ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘নির্বাচনে’র আগুনে চট্টগ্রামে পুড়েছে ৭৬ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান

মাহবুব আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৪
‘নির্বাচনে’র আগুনে চট্টগ্রামে পুড়েছে ৭৬ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিভাগের ৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্নি-সংযোগ করেছে নির্বাচন বিরোধীরা। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় একটি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে তারা।



শুধু নির্বাচনের দিনই নয়। নির্বাচনের পরও এমন সহিংস ও নির্মম কাণ্ড ঘটিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির।
আর এতে বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ দরজা-জানালা পুড়ে যাওয়ায় এসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।

একই সঙ্গে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যপুস্তক পুড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় ও জেলা শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে পাঁচটি জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে জামায়াত-শিবিরসহ বিএনপির কর্মীরা। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ঠেকাতে তারা এসব বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ও ভবনে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। অনেক বিদ্যালয়ে মলমূত্র ফেলে যায় তারা।

সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগুনে পুড়েছে লক্ষ্মীপুরে। লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ৩১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে নির্বাচন বিরোধীরা।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইটি, কুমিল্লায় ১৭টি, চট্টগ্রামে ১৮টি এবং ফেনীতে ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন,‘নির্বাচনের সময় নাশকতার আগুনে এ বিভাগের পাঁচটি জেলার ৭৫টি বিদ্যালয় পুড়ে গেছে। ’

কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে?-জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘প্রাথমিক ভাবে স্কুলের সংখ্যাগুলোই সংগ্রহ করা হয়েছে। কী কী পুড়েছে আর কত পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ণয় করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ’

উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, অন্যান্য জেলায় বইপত্র ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার একটি স্কুলে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক পুড়ে গেছে। কিছু কাগজপত্র ও বিদ্যালয়ের চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে সোমবার রাতেও একটি স্কুলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলায় ১৮টি প্রাথমিক এবং একটি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সাতকানিয়ার ঢেমশা আলমগীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছদাহা আদর্শ মহিলা মাদ্রাসা এবং আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এছাড়া ওই এলাকাসহ সীতাকুণ্ডের  বিভিন্ন বিদ্যালয়ে মলমূত্রও ফেলে রাখে তারা।

চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে আরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন,‘চট্টগ্রাম জেলায় সাতকানিয়ার একটি বিদ্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কক্ষ, দরজা-জানালাসহ কিছু কাগজপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ’

এদিকে নতুন পাঠ্যপুস্তকসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র পুড়ে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরপরও তারা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমান বিল্লাহ বলেন,‘লক্ষ্মীপুরের একটি বিদ্যালয়ের নতুন পাঠ্যপুস্তক পুড়ে গেছে। তবে আশপাশের বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করে তা দেয়া হবে। ’

এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা-কার্যক্রমও চালিয়ে নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

সাতকানিয়ায় পুড়ে যাওয়া বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন,‘বিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে গেছে। সেখানে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন তথ্যও লিপিবদ্ধ ছিল। এজন্য আমাদের বেশ ঝামেলায় পড়তে হবে। ’

প্রসঙ্গত, বিএনপিসহ ১৮ জোটের প্রতিহতে হরতাল-অবরোধের মধ্যেও দেশের ১৪৭টি আসনে গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এই ভোট ঠেকাতে বিএনপিসহ জামায়াত-শিবির দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৪
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।