ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বছরজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, মৃত্যুর মিছিলে ৩৮

রমেন দাশগুপ্ত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩
বছরজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, মৃত্যুর মিছিলে ৩৮

চট্টগ্রাম: হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচী কিংবা মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা, হেফাজতের কর্মসূচী, ছাত্রদল-ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অসন্তোষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম প্রায় পার করে দিয়েছে আরও একটি বছর।

রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হয়ে গত এক বছরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ৩৮ জন।

এদের মধ্যে পুলিশ যেমন আছেন, রাজনৈতিক কর্মীও আছেন। মৃত্যুর মিছিলে আছেন যানবাহন-পরিবহনের সাধারণ শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও।


জামায়াত-শিবিরের নাশকতার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ড বারবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর নাশকতাকারীদের ছোঁড়া পেট্রল বোমায় জীবন্ত দগ্ধ হয়ে সাতটি গরু মারা যায় সীতাকুণ্ডে। এ ঘটনা নাড়া দেয় সাধারণ মানুষের বিবেক।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, নিরীহ মানুষকে গায়ে পেট্রল দিয়ে মারা হচ্ছে। রাস্তায় নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। গাড়ির ভেতরে মানুষ রেখে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। রাজনীতির নামে এসব নৃশংসতা আমরা অতীতে দেখিনি। এ ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা সামাল দিতেই আমাদের পুরো বছর বেশি মনযোগী থাকতে হয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার দিন জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা থামাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পাল্টাপাল্টি এসব ঘটনায় নগরীর অলংকার মোড় ও দেওয়ানহাট এলাকায় মারা গেছে ৪ জন। একই রায়ের জেরে লোহাগাড়ায় গ্রাম পুলিশের এক সদস্য নিহত হন।

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় লোহাগাড়া ও বাঁশখালীতে প্রাণ হারায় এক পুলিশ সদস্যসহ তিনজন। বাঁশখালীতে আদালত ভবন, উপজেলা কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন সরকারী অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।

সাঈদীর রায়ের জেরে ২ মার্চ সাতকানিয়ায় সহিংসতায় প্রাণ হারায় ৩ জন।

জামায়াতের ডাকা হরতালে ২৫ মার্চ নগরীর বাকলিয়া এলাকায় মুসা নামের একজন ইজিবাইক চালককে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুনে ঝলসে দেয়া হয়। পরে মুসা মারা যান।

১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর ইউনিয়নের কাজিরহাট এলাকায় আওয়ামী লীগের হরতালবিরোধী মিছিলে হামলা চালায় জামায়াত-হেফাজত ও বিএনপি। এতে প্রাণ হারায় তিনজন। ৬ মে হাটহাজারীতে হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত হন সেনাসদস্যসহ ৬ জন।

২৮ অক্টোবর সাতকানিয়ায় পিকেটারদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে ট্রাক উল্টে মো.ওয়াসিম নামে একজন নিহত হন।

বিরোধীদলের অবরোধের ঘোষণা আসার পর গত ১০ নভেম্বর হাটহাজারী উপজেলার মাদার্শায় পিকেটারদের হামলায় নির্মল জলদাস নামে একজন নিহত হন।

১১ নভেম্বর লোহাগাড়া উপজেলায় মাহবুবুর রহমান বাপ্পি নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ছাত্রলীগ এ ঘটনার জন্য শিবিরকে দায়ী করে।

২৩ নভেম্বর সীতাকুণ্ডে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আমিনুল ইসলামের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ভোরে মিরসরাইয়ে জসীম উদ্দিন নামে এক জামায়াত কর্মীকে খুন করা হয়। জামায়াত আমিনুল খুনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এবং জসীমকে খুনের জন্য ছাত্রলীগ দায়ী করেছে।

২৭ নভেম্বর সাতকানিয়ার কেরাণিহাট এলাকায় পিকেটারদের ছোঁড়া ককটেলে মায়ের ‍সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মো.শাহেদ নামে এক যুবক। একইদিন পটিয়ায় পিকেটারদের হামল‍ায় এক টেম্পুচালক নিহত হন।

৩০ নভেম্বর সাতকানিয়া উপজেলার হাসমতের দোকান এলাকায় পিকেটারদের ধাওয়ায় দ্রুতগামী একটি ট্রাকের চাপায় রং মিস্ত্রি নিমাই নাথসহ দু’জন নিহত হয়।

গত ১ ডিসেম্বর পটিয়ায় মুজাফফরাবাদে যুবদলের এক নেতাকে কুপিয়ে খুন করা হয়। ২ ডিসেম্বর রাঙ্গুনিয়ায় অবরোধকারীরা পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে এক সিএনজি অটোরিক্সাচালক দগ্ধ হয়ে মারা যান।

এছাড়া পুরো বছরজুড়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়িতে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা লেগেই ছিল। বছরের শেষদিকে অবরোধের সময় নগরীর প্রবেশপথ সিটি গেইট, একে খান মোড়, অলংকার মোড়, ইস্পাহানি গেইট এলাকায় রেললাইনসহ বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এস এম তানভির আরাফাত বাংলানিউজকে বলেন, অবরোধকারীরা নাশকতা অব্যাহত রাখলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত। প্রবেশপথ দিয়ে মহাসড়কে গাড়ি আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কেউ বড় ধরনের কোন সহিংসতা ঘটাতে পারছেনা।

এদিকে গত আগস্টে নগর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পদবঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকদিন ধরে চলে মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন সহিংস প্রতিবাদ। এমনকি পদবঞ্চিতরা নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা.শাহাদাৎ হোসেনের গাড়িতেও আগুন দেয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন ছাত্রদলের ৬ কর্মী।

আর বছরের শেষদিকে এসে নগর কমিটি ঘোষণ‍াকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের পথ অনুসরণ করে ছাত্রলীগও। কমিটি ঘোষণার পর রাতের আঁধারে নগরীর জিইসি মোড়ে গাড়ি ভাংচুরের উৎসবে মাতে ছাত্রলীগের একাংশ। তবে ছাত্রদল-ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের সেই অসন্তোষ, বিক্ষোভ এখন অনেকটাই ঝিমিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮,২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।