ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৬ জুন ২০২৫, ০৯ জিলহজ ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

টানা বৃষ্টির পর পশুর হাটে স্বস্তি, উপচে পড়া ভিড়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৫৮, জুন ৪, ২০২৫
টানা বৃষ্টির পর পশুর হাটে স্বস্তি, উপচে পড়া ভিড় ...

চট্টগ্রাম: ‎ কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে কিছুটা থমকে ছিল চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর হাটগুলো। রোদের দেখা মিলতেই জমজমাট হয়ে উঠেছে পশুর হাটগুলো।

তবে হাটে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা ও দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বিক্রেতাদের। দাম যাচাই করে চলে যাচ্ছেন অনেকে।
 

বুধবার (৪ জুন) সাগরিকা ও বিবির হাট পশুর বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

‎এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাটগুলোতে দেখা যায়, চট্টগ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ট্রাক ভর্তি গরু নিয়ে এসেছেন বেপারি ও খামারিরা। কোরবানির গরুতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে পুরো পশুর হাট। বৃষ্টির কারণে কাদামাটি জমে গেছে অনেক হাটে। যার কারণে অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। তবে, সাধ্য অনুযায়ী কাদামাটির ওপর বালি, মাটি, খড়কুটো দিয়ে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছেন হাট ইজারাদার ও বেপারিরা। ছোট-বড় সব ধরনের কোরবানির পশুর নিয়ে ক্রেতাদের অপেক্ষায় বসে আছেন বিক্রেতারা। ট্রাকভর্তি গরু, সাজানো পশুর সারি, উচ্চস্বরে ডাক সব মিলিয়ে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ। কিন্তু এতসব আয়োজনের মাঝেও নেই কাঙ্ক্ষিত সেই ক্রেতা।  

খামারিরা অভিযোগ করে বলেন, বছরজুড়ে নানা পরিচর্যায় কষ্ট করে বড় করেছেন কোরবানির গরু। কিন্তু এখন হাটে গরুর প্রকৃত দাম পাচ্ছেন না। লোক আসে, দেখে, দাম জেনে চলে যায়। এরমধ্যে কয়েদিনের টানা বৃষ্টি যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

‎সাগরিকা হাটে গরু নিয়ে আসা খামারি রমিজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় প্রতিবছর বাজারে গরু নিয়ে আসি। আলহামদুলিল্লাহ বেচাও ভালো হয়। এবারও আশা করছি ভালো হবে। তবে, গো খাদ্যের দাম বেশি। একটি গরু লালন পালন করতে এখন অনেক খরচ। সে অনুযায়ী দাম পাওয়া কঠিন।

‎ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে ১৫টি গরু নিয়ে বিবিরহাট বাজারে এসেছেন বেপারি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, বিবিরহাট সব থেকে বড় হাট। তাই আমি বিভিন্ন গ্রাম থেকে গরুগুলো কিনে নিয়ে প্রায় প্রতি বছর আসি। বাজার শুরু থেকে বৃষ্টি পেয়েছে। মাত্র দুটি গরু বিক্রি করতে পেরেছি। ক্রেতা খুব কম, যারা আছেন তারা দাম ঠিকঠাক বলছেন না। প্রত্যেকটা গরুতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা কম বলছেন। এরপরেও দেখে শুনে দিয়ে দিবো।

এদিকে, বাজার যাচাই-বাছাই করতেই সময় পার করছেন ‎ক্রেতারা৷ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তারা বলেন, আমরা এখনো বাজার যাচাই করছি। ঈদের আরও কিছুদিন বাকি আছে। দাম আরও কিছু কমে গেলে কিনবো।

‎নগরের বাকলিয়া এলাকা থেকে বিবিরহাট গরুর বাজারে এসেছেন নাজমুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা। তিনি বলেন, আজ মূলত গরু দেখতে এসেছি। অনেক বাজার ঘুরেছি। গরুর দাম কমই মনে হয়েছে। আরও কিছুসময় দেখে গরু কিনবো।

‎সাগরিকা পশুর হাটের ইজারাদারের দায়িত্বে থাকা জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও হাটে প্রচুর পরিমাণ গরুর এসেছে। বৃষ্টির কারণে ক্রেতা সমাগম কিছুটা কম। এখন আবহাওয়ার অবস্থা ভালো দেখা যাচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা সমাগমও বাড়ছে।  

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর দাম কম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের টহল চলছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হেলথ ক্যাম্প বসানো হয়েছে।  

‎চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গবাদিপশুর সংখ্যা ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি। ওই হিসেবে এবার ৮ হাজার ৫২৩টি বেশি গবাদিপশু উৎপাদিত হয়। কিন্তু এরপরও স্থানীয় উৎপাদনে চাহিদা মিটবে না। কারণ এবার চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। অর্থাৎ চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন অনুসারে এবার ঘাটতি আছে ৩৫ হাজার ৩৮৭টি কোরবানির পশু।

চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বা হৃষ্টপুষ্ট কোরবানির পশুর মধ্যে গরুর সংখ্যাই বেশি। এবার মোট উৎপাদিত কোরবানি পশুর মধ্যে গরু আছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩টি। এছাড়া ৬৪ হাজার ১৬৩টি মহিষ, ২ লাখ ৫১ হাজার ৭৪টি ছাগল এবং ৫৫ হাজার ৬৯৭টি ভেড়া রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশুর মধ্যে নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ২০ হাজার দুইটি, ডবলমুরিংয়ে ১০ হাজার এবং কোতোয়ালীতে চার হাজার ৩৩১টি গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়। এছাড়া সাতকানিয়া উপজেলায় ৪৮ হাজার ১২৪টি, চন্দনাইশে ৪৮ হাজার চারটি, আনোয়ারায় ৬৫ হাজার ২১১টি, বোয়ালখালীতে ৩১ হাজার ১৬০টি, পটিয়ায় ৭৮ হাজার ৭৯১টি, কর্ণফুলীতে ৩৩ হাজার ৬২৯টি, মীরসরাই উপজেলায় ৬০ হাজার ৭৮০টি, সীতাকুণ্ডে ৫৯ হাজার ২১৩টি, হাটহাজারীতে ৪৮ হাজার ২৮০টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৫১ হাজার ৮১৪টি, ফটিকছড়িতে ৭৮ হাজার ৫৩০টি, লোহাগাড়ায় ৪০ হাজার ৬২টি, রাউজানে ৩৫ হাজার ৭০১টি, বাঁশখালীতে ৬২ হাজার এবং সন্দ্বীপে ৮৫ হাজার ২৫০টি গবাদিপশু রয়েছে।

বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।