চট্টগ্রাম: একাত্তরের কসাই হিসেবে পরিচিত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় কলংকমুক্ত হয়েছে দেশ। সেই কলংকমুক্তির উল্লাস দেখা গেছে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে রোববার রাতে শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছে। কারও হাতে ব্যানার, কারও হাতে প্ল্যাকার্ড, আবার কেউ নিয়েছেন স্বাধীন বাংলার লাল সবুজ পতাকা, সবাই যেন মিলেছেন এক পথে, শহীদ মিনারে।
যেন সত্যিকারের বিজয়ের স্বাদ পেয়ে সবাই ছুটে গেছেন শহীদ মিনারে।
বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ০১ মিনিটে নগর পুলিশের একটি চৌকস দলের সশস্ত্র অভিবাদন প্রদানের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয় বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতে চট্টগ্রামের মেয়র এম মনজুর আলম শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে ফুল দেন। একই সময় জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভাপতি ও সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদলের নেতৃত্বে ১৪ দল ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ড কাউন্সিলের একটি দলও শহীদ মিনারে ফুল দেয়।
চট্টগ্রামের সাংসদ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, সিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নওশের আলী খান, জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার, এপিবিএন, রেলওয়ে পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড, বন বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুস্পস্তবক দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এরপর শহীদ মিনার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে মানুষের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার নামে।
একে একে শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা।
এছাড়া শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সোলায়মান আলম শেঠের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, নগর যুবলীগ, নগর ছাত্রলীগ, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহানগর শ্রমিক লীগ, নগর ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা, জেলা আইনজীবী সমিতি, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, হকার্স লীগ, সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদসহ শতাধিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
পুস্পস্তবক অর্পণের পুরো সময় শহীদ মিনারে আসা বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন শ্লোগানে শ্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে রাখে। এসময় কাদের গেছে যে পথে, নিজামি যাবে সেই পথে, সাঈদীর ফাঁসি হবে, পাকিস্তানে কবর হবেসহ বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে মানুষকে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এদিকে বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে শহীদ মিনারকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়।
কোতয়ালী থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই উৎপল কান্তি বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, শহীদ মিনারকে ঘিরে আটটি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পুুলিশের পাশাপাশি শহীদ মিনারে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১২০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬,২০১৩