ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বঙ্গবন্ধু অনেক কথা অকপটে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছেন: ড. অনুপম সেন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২২
বঙ্গবন্ধু অনেক কথা অকপটে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছেন: ড. অনুপম সেন

চট্টগ্রাম: খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের অনেক কথা অকপটে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছেন। রাজনৈতিক নানা ঘটনাবলি ছোট ছোট বাক্যে অসাধারণ ভাবে বর্ণনা করেছেন।

 

বাঙালির ইতিহাসে নতুন পথ সৃষ্টি করেছে ১৯৭১। বঙ্গবন্ধু এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন কারণ তিনি স্বাধীনতা এনেছেন।

তিনি শ্রেষ্ঠ বাঙালি কারণ তিনি বাঙালিকে প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন।  

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে ইতিহাসের খসড়া সুহৃদ সম্মিলনীর সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সেন এসব কথা বলেন। ‘শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী ইতিহাসের নতুন আখ্যান ও কতিপয় প্রসঙ্গ’শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. ইলু ইলিয়াস।  

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে খাটো করার একটা প্রয়াস এ দেশে চালু রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাদের আমরা বামপন্থী বলি তাদের একটি অংশ জড়িত। ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করার কোনো সুযোগ নেই। পঞ্চাশের দশকে সোহরাওয়ার্দীর সব ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়। সোহরাওয়ার্দীর অগোচরেই বঙ্গবন্ধু তার স্বাধীনতার আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে গেছেন। যতবারই বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার কথা বলতেন ততবারই বাধা পেয়েছেন। সোহরাওয়ার্দী সাহেব বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। তিনি বাঙালি বিদ্বেষী ছিলেন না। কিন্তু তিনি কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি।  

যুক্তফ্রন্ট গঠনেও একটা ষড়যন্ত্র ছিল। বঙ্গবন্ধু ঢাকায় ছিলেন না। সোহরাওয়ার্দী করাচিতে। কিন্তু আবুল মনসুর আহমদ সাক্ষর করিয়ে ফেলেছেন ভাসানী ও শেরেবাংলাকে দিয়ে। এই ষড়যন্ত্রের শিকার বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে খাটো করার, ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা চলছে।  তার বিরুদ্ধে এই ইতিহাস সন্ধানের চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।

কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, পাকিস্তান আমলে শেরেবাংলা সত্তোরোর্ধ্ব একজন। ফলে উনার কঠিন পথের তখনকার রাজনীতির জন্য নির্ভর করতে হতো শেখ মুজিবের মতো তরুণ একজনের ওপর। সেটা তিনি করেননি। অবাক হয়ে লক্ষ্য করি সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, শেরেবাংলা, আবুল মনসুর আহমদ, আবুল হাশিমদের ছাপিয়ে কী করে বঙ্গবন্ধু নেতা হয়ে ওঠেন। উনাদের অনেক অবদান, খুব শ্রদ্ধেয়। কিন্তু দেখা যায়, উনারা রাজনীতির পথে কখনো না কখনো কম্প্রোমাইজ করেছেন।  

বাঙালি নানা সময়ে নানা ভাবে ভরসা করতে চায় কিন্তু পারছে না। তখন দেখতে পাই অটল ও খাঁটি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন শেখ মুজিব। মানুষ দেখলো নির্ভেজাল ও আস্থায় নেওয়ার মতো নেতা পাওয়া গেছে। পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী হলেও ১৯৪৮ এর ভাষা আন্দোলন থেকেই তিনি বুঝতে শুরু করলেন যে এদের সঙ্গে আর থাকা যাবে না। পঞ্চাশের দশকে যত আন্দোলন হচ্ছে তাতে তিনি থাকছেন। ভাষা আন্দোলনের পর বঙ্গবন্ধু অনুভব করেন অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথাই ভাবতে হবে। মুসলিম লীগ নবাবজাদারা দখল করায় শুরুতে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন। মানে জনগণের দল। পাকিস্তানের সঙ্গে যে লড়াই চলছিল তার নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তাই তিনি মহানায়ক।  

অধ্যাপক ড. ইলু ইলিয়াস বলেন, অসমাপ্ত আত্মজীবনীকে স্মৃতিকথা ভাবা ঠিক হবে না। এই গ্রন্থ বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রামের এক মহামূল্যবান ইতিহাস দলিল। আমাদের প্রচলিত ইতিহাস ও অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বর্ণিত ঘটনার মধ্যে অনেক বৈপরীত্য বিদ্যমান। সুতরাং এই নিরিখে এখন আবশ্যক হয়ে পড়ে অসমাপ্ত আত্মজীবনীর যথাযথ পাঠ গ্রহণ পূর্বক প্রচলিত ইতিহাসের পর্যালোচনা ও পুনর্মূল্যায়ন এবং আবশ্যকীয় ক্ষেত্রে ইতিহাসের নবরূপ নির্মাণ তথা সঠিক ইতিহাস রচনা করা। আমাদের সামনে এখন সমাগত সঠিক ইতিহাস রচনার মৌল প্রয়োজনীয় উপাদান অন্বেষণের উৎস শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা। সম্মিলিত পাঠে ও পর্যালোচনায় আশা করি তা পূর্ণতা লাভ করবে।

স্বাগত বক্তব্যে ইতিহাসের খসড়া সম্পাদক মুহাম্মদ শামসুল হক বলেন, ইতিহাসের তথ্য উপাত্ত ও সত্য তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে আমরা পথ চলেছি। পাঠকদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছি। এই পথচলায় সম্প্রতি গঠিত হয়েছে ইতিহাসের খসড়ার সুহৃদ সম্মিলনী। এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইতিহাস চর্চার বিদ্যমান স্থবিরতায় গতিশীলতা সঞ্চারিত হবে এটাই প্রত্যাশা।

ওমরগণি এমইএস কলেজের প্রভাষক অনিন্দিতা দেবনাথের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসের খসড়া সুহৃদ সম্মিলনীর আহ্বায়ক অধ্যাপক মুজিব রাহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২২
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।