চট্টগ্রাম: মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর প্রথমবারের মত চট্টগ্রামে এসে দু’মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর প্রথম অনুষ্ঠান ছিল সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভা। সেই সভাতেই ব্যাপক বিশৃঙ্খলায় মেতে উঠা ছাত্রলীগ কর্মীদের সামলাতে তেড়ে যান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে সার্কিট হাউসের ভেতরেই এক ছাত্রলীগ নেতাকে প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাকর্মীরা কুপিয়ে আহত করার পর দু’টি মোটর সাইকেলও আগুন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, মতবিনিময় সভা শেষে মন্ত্রী মহোদয় এবং আওয়ামী লীগ নেতারা বেরিয়ে যাবার পরই কয়েকজন মারামারি শুরু করেছে। আকস্মিকভাবে বিশৃঙ্খলার কারণে এরা কারা আমরা বুঝতেই পারিনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও ছিলেন। সাংবাদিকদের পর মোশাররফ ও জাবেদ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে মোশাররফ হোসেন সার্কিট হাউসে উপস্থিত হবার পরই নগর ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত একদল নেতাকর্মী শ্লোগান দেন। এসময় তারা নগর ছাত্রলীগের কমিটি অবৈধ বলে শ্লোগান দিতে দিতে মতবিনিময় সভায় ঢুকে পড়েন।
এতে কথা বলতে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে ক্ষুব্ধ হন মোশাররফ। তিনি প্রথমে হাত জোড় করে তাদের বিশৃঙ্খলা না করার অনুরোধ করেন। এতেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শান্ত না হলে মোশাররফ ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে যান এবং তাদের দিকে তেড়ে যাবার চেষ্টা করেন। প্রতিমন্ত্রী জাবেদ এসময় তাকে শান্ত করেন। মোশাররফের ধমকে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা সভাস্থল ছেড়ে বাইরে গিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন।
মতবিনিময়ের শুরুতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিশৃঙ্খলার জন্য দু:খ প্রকাশ করে মোশাররফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের ইয়ং কয়েকজন ছেলের মধ্যে কিছু ক্ষোভ আছে। বিষয়টি আসলে নগর ছাত্রলীগের, আওয়ামী লীগের নয়। আর ছাত্রলীগের বিষয় দেখার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আছে। মন্ত্রী হিসেবে তাদের জন্য আমি কিছু করতে পারিনা। ’
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার পর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীও বিশৃঙ্খলার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে পদবঞ্চিতদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সাংবাদিকদের সামনে আমাদের অসম্মান করেছেন। আপনারা কাজটি ভাল করেননি। আপনাদের ক্ষোভ থাকলে আমাদের বলতে পারেন, আমরা বিষয়টি বসে সমাধান করব।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে মোশাররফ ও জাবেদ সাড়ে ৮টার দিকে সার্কিট হাউস ত্যাগ করেন। মহিউদ্দিন বেরিয়ে গাড়িতে উঠার সময় পদবঞ্চিতরা শ্লোগান দিয়ে তার গাড়ি ঘিরে ধরেন। এসময় তিনি গাড়ি থেকে নেমে তাদের ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন। তিনি আবার গাড়িতে উঠে সার্কিট হাউস থেকে রওনা দেয়ার সাথে সাথেই বাইরে ছাত্রলীগের পদপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা হুড়মুড়িয়ে সার্কিট হাউসের ভেতরে ঢুকে পড়েন।
উভয়পক্ষে শুরু হয় সংঘর্ষ। দা, কিরিচ নিয়ে একদল আরেকদলের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা ৪-৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানালেও ঘটনাস্থলে গিয়ে একজনকে গুরুতর জখম অবস্থায় পাওয়া গেছে। তিনি হলেন বাগমনিরাম ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মো.আতিক। তার বাসা নগরীর শহীদনগর এলাকায়। তিনি সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা.আফছারুল আমিনের অনুসারী এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের ওয়াসিম উদ্দিনের গ্রুপের নেতা বলে তার সহকর্মীরা জানিয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের এক গ্রুপ সার্কিট হাউসের ভেতরে পার্কিং করে রাখা অবস্থায় দু’টি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন এবং একটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করেন। এসময় সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষের ভেতরে বেশ কয়েকটি চেয়ারও তারা ভাংচুর করে। সংঘর্ষের সময় আতংকে অনেকেই সার্কিট হাউসের বিভিন্ন কক্ষে অবস্থান নেয়। বিভিন্ন কক্ষের দেয়ালে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখা গেছে।
খবর পেয়ে কোতয়ালী থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ছাত্রলীগের বিবদমান নেতাকর্মীরা সার্কিট হাউস ছেড়ে চলে যান। পরে পুলিশ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার রাকিব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কয়েকটি চেয়ার ভাংচুর হয়েছে। এর বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
কোতয়ালী থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে নিজেরাই নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেব। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৪
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর।