শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের বিদায়ী শেষ বলে কথা! লঙ্কানরা নিশ্চয়ই ম্যাচটি জিতে ‘জাতীয় নায়ক’-কে সুন্দরভাবে বিদায় দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নিজের শেষটা রাঙাতে পারেননি ম্যাথিউস, পারেনি তার দলও।
অথচ এই বাংলাদেশ কদিন আগেই টানা ৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হেরে এসেছে। এর আগে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে দুই টেস্টের সিরিজে ১-১ ড্র। এর বাইরে বিসিবিতে সাম্প্রতিক অস্থিরতা, বোর্ড ও নেতৃত্বে পালাবদল মিলিয়ে টাইগারদের আত্মবিশ্বাস অনেক কম থাকারই কথা। তবে গলের চিত্রটা হলো একেবারে অন্যরকম।
বারবার বৃষ্টি বাধা সত্ত্বেও ৫ দিনের সাড়ে ৩ দিনই নিয়ন্ত্রণ করেছে বাংলাদেশ। আর এর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। দুজনেই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। তবে জোড়া সেঞ্চুরিতে অসাধারণ এক রেকর্ড গড়ে বাকি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন শান্ত।
বোলাররা আরেকটু ভালো করলে হয়তো ম্যাচটা জিতেই যেতো বাংলাদেশ। শেষ বেলায় স্বাগতিকদের বেশ চেপেও ধরেছিল তারা। কিন্তু সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়ে শান্তবাহিনী। যদিও ২৯৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৭২ রান তুলতে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল লঙ্কানরা। একাই ৩ উইকেট নিয়ে ফর্মে ফিরেছিলেন বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও।
শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসের ৩২তম ওভার পর্যন্ত খেলা হয়েছিল। বাকি ছিল আরও কয়েক ওভার। এরপর ড্র, যেটি বাংলাদেশের জন্য বহুল আকাঙ্ক্ষিত, জয়ের সমান। আরেকটি বিষয় হলো, গলে ২৬ টেস্ট পর ড্রয়ের দেখা মিললো। এতেই বোঝা যায়, এই ম্যাচ ড্র হওয়া একপ্রকার অস্বাভাবিক ফলাফল।
মুশফিকুর রহিম ৪৯ রানে রানআউট হওয়ার পরই শুরু হয় বৃষ্টি। লম্বা সময় খেলা বন্ধ থাকে। তবে দিনের ৫০ ওভার বাকি থাকতে আবার মাঠে নামে দুই দল। শান্ত তখনো ক্রিজে, আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টেস্টে নিজের দ্বিতীয় শতক পূর্ণ করেন। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি। বাংলাদেশের লিড যখন প্রায় ৩০০-তে পৌঁছে, তখনই শান্ত ইনিংস ঘোষণা করেন।
জবাবে, শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার আত্মবিশ্বাসী সূচনা করলেও টি-ব্রেকের আগে পরপর দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় সফরকারীরা। এরপর অভিজ্ঞ চান্ডিমাল ও ম্যাথিউস রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা চালিয়ে যান। তবে বাংলাদেশের স্পিনাররা শ্রীলঙ্কান স্পিনারদের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর প্রমাণিত হন, আরেক দফা দু’টি উইকেট তুলে নেন তারা। তবে কামিন্দু মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (ডিডিএস) উইকেটে জমে গিয়ে নিশ্চিত করেন ম্যাচের ড্র।
প্রথম ইনিংসে টস জিতে ব্যাট করে বাংলাদেশ তোলে ৪৯৫ রান—শান্ত ও মুশফিকের সেঞ্চুরি এবং লিটনের ৯০ রানের সৌজন্যে। জবাবে, শ্রীলঙ্কাও ভালো গতিতে ব্যাট করে। নিশাঙ্কার ক্যারিয়ার সেরা ১৮৭, চান্দিমাল ও কামিন্দুর ফিফটি এবং অন্যদের ছোটখাটো অবদান মিলিয়ে তারা বাংলাদেশের স্কোরের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
সামান্য ১০ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আবারো দ্রুত উইকেট হারায় বাংলাদেশ, আনামুল দ্বিতীয়বারের মতো ব্যর্থ। তবে শাদমান হক দারুণ ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। এরপর শান্ত ও মুশফিক ফের একবার জুটি গড়েন—প্রথম ইনিংসের ২৬৪ রানের জুটির পর এবারও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। তাদের শতরানের জুটিই শ্রীলঙ্কার জয়ের আশা শেষ করে দেয়।
শেষ পর্যন্ত টেস্টটি ড্র হলেও শান্ত, মুশফিক ও নিশাঙ্কার ব্যাটিং, এবং বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ নজর কেড়েছে সবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৪৯৫ ও ২৮৫/৬ ডি.
শ্রীলঙ্কা: ৪৮৫ ও ৭২/৪
ফলাফল: ম্যাচ ড্র
ম্যাচ সেরা: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক)
এমএইচএম