চট্টগ্রাম: ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশনের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের প্রায় ১ বছর ৭ মাস পার হলেও স্টেশনে যাত্রীসেবার অনেক সুবিধাই চালু হয়নি।
জানা যায়, ছয়তলা ভবনের নিচতলায় তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ ও পদচারী-সেতু, দ্বিতীয় তলায় শপিং মল, শিশুযত্ন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় ৩৯ কক্ষবিশিষ্ট তারকা মানের হোটেল, চতুর্থ তলায় রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তাদের কার্যালয় কিছুই চালু হয়নি। ভবনের সম্মুখভাগে তৈরি হয় ঝিনুক আদলের ফোয়ারা।
এদিকে অবকাঠামো তৈরি হলেও সেসব পড়ে থাকায় চুরি হচ্ছে বিদ্যুতের তার, বাল্বসহ মূল্যবান জিনিস। নির্মিত অবকাঠামো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারে দেরির কারণে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে। এসব বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কক্সবাজারের মানুষ আইকনিক রেলস্টেশন পেয়েছে। দৈনিক ১০ জোড়া ট্রেন চলাচলের চাহিদাসম্পন্ন কক্সবাজারে এখন চলছে দুই জোড়া। মালবাহী ট্রেন চালু না হওয়ায় কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণ, মাছ, পানসুপারি এবং টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। তাতে সরকারও মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চালু হয়নি যাত্রীসেবাও। এনিয়ে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ।
রেলস্টেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। এটি বিগত সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ছয়তলা রেলস্টেশন নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৩৬ কোটি টাকা। তবে মূল প্রকল্পে থাকলেও স্টেশনের এক ডজনের বেশি যাত্রী পরিষেবা চালু হয়নি। এসব সুবিধা চালু না হওয়ায় একদিকে যাত্রীরা যেমন হতাশ হচ্ছেন, তেমনি সরকার আয়বঞ্চিত হচ্ছে।
রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে পূর্ব পাশের সরু প্ল্যাটফর্ম দিয়ে বেরিয়ে আসছেন। একই পথে ট্রেনে ওঠার জন্য ছুটছেন আরেক দল যাত্রী। তাতে বাড়ছে ভিড়, হুড়োহুড়ি। মালামাল ও শিশুসন্তানদের নিয়ে বের হতে গিয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারী যাত্রীরা। স্টেশনের প্রবেশপথের পাশে (ভবনের নিচতলায়) একটিমাত্র টয়লেট রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের বিশাল লাইন। প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের বসার এবং নামাজের কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই খাবারের ব্যবস্থা।
আইকনিক রেলস্টেশন স্টেশন ম্যানেজার গোলাম রব্বানী বলেন, রেলস্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণ হলেও ২৮ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ট্রেন পরিচালনার স্বার্থে কয়েকটা কক্ষ তাঁরা ব্যবহার করছেন। এখন দৈনিক দুই জোড়া ট্রেন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা চলাচল করলেও যাত্রীসেবার কিছুই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক কথায় যাত্রীসেবার কিছুই চালু হয়নি।
বিই/পিডি/টিসি