চট্টগ্রাম: নির্বাচন পরবর্তী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখতে না পারলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা।
বৃহস্পতিবার নগরীর চেরাগি মোড়ে চলমান সাম্প্রদায়িক সংহিংসতার বিরুদ্ধে জেগে ওঠো বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও সমাবেশে বিশিষ্টজনরা এ মন্তব্য করেন।
তারা বলেন, আমরা দেখেছি, প্রত্যেক নির্বাচনের পর একটি সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী গোষ্ঠী দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলে পড়ে। মৌলবাদী জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা বিএনপির ছত্রছায়ায় হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে নির্যাতন চালায়।
বক্তারা আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা ক্ষমতায় আছেন, সহিংসতা ঠেকানোর মূল দায়িত্ব আপনাদেরই। যে কোন মূল্যে সহিংসতা ঠেকান, নইলে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে যাবেন।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে কবি আবুল মোমেন বলেন, যারা ইসলামের নামে অন্য ধর্মের মানুষকে আক্রমণ করে তারা ইসলামের শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু, দেশের শত্রু। একাত্তরে যারা দেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল, তাদের সঙ্গে এখনও পাকিস্তানের সম্পর্ক অটুট। কাদের মোল্লার রায়ের পর পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের এদেশীয় দোসর জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ আমাদের সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে। রাজপথের লড়াইয়ে তরুণ সৈনিকেরা হবেন মূল কাণ্ডারি। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের সংগ্রাম আমরা সবাই মিলে অব্যাহত রাখব।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা.মাহফুজুর রহমান বলেন, যারা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে কি ভূমিকা রাখছেন আমরা জানতে চাই। এমপিরা যদি এলাকায় গিয়ে সংখ্যালঘুদের পাশে না দাঁড়ান, তাহলে আমরা তাদের বাড়ি ঘেরাও করব। যে এলাকায় সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হবেন, আমরা সেখানে পুলিশ প্রশাসনের কার্যালয় ঘেরাও করার জন্য আমরা সর্বস্তরের জনতাকে আহ্বান জানাচ্ছি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, মায়ের কোল থেকে ছেলেকে ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে, মা সন্ত্রাসীদের পায়ে ধরে সন্তানকে ভিক্ষা চাচ্ছেন, এ বর্বরতা কোন রাজনীতি হতে পারেনা। এ বর্বরতার কোন ক্ষমা নাই।
তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তিনি জিরো টলারেন্স দেখাবেন। আমরা অবিলম্বে তার ঘোষণার কার্যকারিতা দেখতে চাই। দেশের সংঘ্যালঘু সম্প্রদায় জিরোতে পৌঁছার পর কোন পদক্ষেপ আমরা দেখতে চাইনা।
জেগে ওঠো বাংলাদেশ’র সংগঠক হাসান ফেরদৌসের সভাপতিত্বে এবং সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগের আহ্বায়ক শরীফ চৌহানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নারীনেত্রী নূরজাহান খান, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, মানবাধিকার কর্মী ও কাউন্সিলর এডভোকেট রেহানা কবির রানু। প্রতিবাদী ছড়া পাঠ করেন আলেক্স আলীম।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুনীল ধর, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান, খেলাঘর সংগঠক সালমা জাহান মিলি, সংশপ্তকের সৌরভ বড়ুয়া, জনউদ্যোগের সংগঠক শ্যামল মজুমদার, বিএনপিএস’র এস এম এরশাদুল করিম, যুব মৈত্রীর কায়সার আলম, সাংবাদিক স্বরূপ ভট্টাচার্য, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রীতম দাশ ও রুবেল প্রিন্স প্রমুখ।
সমাবেশে উদীচী, প্রমা, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগ, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটি, জনউদ্যোগ, বিএনপিএস, সংশপ্তক, বর্ণালী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফ্রণ্ট, ছাত্র মৈত্রী, যুব মৈত্রীসহ বিভিন্ন সংগঠন সংহতি জানায়।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল চেরাগি চত্বর থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ঘুরে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৪
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর