ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

ক্রিকেট

ব্যাটারদের কঠিন দিনে বোলাররা নিলেন ১৫ উইকেট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২৩
ব্যাটারদের কঠিন দিনে বোলাররা নিলেন ১৫ উইকেট

ব্যাটারদের জন্য যেন বধ্যভূমি হয়ে উঠল মিরপুর। এমন কিছু অবশ্য ছিল প্রত্যাশিত, কিন্তু এতটা কি না- প্রশ্ন থাকতে পারে কেবল তা নিয়ে।

মুশফিকুর রহিমের ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ আউটের দিনে আলোচনায় ব্যাটারদের জন্য কঠিন এক দিন। বোলাররা যেদিন পেয়েছেন ১৫ উইকেট।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষটিতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। প্রথম দিনে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ১৭২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে শেষ বিকেলে ৫ উইকেট হারিয়ে সফরকারীরা করেছে ৫৫ রান।

বুধবার দ্বিতীয়বারের মতো টেস্টে টস করতে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের দিন থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে মিরপুরে। ম্যাচের দিন সকালটাও ছিল মেঘাচ্ছন্ন। এর মধ্যে শান্তর ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত কিছুটা সাহসীই বলতে হয়।
  
কিন্তু প্রথম থেকেই দুই উদ্বোধনী ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসানকে কঠিন সময় কাটাতে হয়েছে। টিম সাউদি ও কাইল জেমিসনের বলে সুইংও ছিল বেশ। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারেই স্পিনার নিয়ে আসেন কিউই অধিনায়ক। এরপরও কিছুটা সময় বেশ ভালোভাবেই খেলছিলেন দুই ওপেনার।  

১০ম ওভারে গিয়ে স্পিনার দিয়েই কাজ হয়। এ ম্যাচে একাদশে ঢোকা মিচেল স্যান্টনার প্রথম উইকেট এনে দেন নিউজিল্যান্ডকে। তাতে অবশ্য ব্যাটার জাকিরের দায়ই বেশি। স্যান্টনারকে এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে দাঁড়ানো উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ২৪ বলে ৮ রান আসে তার ব্যাটে।  

২৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর আর এক রানও যোগ করতে পারেনি তৃতীয় উইকেট জুটি। শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে এবার ফেরেন আরেক ওপেনার জয়। ৪০ বলে ১৪ রান করা এই ব্যাটার শুরু থেকেই উইকেটে হাঁসফাঁস করছিলেন।  

এক ওভার বিরতি দিয়ে আবারও উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এবার ১০ বলে ৫ রান করে মুমিনুল হক ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাটে লেগে ক্যাচ যায় উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলের হাতে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক শান্তও এবার ইনিংস বড় করতে পারেননি।  

স্যান্টনারকে চার মারার পরের বলেই তাকে রিভার্স সুইপ করতে গেলে বল প্যাডে লাগে। ১৪ বলে ৯ রান করা এই ব্যাটারকে শুরুতে আউট দেননি আম্পায়ার, পরে রিভিউ নিয়ে সফল হয় নিউজিল্যান্ড। এরপর আর কোনো বিপর্যয় ঘটতে দেননি বাকি দুই ব্যাটার।

শাহাদাৎ হোসেন দীপু ও মুশফিকুর রহিম বিরতির পরও খেলছিলেন দারুণভাবে। কিন্তু হুট করেই মুশফিকুর রহিম আউট হন। ইনিংসের ৪৪তম ওভারে কাইল জেমিসনের বলটা ঠিকঠাক ডিফেন্ড করেন মুশফিকুর রহিম। বলটা মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল উইকেটের পেছনে, স্টাম্পের কাছাকাছিও ছিল না।

বলটা ডান হাত দিয়ে আরও একটু ডানে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এরপর জেমিসন আবেদন করেন আউটের, আম্পায়াররা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য যান টিভি আম্পায়ারের কাছে। আউট হয়ে যান মুশফিক।

প্রায় ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের পর বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ‘হ্যান্ডেলড দ্য বল’ আউট হলেন মুশফিক, ২০১৭ সালে অবশ্য আউটটির নাম বদলে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ হয়ে যায়। সবমিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসে তিনি কেবল অষ্টম আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১তম হিসেবে এমন আউট হলেন। ধারাভাষ্যকক্ষে বসে মুশফিকের কাছের বন্ধু তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘আমি অবাক হবো না এই অভ্যাসটা যদি অনুশীলনের সময় তৈরি হয়ে থাকে। ’

টেস্টে প্রায় ২২ বছর পর এমন আউট দেখলো ক্রিকেট। ভারতের বিপক্ষে বেঙ্গালুরু টেস্টে ২০০১ সালে শেষবার ‘হ্যান্ডেলড দ্য বল’ আউট হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের মাইকেল ভন। রঙিন পোশাকের স্মৃতিটা আরেকটু কাছের। ২০১৫ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই আউট হন জিম্বাবুয়ের চামু চিবাবা।  
মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনেই ৪ উইকেটে হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ, দলের রান তখন কেবল ৪৭। এরপর আগের ম্যাচে অভিষিক্ত শাহাদাৎ হোসেন দীপুকে নিয়ে দলকে দারুণভাবে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মুশফিক।  

এ দুজন খেলছিলেনও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে। কিন্তু হুট করে মুশফিকের আউটে ভেঙে যায় জুটি। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৮৩ বলে ৩৫ রান করেন তিনি। মুশফিকের এমন আউটের পর রীতিমতো ধ্বস নামে বাংলাদেশের ইনিংসে। মুশফিকের সঙ্গে দারুণ খেলতে থাকা শাহাদাৎ হোসেন দীপু আউট হয়ে যান। ১০২ খেললেও ৩১ রান করেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে, গ্লেন ফিলিপসের বলে টম ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।  

তার বিদায়ের পর শেষ স্বীকৃত দুই ব্যাটার ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নুরুল হাসান সোহান। ১৭ বলে ৬ রান করে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন সোহান। ৪২ বলে ২০ রান করা মেহেদী আউট হন স্যান্টনারের বলে ক্যাচ দিয়ে।  

৮ উইকেট হারিয়ে প্রথম দিনের শেষ সেশনে মাঠে নামে বাংলাদেশ। শেষ দুই উইকেট জুটিতে ২৭ রান যোগ করেন তাইজুল ইসলাম-নাঈম হাসান ও শরিফুল ইসলাম। ৪৩ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন নাঈম, ১২ বলে ৬ রান আসে তাইজুলের ব্যাটে; ১২ বলে ১০ রান করেন শরিফুল। কিউইদের পক্ষে তিনটি করে উইকেট পান মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপস।  

ম্যাচের দিন ও সকালে বৃষ্টি হয়েছে। সারাদিনজুড়ে ছিল মেঘলা আকাশ। এমনিতেই ব্যাটারদের জন্য কঠিন হয়েছিল মিরপুরের উইকেট। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারদের জন্য যেন হয়ে গেলো দুর্ভেদ্য। শেষ বিকেলে কেবল ১২ ওভার ৪ বল খেলতে গিয়ে ৫ উইকেট হারিয়েছে তারা।  

শুরুটা হয় ডেভন কনওয়েকে দিয়ে। ১৪ বলে ১১ রান করার পর মেহেদী হাসান মিরাজের বল ছেড়ে দেন তিনি, 'ফোর্থ' স্টাম্পে পড়া ওই বল ভেতরে ঢোকায় বোল্ড হন তিনি। কিউইদের আরেক ওপেনার লাথামকে আউট করেন তাইজুল ইসলাম। ২০ বলে ৪ রান করা এই ব্যাটার তাইজুলের লো করা বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।  

এক ওভার পর এসে তাইজুল নেন হেনরি নিকোলসের উইকেটও। ১০ বলে ১ রান করে মিড অনে দাঁড়ানো শরিফুলের হাতে ক্যাচ দেন নিকোলস। দিনটা পুরোপুরি বাংলাদেশের করে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।  

১৪ বলে ১৩ রান করার পর কেইন উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন শর্ট লেগে দাঁড়ানো শাহাদাৎ হোসেন দীপু। এরপর মিরাজ এলবিডব্লিউ করেন ব্লান্ডেলকে। প্রথম দিনে বোলাররা ১৫ উইকেট নেন। আলোক স্বল্পতায় এদিন খেলা শেষ হয় দ্রুত। তবে আগামী কয়েকদিনও যে ব্যাটারদের কঠিন সময় পার করতে হবে এখানে, তার পূর্ভাবাস পাওয়া হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে।  

বাংলাদেশ সময় ১৬১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।