ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘পুলিশ চেষ্টা করলে মেয়েকে জীবিত পাওয়া যেত’

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
‘পুলিশ চেষ্টা করলে মেয়েকে জীবিত পাওয়া যেত’ ...

চট্টগ্রাম: চোখের সামনে উদ্ধার করা হচ্ছে নিজের গর্ভে ধারণ করা একমাত্র মেয়েকে। সেখানে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছেন মা।

কয়েকজন চেষ্টা করেও তাঁকে আটকে রাখতে পারছেন না। মায়ের এমন কান্নার দৃশ্যে উপস্থিত অনেকের চোখও ভিজেছে।

বুধবার (২৯ মার্চ) ভোরে নগরের পাহাড়তলী থানাধীন মুরগী ফার্ম আলম তারারপুকুর পাড় থেকে আবিদা সুলতানা আয়নীর (১০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ২১ মার্চ শিশুটি নিখোঁজ হয়।

আয়নীর মা বিবি ফাতেমা বলেন, মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ যদি আমার মেয়েকে খুঁজতো-এই ঘটনা ঘটতো না। আমি বার বার এসআই দুলালকে বলেছি, রুবেলকে সন্দেহ হয়। সে আমাকে দেখলে হাসে। এসআই দুলাল আমার কথার গুরুত্ব দেয়নি। আমি মেয়েকে অনেক খুঁজেছি। রুবেলকে সন্দেহ করেছি। তারা আমার মেয়েকে জ্বিন চালান দিয়ে নিয়ে আসবে বলে ঠাট্টা করেছে।  

তিনি বলেন, আমার মেয়ের অনেক শখ পূরণ করতে পারিনি। তার কাপড়গুলো কে পড়বে? আম্মু বেতন পেলে আমাকে ৫০ টাকা দিও। আব্বু আমি কুরআন নিয়েছি। আমার জন্য দোয়া করিও, তাড়াতাড়ি যেন শেষ করতে পারি। রুবেল আমার মেয়েকে কুরআন পড়তে দেয় নাই। সবাইকে বলেছি, আমার বাচ্চাকে খুন করেছে। থানার এসআই দুলাল ও মনিরকেও বলেছি। তারা আমাকে বলেছে- আমার মেয়ে নাকি প্রেম করে। রুবেল নাকি ভাল ছেলে। ছোট বাচ্চা কিসের প্রেম করে? আমার জ্বলজ্যান্ত বাচ্চাকে খুন করেছে। আমি মা ডাক শুনিনি আটদিন।

কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন শিশু আয়নীর দাদা জাফর আহম্মেদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি দুই মাস ধরে গ্রামের বাড়ি ফেনীতে ছিলাম। নাতনি আবিদাকে দেখতে পারিনি। নিখোঁজের সংবাদ শুনে পাহাড়তলী এসেছিলাম। থানায়ও যোগাযোগ করেছিলাম। থানা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করেনি। পরে মঙ্গলবার আদালতে মামলা করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমার নাতনিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে রুবেল। পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। এখন আমার নাতনিকে ফিরিয়ে দিতে পারবে তারা? 

চাচা মো. আল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রুবেলের পরিবারও জড়িত। তার মা ও ভাই আমাদের হুমকি- ধমকি দিয়েছে।

বুধবার (৯ মার্চ) ভোরে মরদেহ উদ্ধারের সময় নগরের পাহাড়তলী থানাধীন আব্দুর কাজীর দিঘীরপাড়া এলাকায় বিপুল সংখ্যক লোক জড়ো হন। ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগী শিশুর মা এবং তার নিকটাত্মীয়রাও আসেন। তারা সবাই অভিযুক্ত রুবেলের ফাঁসি দাবি করেন।  

এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক শরমিন জাহানের আদালতে বিড়ালছানা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আবিদা সুলতানা আয়নীকে অপহরণ করার অভিযোগে শিশুটির মা বিবি ফাতেমা বাদী হয়ে মামলা করেন। আদালত পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলাটি এজাহার হিসেবে নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, শিশু আবিদা সুলতানা আয়নী নগরের পাহাড়তলী কাজীর দীঘি সাগরিকা রোড এলাকার একটি বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। মা পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বাবা একই পেশায় ঢাকায় কর্মরত। গত ২১ মার্চ স্কুলের যাওয়ার পথে তাকে বিড়ালছানা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় তরকারি বিক্রেতা মো. রুবেল অপহরণ করে নিয়ে যায়।  

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, ডোবা থেকে  বস্তাবন্দি শিশু আবিদা সুলতানা আয়নীর গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের পরে রুবেল আবিদাকে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।   

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।