চট্টগ্রাম: দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বাজেটে জ্বালানি বিশেষ করে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য, এলএনজি এবং আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক কমায় দ্রব্যমূল্য কমার পাশাপাশি বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে এবং সরকারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে। দেশের পুঁজিবাজার চাঙা করতে এবং বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে আশার বাণী আছে এ বাজেটে।
রোববার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের প্রেক্ষিতে দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন।
তিনি মনে করেন, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী দেশি শিল্পকে সুরক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিফলন ঘটেছে এবারের বাজেটে।
চেম্বার প্রশাসক বলেন, বাজেটে মোট ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, মোট আয় ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা এবং মোট ঋণ ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে।
ঘাটতি বাজেট মোকাবেলায় বৈদেশিক ঋণের চেয়ে অভ্যন্তরীণ উৎসে গুরুত্ব দেওয়াকে দেশীয় সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন তিনি।
এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন তথা শিক্ষা খাতকে। এ খাতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৯ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে ৫৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং জ্বালানি অবকাঠামোগত খাতে ২২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকাসহ মোট ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি হিসেবে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেটে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে টার্নওভার করের আওতামুক্ত সীমা ৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি এবং ব্যাংকে আবগারি শুল্কের ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকার পরিবর্তে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতি দেওয়ায় সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহী হবে। এছাড়া বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উপকারভোগীদের ভাতার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি যৌক্তিক পরিমাণে উপকারভোগীর সংখ্যাও বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ পরিবার ও আহত পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বাজেটে বরাদ্দ রাখায় ধন্যবাদ জানান চেম্বার প্রশাসক।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি সীমিত রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ আশাব্যাঞ্জক। এই প্রেক্ষিতে বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে কোন কোন ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার ও কিছু ক্ষেত্রে কমানো হয়েছে। আবার দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আগাম করের হার ৩ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নির্ধারণ এবং বাণিজ্যিক আমদানিকারকের ক্ষেত্রে আগাম কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করায় দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন।
সরকার স্বাস্থ্য সেবাকে আরও আধুনিক করতে হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি, ক্যান্সার প্রতিরোধ ওষুধসহ সব ধরনের ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি এবং এপিআই তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ককর অব্যাহতি প্রদান এবং দেশীয় ফলমূল প্রক্রিয়াজাতকরণে হিমাগার স্থাপনে যন্ত্রপাতি আমদানি এবং কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব কৃষি ও ওষুধ শিল্পে আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে।
তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বন্ড ব্যবস্থাকে সহজীকরণ ও ব্যবসাবান্ধব করার উদ্দেশ্যে সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস এবং ফ্রি জোন বন্ডেড ওয়্যারহাউস ব্যবস্থা প্রবর্তন করাকে সাধুবাদ জানান। এর মাধ্যমে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের আমদানি খরচ ও সময় উভয়ই কমবে।
চেম্বার প্রশাসক বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে আগাম কর সমন্বয়, রিফান্ড আবেদন ও রেয়াত গ্রহণের সময়সীমা ৪ মাসের পরিবর্তে ৬ মাস এবং বিদ্যমান ৪৫টি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা শিথিল করে ১২টি ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের বিষয়টি আরও বিনিয়োগ ও শিল্পবান্ধব হবে।
এআর/পিডি/টিসি