ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিজয়ের পূর্ণতা নিয়ে শহীদ বেদীতে হাজারো মানুষ

মাহবুব আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৩
বিজয়ের পূর্ণতা নিয়ে শহীদ বেদীতে হাজারো মানুষ ছবি: সোহেল সরওয়ার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: স্বাধীনতার ৪২তম বিজয় দিবস বাঙালি জাতির জীবনে আলাদা তাৎপর্য আর আবহ নিয়ে এসেছে যুদ্ধাপধারী কাদের মোল্লার ফাঁসি। অন্যান্য বছর বিজয় দিবসে শহীদ মিনারে আগতদের চোখে মুখে একটা অপূর্ণতা আর চাপা ক্ষোভ থাকলেও এবার কিছুটা হালকা এবং উৎফুল্ল দেখা গেছে তাদের।

তাই হানাদারদের বিরুদ্ধে নয় মাস মরণপন যুদ্ধে বিজয়ের এইদিনে শ্রদ্ধাভরে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে বেশ আনন্দিত আর উৎফুল্ল তারা। সোমবার প্রথম প্রহরে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠিকতা শুরু হলেও সকালে চট্টগ্রাম শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নামে।

 হাতে ফুলের অর্ঘ আর গায়ে লাল-সবুজের কাপড় চাপিয়ে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে চলছেন,  তাদের অর্ঘ আর শ্রদ্ধার তোরায় ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে শহীদ বেদী।

বৃদ্ধ,যুবা-কিশোর-গৃহিণী থেকে শুরু করে বাদ নেই সদ্য মুখে বুলি ফোটানো ছোট শিশুটিও। শ্রদ্ধা জানাতে এসে বেদীতে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সন্তানকে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিচ্ছেন মা-বাবারা।

মো. নূরুজ্জামান, পেশায় ব্যাংকার। তিনি তার চার বছরের শিশু শাহরিয়ার জামানকে নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসেছেন।

জানালেন,‘মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তবে যোদ্ধা বাবার কাছে তার অনেক অপারেশনের লোমহষর্ক গল্প শুনেছি। সেই থেকে বুকে লালন করেছি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এক আলাদা আবেগ। আর সেই আবেগ থেকে আমার সন্তানও যেন বাবার আদর্শে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। সেজন্য শৈশব থেকেই তাকে শিক্ষা দিচ্ছি যেন মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান আর দেশকে ভালবাসতে শেখে। ’

আক্ষেপ করে তিনি বলেন,‘‘বাবার স্বাধীন করা এই দেশে স্বাধীনতা বিরোধীরা দাপিয়ে চলেছে। আর তিনি তা মেনে নিতে পারেন নি। অবশেষে বাবা ‘আংশিক’ বিজয়ের স্বাদ নিয়ে চলে গেছেন। কিন্তু কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়ায় মনে হচ্ছে আমরা পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের স্বাদ পেতে যাচ্ছি। বাকিদের ফাঁসি হলে বিজয় পূর্ণাঙ্গ হবে। বলতে পারবো আমরা জাতির কুলাঙ্গারদের ক্ষমা করেনি। ’’

তার সঙ্গে যোগ করে গৃহিণী মৃন্ময়ী সেন বলেন,‘আমরা শহীদ মিনারে সন্তানদের নিয়ে এসে রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আরো প্রত্যয়ী হচ্ছি। ’

এবারের বিজয় দিবসের কোন আলাদা মাহাত্ম্য আছে কিনা জানতে চাইলে এই মুক্তিযোদ্ধার কন্যা বলেন,‘অবশ্যই! অন্যান্য বছর চাপা ক্ষোভ ছিল যে যুদ্ধাপরাধীরা স্বাধীন দেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, কিন্তু ৪২ বছর পরে তাদের বিচার করতে পেরে মনে হচ্ছে সেই দায়ভার কিছুটা কমেছে। আমরা একজনের হলেও বিচার করতে পেরেছি, তাতে স্বস্তি লাগছে। ’

তার মতো আনন্দিত ছিলেন কলেজ শিক্ষক সেলিম আহমেদও। বললেন,‘রাজাকারদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা কল্পনাই করতে পারিনি, কিন্তু তা দেখতে হয়েছে। এবার ক্ষোভ কিছুটা কমেছে যে একজনের হলেও বিচার হয়েছে। বাকিদেরও শেষ করতে হবে। ’

‘এই বাংলাদেশ হবে ত্রিশ লাখ শহীদের, কোন রাজাকারের নয়’—বলেন তিনি।

এদিকে মাথায় লাল-সবুজের প্লাস্টিকের ব্যাণ্ড ও দুই হাতে জাতীয় পতাকা এবং ফুল নিয়ে শহীদ বেদীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে হাজারো শিশু-কিশোর। তার মধ্যে একজন নাঈম আহমেদ (৬)। ১৬ ডিসেম্বর ‘কী’ এবং ‘কেন’ না জানলেও মামার সঙ্গে শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসেছে সে।

আজ কী? জানতে চাইলে সে বলে,‘বিজয় দিবস। ’ তবে এর থেকে বেশি কিছুই জানাতে পারেনি সে। তার মত হাজারো শিশু ছুটে এসেছে শহীদ মিনারে, কেউ ফুল দিতে কেউ বা গালে উল্কি আঁকাতে।

ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে শহীদ বেদী:

এদিকে ভোর থেকে শহীদ মিনারে ছুটে আসেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি শ্রেণি-পেশার মানুষ। শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় একাত্তরের বীর শহীদদের স্মরণ করেন তারা। একই সঙ্গে রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সকালে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ,গণজাগরণ মঞ্চ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, জেলা আইনজীবী সমিতি, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, দক্ষিণ জেলা শ্রমিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, সিপিবি, বাসদ, বাস্তুহারা লীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, শ্রমিক ফ্রন্ট, সনাক-টিআইবি, জাতীয় মহিলা সংস্থা, গণফোরাম, চট্টগ্রাম একাডেমি, সম্মিলিত আবৃত্তি জোট, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, নিষ্পাপ অটিজম স্কুল, প্রজন্ম ’৭১, বিপ্লবী ওর্য়াকাস পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, মাওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ শ্রমিক পরিবহন ফেডারেশন, এলডিপি উত্তর জেলা, বাউবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কেন্দ্র, ক্ষুদিরাম পাঠগার, চট্টগ্রাম গ্রুপ থিয়েটার, রোটারি ক্লাব অব চিটাগংসহ বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফুল দেয়া হয়।

এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।

এছাড়া নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে বিজয় মিছিল বের করা হয়।

অন্যদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছে নগর বিএনপি। এরমধ্যে নগরীর নূর আহমদ সড়কে দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে রয়েছে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে নাসিমন ভবন থেকে একটি বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি লাভ লেইন, এনায়েত বাজার হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেনসহ বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র সূত্রে জানা গেছে, বিজয় দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারসহ এর আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বসানো হয়েছে সিসি ক্যামারাও।

বিজয়ের, কলংকমুক্তির উল্লাস শহীদ মিনারে

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩

সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।