ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা

মাহবুব আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৪
সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা ছবি: উজ্জ্বল ধর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ধান চাষে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও বেশি লাভের আশায় সবজি চাষের প্রতি ঝুঁকছেন চট্টগ্রামের চাষীরা। গত দুই বছরে মৌসুম ভেদে এ অঞ্চলে কমপক্ষে তিন হাজার হেক্টর জমিতে সবজির চাষ বেড়েছে।



সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়া, সেচ-সারসহ কৃষি উপকরণের দাম ও দফায় দফায় জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ধান চাষে আগ্রহ কমছে কৃষকদের। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় সবজি চাষের প্রতি-ই আগ্রহী হয়ে উঠছেন তারা।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-১০ সালে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ২৫ হেক্টর, ২০১০-১১ সালে ১৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর, ২০১১-১২ সালে ১৬ হাজার ৫৪০ হেক্টর, ২০১২-১৩ সালে ১৯ হাজার ৩৯১ হেক্টর।

আর ২০১৩-১৪ বছরে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের কথা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে তা ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।    

গ্রীস্মকালীন ২০০৯-১০ সালে সবজি হয়েছে ৬ হাজার ৭৮৪ হেক্টর, ২০১০-১১ সালে সাত হাজার ৩৮৬ হেক্টর, ২০১১-১২ সালে সাত হাজার ৮৬২ হেক্টর এবং ২০১৩-১৪ সালে ৮হাজার ৪৬৯ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করেছেন কৃষকরা।

চট্টগ্রামে ২০১৩-১৪ বছরে আউশের আবাদ হয়েছে ৪৬ হাজার ৪৬৪ হেক্টর জমি, আমনের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমি।

২০১২-১৩ সালে আউশের আবাদ হয়েছে ৪২ হাজার ৮০৮ হেক্টর জমিতে, আমনের আবাদ হয়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমিতে, বোরোর আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে।

এক বছরে চার হাজার ৮৬৭ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ কমেছে, আমনের আবাদ কমেছে সাত হাজার ৮৫১ হেক্টর, বোরোর আবাদ কমেছে ৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। অন্যদিকে প্রতি বছর বাড়ছে সবজি আবাদ।
চলতি বছরের রেকর্ড বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক বলেন,‘এ বছরের মোট হিসেব এখনও শেষ হয়নি। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত তা হালনাগাদ চলবে। সেই ক্ষেত্রে ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি সবজি চাষ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বন্দরনগরীর আশপাশে অবস্থিত এলাকার কৃষকরা সবজি চাষে মনোযোগী হচ্ছেন বেশি। এরমধ্যে এগিয়ে আছে কৃষি জোনের ডবলমুরিং এবং পাঁচলাইশ থানা।

চট্টগ্রাম কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খসরু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন,‘ডবলমুরিং মেট্রো এলাকায় ধানের থেকে সবজি চাষেই কৃষকরা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ’

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন,‘নগরীর বিভিন্ন আবর্জনা দিয়ে জৈবিক সার তৈরি করে নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। তাছাড়া সবজি চাষে কম খরচে বেশি লাভও তাদের আকৃষ্টের অন্যতম কারণ। ’

এছাড়া চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, ফটিকছড়ি, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই উপজেলার কৃষকরা ধানের চেয়ে সবজি চাষের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। এরমধ্যে দেশীয় সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফলনশীল সবজিও রয়েছে।

সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আইনুল কামাল বাংলানিউজকে বলেন,‘ধান চাষ করলে সময়মত সার বিষ পাওয়া যায়না। তাছাড়া খরচও বেশি হয়। আর একই জমিতে ধান দুই সিজনে (মৌসুম) চাষ করলেও সবজি প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়। এলাকার মানুষ এখন সেদিকেই ঝুঁকছে বেশি। ’

একই কথা হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক গোলাম হোসেনের। বললেন,‘কষ্ট করে চাষাবাদ করে ন্যায্য মূল্য না পেলে চাষ করবো কেনো। সরকারের বিভিন্ন ভূর্তুকির কথা বলা হলেও এ পর্যন্ত কিছুই পাইনি আমরা। ’

এ প্রসঙ্গে কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. খসরু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন,‘ধান চাষ কমে আসছে বিষয়টা সত্য নয়। ভাত-চালের চাহিদা রয়েছেই। তবে গ্রামাঞ্চলসহ শহরতলীর এলাকার কৃষক যখন যেটাতে মূল্য বেশি পান সেটাই চাষ করেন। ’

জমিতে খরচের ব্যাপারে তিনি বলেন,‘স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সুষম সার ব্যবহার করলে এবং মাটি পরীক্ষা করিয়ে নিলে জমিতে আবাদ খরচ কমে আসবে। ’

এদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে প্রতিবছরই এক শতাংশ হারে ফসলী জমি কমে আসছে। মানুষ বাড়ার সাথে খাদ্যের চাহিদা যেমন বাড়ছে তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে ঘরবাড়ির সংখ্যাও। অন্যদিকে বন্দরনগরীতে প্রতিবছরই শিল্প-কারখানা বাড়ায় অনেক ফসলী জমি কমে যাচ্ছে।  

মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া এলাকার কৃষক আবদুল রহিম বলেন,‘প্রতিবছরই কলকারখানা এলাকার আবাদি জমির বিরাট অংশ  দখল হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কলকারখার কারণে এলাকার জমি উর্বরতাও হারাচ্ছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।