন্ধু, আওয়ামী লীগও আপনাদের পরীক্ষিত বন্ধু।

সমাবেশে ছয় দফা প্রস্তাবনা পাঠ করেন আইনজীবী রনি কুমার দে। প্রস্তাবনায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও মঠমন্দির পুন:নির্মাণ, মিডিয়ায় কিংবা বক্তব্য-বিবৃতিতে ক‍াউকে সংখ্যালঘু হিসেবে চিহ্নিত না করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী হিসেবে চিহ্নিত করার দাবি জানানো হয়।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষের সভাপতিত্বে এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধরের সঞ্চালনায় সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইন্দুনন্দন দত্ত, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ পালিত, চসিকের কাউন্সিলরদের পক্ষে জহরলাল হাজারী, ১৪ দলের পক্ষে গণআজাদী লীগের নেতা নজরুল ইসলাম আশরাফী, মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র, নারীনেত্রী নীলু নাগ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।