চট্টগ্রাম: শনিবার ভোরে গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী থেকে শীতের তীব্রতা সহ্য করে নগরীর বিআরটিসি বাস কাউন্টারে এসেছেন পরিবহন ব্যবসায়ী মো. নাছির উদ্দিন। কিন্তু এসে দেখেন কোন বাসই ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছাড়ছে না।
এরপরও ব্যবসায়িক কাজে তাকে ঢাকায় যেতেই হবে। তাই নিরুপায় হয়ে দুপুর পর্যন্ত বাস কাউন্টার আর রেলস্টেশনে ছুটোছুটি করছিলেন তিনি।
শুধু নাছির উদ্দিনই নয়, বিরোধী দলের ঢাকা অভিযাত্রা কর্মসূচিকে সামনে রেখে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। কেউ বা মাঝ পথে আটকে গন্তব্যে পৌঁছার প্রহর গুণছেন।
হতাশার সুরে নাছির উদ্দিন বললেন,‘ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় যাওয়া জরুরি। কিন্তু কোন যানবাহন না পেয়ে শেষে নিরুপায় হয়ে ফের বাড়ির পথেই হাটবো। ’
নাছিরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আকাশ মাহমুদ তুষার জানালেন,ইউনিভার্সিটিতে বিভাগের একটি প্রোগ্রাম ছিল তাই শনিবার সকালে ঢাকাগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনের টিকেট করেছিলেন গত বুধবার।
কিন্তু শনিবার স্টেশনে গিয়ে জানতে পারেন, দুপুর একটা নাগাদ ওই ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছাতে পারে। তাই বাধ্য হয়ে ট্রেনের টিকেট ফেরত দিয়ে ছুটলেন বাস কাউন্টারের দিকে। কিন্তু বিধিবাম চট্টগ্রাম থেকে কোন বাসই ছাড়ছে না।
নগরীর বিভিন্ন বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তেমন ব্যস্ততা নেই। তবে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে না পেরে অনেক যাত্রীকেই কাউন্টারগুলোতে বসে থাকতে দেখা গেছে। অনেকেই আবার গন্তব্যে পৌঁছার বিকল্প পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন, কেউ ফিরে যাচ্ছেন বাসায়।
কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, অগ্রিম বিক্রি করা টিকেটগুলো শুক্রবার যাত্রীরা ফেরত দিয়ে গেছেন। মালিক সমিতির নির্দেশে শনিবার বাসের টিকেট বিক্রি বন্ধ রয়েছে।
সোহাগ এন্টারপ্রাইজের বিআরটিসি কাউন্টারের ম্যানেজার এম এ রানা বাংলানিউজকে বলেন,‘শনিবার কোন বাসই চট্টগ্রাম থেকে ছাড়া হচ্ছে না। গত রাতে (শুক্রবার) চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা গাড়িগুলোও ঢাকা ও কুমিল্লায় আটকা পড়ে আছে। ’
সৌদিয়া কাউন্টারের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন,‘ মালিক পক্ষ থেকে টিকেট বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে। ’
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘বুঝেনই তো, আমরা আর কি বলব?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাউন্টারের আরেক কর্মকর্তা বলেন,‘সারা জীবন শুনলাম বিরোধী দল হরতাল অবরোধ দেয়, আর এখন সরকারি দলের কথাও শুনলাম। কই আছি আমরা?’
এছাড়া নগরীর বিআরটিসি ও দামপাড়ার এস আলম কাউন্টার, কেয়া পরিবহন, টিআর ট্রাভেলস সহ বিভিন্ন কাউন্টারের কর্মকর্তারা শনিবার বাস না ছাড়ার কথা জানিয়েছেন।
চালু আছে আন্ত:জেলা সার্ভিস:
দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় যানবাহন চলাচল করছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
নগরীর কদমতলী আন্ত:জেলা বাসস্ট্যাণ্ডে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাস ছেড়ে গেছে।
ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দশটি গাড়ি নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাঁধন পরিবহনের ম্যানেজার কাজী মস্তুফা।
তিনি বলেন,‘নোয়াখালী হয়ে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে আমাদের বিভিন্ন গাড়ি ছেড়ে গেছে। মহাসড়কে সেনা ও পুলিশের টহল থাকায় কোন সমস্যা হচ্ছে না। ’
অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া আল্লারদান পরিবহনের কর্তকর্তা মো. সুমন জানান, সকাল থেকেই তাদের গাড়ি চলাচল করছে।
তিনি বলেন,‘গাড়ি ছাড়ছে। তবে অনেকেই পুলিশ রিক্যুইজিশনের কারণে বাস ছাড়তে চায় না। কেননা নোয়াখালী ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় গেলে গাড়ি রিক্যুইজিশন করে পুলিশ নিয়ে যায়। ’
এদিকে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন নাশকতার আশঙ্কার মধ্যে গাড়ি চলাচলের দোহাই দিয়ে তাদের কাছ থেকে অিতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জগামী যাত্রী হান্নান সরকার বলেন,‘অন্যসময় ভাড়া দেড়শ’ টাকা হলেও এখন ৩০০টাকার কম মানতে চাইছে না। ’
বাড়তি ভাড়া দাবির অভিযোগ নোয়াখালীর হাতিয়াগামী সাইদুল এবং শফিউলেরও।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জগামী স্কার লাইনের কর্মচারী আওলাদ হোসেন বলেন,‘ভাই বুঝেন তো! রিস্ক নিয়া রাস্তায় নামি, কিছু না পাইলে কি চলে? সবদিন তোর আর চাই না। ’
এছাড়াও ফেনী, লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, ছাগলনাইয়া রুটেও বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে ২৯ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে ‘গণতন্ত্র রক্ষা’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর।