ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জাতির পিতার কবর স্থানান্তর চান মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল মামা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩
জাতির পিতার কবর স্থানান্তর চান মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল মামা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন একাত্তরের মামা বাহিনীর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক মামা।

তিনি বলেছেন,‘সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টার স্মৃতি ও আদর্শকে আড়াল করতেই ষড়যন্ত্র করে জিয়াউর রহমান ও মোস্তাক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে টুঙ্গিপাড়ায় আড়ালে পুঁতে রেখেছে।

একাত্তরে ৭ মার্চ যেখানে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন সেখানে তাকে সমাহিত করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় তার স্মৃতি মুছে যাবে।


শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবতাবাদী সংগঠন শান্তির অন্বেষায়’র উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ দাবি জানান।

দেশব্যাপী সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানুষহত্যা এবং ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিপদগামী করার প্রতিবাদে বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক মামা বলেন,‘একাত্তরে যারা দেশের মানুষের উপর নানাভাবে অত্যাচার করেছে তাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই। দীর্ঘ ৪২ বছর পর হলেও একাত্তরের ঘাতকদের আমরা আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক মানের আদালতে কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর ও তার দোসরদের ফাঁসির রায় হয়েছে। ’

কাদের মোল্লার মামলার সাক্ষ্য প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন,‘সুইডেন থেকে একাত্তরে মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে দেশে এসেছি। কিন্তু সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের অদূরদর্শিতার কারণে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। কসাই কাদেরের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। প্রত্যাশা করি অবিলম্বে বাকিদেরও হবে। ’

শহীদুল হক মামা বলেন,‘‘কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার ‘সময়’ ঘোষণা করা হলে তার আইনজীবীরা অত্যন্ত দূরদর্শিতার সঙ্গে সুপ্রীম কোর্ট কারাগারে দৌড়াদৌড়ি করে চেম্বার জজের মাধ্যমে তা স্থগিতের আদেশ নিয়ে আসেন, যা সরকারের আইনজীবীরা জানতেনই না। আর বিষয়টি অবহিত হয়ে কাদের মোল্লার স্ত্রী কারাগার ফটকে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের এই মিথ্যা অহম ঠেকেনি। ’’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দিতে তাকে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন,‘পাকিস্থানি হানাদাররা মিরপুরে হত্যা খুন রাহাজানি করেছিল। সেই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দিতে আমাকে এক মিলিয়ন ডলার অর্থের লোভ দেখানো হয়েছে। কিন্তু এই লোভ আমাকে পিছপা করতে পারেনি। ’

বিদেশীদের চাপের মধ্যেও যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান শহীদুল হক মামা।

বিএনপির রোববারের ঢাকা অভিযাত্রাকে ‘মার্চ ফর ডেস্ট্রয় ডেমোক্রেসি’ বলে আখ্যায়িত করেন একাত্তরের এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন,‘বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন, এখন আবার তিনিই তাদেরকে পতাকা নিয়ে ঢাকায় আসতে বলেছেন, আসলে তা মার্চ ফর ডেমোক্রেসি নয় মার্চ ফর ডেস্ট্রয় ডেমোক্রেসি। ’

তিনি বলেন,‘খালেদা জিয়া হয়তো স্বপ্ন দেখেন এদেশকে পাকিস্তান বানানোর। এজন্য তিনি জামায়াত-শিবিরের বিপক্ষে কোন কথাই বলছেন না। ’

জামায়াত তাদের পেছনে কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করছে বলেও মন্তব্য করেন মামা।

দেশব্যাপী যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব প্রতিরোধ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান মামা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদ জামাতের খতিব আল্লামা ফরীদ উদদীন মাসউদ বলেন,‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। আল্লাহ এবং তার রাসুল শান্তির দিকে আহ্বান করেছেন। কিন্তু মওদুদীর সৃষ্টি জামায়াত-শিবির এই শান্তিকে সন্ত্রাসে পরিণত করেছে। তাদের দর্শনই হচ্ছে সন্ত্রাসের। ইসলামের সাথে এদের কোন সর্ম্পক নেই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইফি।

এছাড়া অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, উদীচী চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. চন্দন দাশ, লেখক ও সাংবাদিক শওকত বাঙালি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।