ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিএনপির ভোট লাঙ্গলে

ফটো: উজ্জ্বল ধর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩
বিএনপির ভোট লাঙ্গলে

গুপ্তছড়া ঘাট (সন্দ্বীপ) থেকে: গোটা চল্লিশেক মোটরবাইক হুট করে উঠে এলো গুপ্তছড়া ঘাটের ইটবিছানো প্লাটফর্মে। সব ক’টার হেড লাইটের সামনে লাঙ্গলমার্কার পোস্টার।

পেছনে মিছিলকারীদের হাতে কাঠের ছোট প্রতীকী লাঙ্গলও দেখা গেলো।

দ্বীপের আরজু পলাশ ফুল বিতানের কর্ণধার ও ভিডিওগ্রাফার আব্দুল হালিম (৩০) কাঁধে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়।
ভাড়া এসেছেন তিন হাজার টাকায়।

হাসিমুখে বললেন, নির্বাচনী আমেজ এখান থেকেই শুরু।

জানা গেলো, প্রার্থী আসছেন। তার নাম এমএ ছালাম। তিনি আসবেন চট্টগ্রাম থেকে। রিজার্ভ স্পিডবোটে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে এই দ্বীপ উপজেলায় আসবেন তিনি।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে জাতীয় পার্টির এই প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নুরুল আক্তার। তার প্রতীক মশাল।

কোনো হেভীওয়েট প্রার্থী নেই। গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মোস্তফা কামাল পাশা জিতেছিলেন এখানে। এবার বিএনপি নির্বাচনে নেই। আর নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী মাহফুজুর রহমান মিতা নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েছেন ঋণখেলাপি হওয়ায়। এবার এ আসনে তাই সাকুল্যে প্রার্থী দু’জনই।



এদেরই একজন ছালামের পক্ষে এই মোটরসাইকেল মিছিল নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে ছিলো গুপ্তছড়া ঘাটের প্লাটফরমে।

পেছনে মূল সন্দ্বীপ। ডানে-বাঁয়ে উপকূলীয় বেষ্টনীর আওতায় রোপিত কেওড়াবনে বেশি দূর দৃষ্টি চলে না।

নির্বাচনের খবর কি জানতে চাইলে সোহেল ইসলাম(২০) নামে মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক বললেন, বিএনপি নির্বাচনে নাই। আমরা এখন লাঙ্গল মার্কা।

তাহলে আপনি কি বিএনপি করেন?

কোনো লুকোছাপার ধার না ধেরে এবারই প্রথম ভোটার হওয়া সোহেলের অকপট জবাব, বিএনপি সাপোর্ট করি। কিন্তু ‌আমার দল নির্বাচনে নাই। ভোট নষ্ট করে লাভ কি? আমার প্রার্থী এমএ সালাম। তিনি ৯০ ভাগ ভোট পাবেন।

তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ী মোবায়েদুল ইসলামও।

এবার ছালামের ছেলে এগিয়ে এসে বলেন, মশাল মার্কারে কেউ চেনে না। মুরুব্বিরা বলেন, গত ২৫ বছরে তারে কেউ এলাকায় দেখে নি।  

সন্দ্বীপ উপজেলা যুব সংহতির সভাপতি ঠিকাদার এমএ জালাল (২৬) বলেন, আমাদের প্রার্থী  বিশিষ্ট সমাজসেবক, মেহনতি মানুষের বন্ধু।

তিনি বলেন, এখানে লাঙ্গল মার্কা বিপুল ভোটে জিতবে। তিনি সন্দ্বীপের ত্যাগী নেতা, ২৮ বছর রাজনীতি করেছেন। ত্রাণ বিতরণ করেছেন। গরীবের বন্ধু।

জালাল এ-ও বলেন, বিএনপি ভোটকেন্দ্রে এলে লাঙ্গলে ভোট দেবে। মশালরে কেউ চেনে না।

একই মত দেন বর্ষীয়ান আবুল কাসেম(৬০)। অবসরপ্রাপ্ত এই চাকুরে বলেন, ছালামরে সবাই নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নিছে। বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ সবাই এখানে লাঙ্গলের ফলায় জমি চষবে।

নির্বাচন কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইয়ুব ‍খান, জিন্নাহ’র আমলের ইলেকশন দেখছি। এরপর বাংলাদেশ হলো।

ফোড়ন কেটে আবুল কাসেমের কথা থামিয়ে দেন বেবিট্যাক্সিচালক আলাউদ্দিন(৩৬)।

তাগাদা দিয়ে বলেন, এবারের নির্বাচনের কথা কন কাকা।

‌আবুল কাসেম বলেন, এ নির্বাচন তো সরকারই আগলায়া রাখছে। ১৫৪ জন আনকনটেসটেড পাস। বাকিরাও হবে। সরকারই সব করবে। প্রচার কাজে ডিস্টার্ব নাই এবার।

প্রার্থীর জন্য যারা অপেক্ষা করছেন তারা ক্লান্ত। মোটরসাইকেল ছেড়ে এদিক-ওদিক ঘুরছেন। পেছনে গোটা তিনেক চায়ের দোকান দেখা গেলেও কোনো কর্মীকে কোনো দোকানে বসতে দেখা গেলো না।

এদিকে প্রার্থী কখন আসবেন জানা যাচ্ছে না। প্রার্থী কতো দূরে জানতে চাইলে তার ছেলে বলছেন, এই তো এখনই স্পিডবোডে উঠবেন। রিজার্ভ বোট। তারপর ২০ মিনিট।

ঘণ্টা খানেক ধরে একই গান গাইছেন প্রার্থীর ছেলে। কিন্তু প্রার্থী আর আসছেন না। ওদিকে কুমিরার ঘাটের উদ্দেশ্যে সন্দ্বীপ থেকে শেষ স্পিডবোটটি ছেড়ে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। শেষতক আর প্রার্থীর অভ্যর্থনাটা দেখা হলো না।

সাম্পানের ভাঁজে জীবনযুদ্ধ

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।