ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নিজের অজান্তেই পেটে যাচ্ছে বিষ

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২২
নিজের অজান্তেই পেটে যাচ্ছে বিষ ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: জমি থেকে সংগ্রহ করা শাক-সবজি দিনের আলো কমতেই সতেজতা হারায়। বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত এসব সবজি তাজা রাখতে খুচরা বিক্রেতারা পানিতে ভিজিয়ে নেয়।

কিন্তু যে পানিতে ভিজিয়ে তাজা করা হয়, তা দেখলে যে কারও চক্ষু চড়কগাছ হবে।  

নগরের আসকার দিঘি, এনায়েতবাজার রানীর দিঘি, আগ্রাবাদ ঢেবার দিঘি, চান্দগাঁওয়ের মুন্সিপুকুরসহ মাজার সংলগ্ন দিঘিতে নিত্য চলে শাক-সবজি ধোয়ার কাজ।

জমে থাকা এই পানি ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। আবার অনেকে শাক দীর্ঘদিন তাজা রাখতে রাসায়নিক সার ও ফরমালিনমিশ্রিত পানি, রঙ ইত্যাদি ব্যবহার করছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সবজি উৎপাদন হয় ২৯ হাজার ৬১৮ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে হাইব্রিড আবাদ হয়েছে প্রায় ২৬ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ চলতি মৌসুমে ৮৯ দশমিক ৮১ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড সবজির আবাদ হয়। এই সবজি চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও কীটনাশক। এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপের জরিপ সূত্রে জানা গেছে, বাজারে বিক্রয় হওয়া ৯৮ শতাংশ শাক-সবজিতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।  

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার শ্রীপুর থেকে শীত মওসুমে চট্টগ্রামে আসছে টমেটো। এই টমেটো পাকানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছে হরমোন। তবে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, হরমোন ছিটানো টমেটো পরীক্ষা করে দেখা গেছে- তাতে শূন্য দশমিক ৯ পিপিএম মাত্রার হরমোন রয়েছে। এই হরমোনের সহনীয় মাত্রা ২ পিপিএম। অবশ্য আগাম আহরণ করার ফলে টমেটো কম পুষ্ট হচ্ছে।  

কৃষিবিদরা বলছেন, ফল ও শাকসবজি বাজারে আসার আগে অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে আসে। জমি থেকে বাজারে আসতে আসতে এসব খাবার সতেজ থাকে না। তাই এতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করা হয়। এমনকি ফল ও শাকসবজিকে পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচাতে যে কীটনাশক ওষুধ দেওয়া হয়, তার প্রভাবও এসব পণ্যে থেকে যায়, যা সাধারণ পানি দিয়ে দূর করা সম্ভব হয় না। এর ওপর এসব শাক-সবজি ক্রেতার হাতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তাজা রাখতে নালা-ডোবা-খাল ও নদী-দিঘির ময়লা পানিতে চুবানোও ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।

সবজির বাজারে সারা বছরই পাওয়া যায় বেগুন। এছাড়া শীতকালীন সবজি হলেও ফুলকপির আগাম জাত আগস্টেই চলে আসে বাজারে। প্রায় একই সময়ে পাওয়া যায় শিম-বরবটিও। গবেষকরা এই চারটি সবজির নমুনা পরীক্ষায় পেয়েছেন সাইপারমেথ্রিন, ক্লোরোপাইরিফস, ডাইমেথয়েট, অ্যাসিফেট ও কুইনালফসের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি।

সবজি বিক্রেতারা জানান, শুকিয়ে যাওয়া শাক, ধনেপাতা সহ নানান সবজি ক্রেতারা কিনতে চায় না। পানিতে ভিজিয়ে নিলে এগুলো তাজা দেখায়। তখন ক্রেতারাও খুশি হয়ে কিনে নেয়।

গণমাধ্যমকর্মী শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার বসবাস কাট্টলী এলাকায়। সেখানে নালার বিষাক্ত পানিতে শাক ধোয়া দেখে বাজারের শাক খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। শাক সবার যেমন পছন্দের, ঠিক আমার পরিবারেরও পছন্দের। খেতে মন চাইলে ক্ষেত থেকে নিজেই সংগ্রহ করি।

লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পটিয়া ও সীতাকুণ্ডে ব্যাপক আকারে হাইব্রিড সবজির চাষ হচ্ছে। চন্দনাইশের দোহাজারী এলাকার সবজি চাষিরা জানান, এই অঞ্চলে হাইব্রিড বীজ ছাড়া চাষাবাদ হয় না। এতে ফলন ভালো হয় এবং সময়ও কম লাগে। জমিতে ব্যবহার করা হয় ইউরিয়া, দস্তা, ফসফেট, জিংক সার।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোরশেদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, সবজির ফলনে ব্যবহার করা রাসায়নিকই ক্যানসার, পারকিনসন্স, চর্মরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা ধরনের রোগের কারণ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা রাসায়নিকযুক্ত খাবার খেয়ে স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভের সন্তানের নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে।  নিজের অজান্তেই পেটে যাচ্ছে বিষ।

চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, না ধুয়ে কাঁচা ফল বা সবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে সংক্রমণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। ফল ও ফসলে সংক্রমণ সৃষ্টিকারী জীবাণু আসতে পারে যে কোনও পর্যায়েই- গাছে থাকাকালে, ফসল তোলার সময় কিংবা পরিবহনের সময়। মানুষের হাতের স্পর্শই এর প্রধান কারণ। আবার ঘরে আনার পরও ফল ও সবজিতে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে অন্যান্য কাঁচা কিংবা রান্না করা খাবারের সংস্পর্শে আসার কারণে, বিশেষ করে মাংস। শুধু ধুলেই যে ফল, সবজি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হয়ে যাবে সেটা নিশ্চিত নয়। পানি দিয়ে ধুয়ে সব ধরনের ‘প্যাথোজেন’ অপসারণ করা যায় না। তবে সঠিকভাবে পরিষ্কার করতে পারলে ৯০ শতাংশ জীবাণু অপসারণ করা সম্ভব।  

তাদের পরামর্শ, সবজি বাজার থেকে আনার পর একটি পাত্রে কিছুক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখা খুব উপকারী। ফল বা সবজিতে কোনো আঘাতের চিহ্ন থাকলে সেই অংশটা কেটে ফেলে দিতে হবে। খোসা ছাড়াতে হলে আগে খোসাসহ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এতে খোসায় লেগে থাকা কোনো সংক্রামক ছুরির মাধ্যমে ফল কিংবা সবজিতে পৌঁছাতে পারবে না। বহমান পানিতে ফল ও সবজি ধুতে হবে, তাতে কোনো ধরনের সাবান মাখানো চলবে না। শক্ত ফল, সবজি পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২২
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।