ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

কর্পোরেট কর্নার

মানবিক গুণাবলির সঙ্গে বেড়ে উঠুক শিশু

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২২
মানবিক গুণাবলির সঙ্গে বেড়ে উঠুক শিশু

ঢাকা: একদিন সাইকেল চালানোর সময় অসতর্কতাবশত ছোট একটি মুরগির ছানাকে চাপা দিয়ে ফেলে ভারতের ছয় বছর বয়সী ডেরেক সি লালচানহিমা। আহত ছানাটিকে বাঁচাতে তাৎক্ষণিকভাবে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যায় ডেরেক।


 
মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্রের কিশোরী তানভি বর্মণ প্রতিষ্ঠা করে ‘নো বার্থডে লেফট বিহাইন্ড’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য সান ফ্রান্সিসকোর সিলিকন ভ্যালিতে বসবাসকারী নিম্ন আয়ের পরিবারের সব শিশুদের জন্য জন্মদিনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা।
 
চীনের বারো বছর বয়সী শ্যু বিংইয়াং তার বিশেষভাবে সক্ষম বন্ধু ঝাং জিকে প্রতিদিন কাঁধে করে স্কুলে নিয়ে যায়।
 
স্টেজ ফোর টি-সেল লিম্ফোমা ধরা পড়ার পরে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভুগছিলেন ঈশানভির দাদি। অসুস্থ দাদির মনে সাহস জোগাতে নিজেও মাথা ন্যাড়া করে ফেলে চার বছরের ঈশানভি।
 
মুরগির ছানার জীবন বাঁচানোর জন্য ছোট শিশুটির প্রয়াস থেকে শুরু করে ঈশানভি তার দাদির নিজের চুল উৎসর্গ করে ফেলার এসব উদাহরণ থেকে মূলত শিশুদের মধ্যে তাদের মানবিক গুণাবলিগুলোর বিকাশের গুরুত্ব প্রকাশ পায়। সংজ্ঞা অনুসারে মানবিকতা বলতে বোঝায় অনুভূতিশীল হওয়া, আরও নির্দিষ্ট করে বললে অন্যদের প্রতি সদয় বা মানবিক আচরণ করা। মানবিকতার তত্ত্ব হচ্ছে আমরা যেখানে মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখবো, সেখানেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবো এবং অসহায়দের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবো।
 
শৈশব শিশুর সামগ্রিক বিকাশ এবং তাদের মধ্যে মানবিক গুণাবলি গড়ে তোলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। শৈশবেই মানুষের বেশিরভাগ মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়।
 
গ্রীষ্মের ছুটি, প্রাণবন্ত বিকেল বা ছুটির দিন- যেটাই হোক না কেন, ছোটবেলায় আমাদের বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই কাটে। তাই বাড়ি হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সদয় আচরণ করার এবং এরপর তা নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুশীলনের আদর্শ জায়গা। মানবিক আচরণ বাবা-মা ও ভাই-বোনদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে তা দেখেই শিশুটি বুঝতে পারে অন্যদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা উচিত। এরপরই তারা দেখতে পায় সদয় আচরণ কীভাবে তাদের চারপাশের মানুষ এবং তাদের নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনছে। শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশ থেকে সরাসরি যতটা শিখতে পারে তার চাইতে অনেকাংশেই বেশি জ্ঞান তারা অর্জন করে অন্যদের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে।
 
কোভিড-১৯ মহামারিকালকে এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এ মহামারি আমাদের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভয়াবহ সব খবর পাওয়া সত্ত্বেও আমরা চমৎকারভাবে এ বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলা করছি ও আমরা শুরু থেকেই সবার মধ্যে একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসার মানসিকতা দেখতে পাচ্ছি। এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে আমরা যেসব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছি, সব ক্ষেত্রে একে অপরকে নিজেদের শক্তি হিসেবে পাশে পেয়েছি।

এ কঠিন সময়ে অনেকেই অন্যদের কাছে আশা আর সম্ভাবনার বার্তা পৌঁছানোকে এক প্রকার দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে অসহায়দের মধ্যে খাবার ও কাপড় বিতরণ করেছে, অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করেছে এবং আশপাশে সবার মধ্যে ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তাদের এসব কাজ মানবিক ও সহানুভূতিশীল বিশ্ব গড়ে তুলতে শিশুসহ অন্য সবাইকে অনুপ্রাণিত করছে। মানবিক আচরণ শিশুদের অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার গুরুত্ব শেখাতে পারে এবং তাদের সহানুভূতিশীল ও স্নেহপূর্ণ মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে।
 
তাহলে আমরা কীভাবে শিশুদের মধ্যে নৈতিকতার বিকাশ ঘটাবো ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে ভূমিকা রাখব? শিশুর নৈতিক বিকাশের জন্য তাকে অন্যদের সঙ্গে কোনো কিছু ভাগ করে নিতে বা তাদের প্রতি যত্নশীল হতে শেখানো অপরিহার্য। যখন শিশুদের এ দুটি বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হবে তখন তারা তাদের বন্ধুদের সঙ্গে দলগতভাবে কাজ করতে, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে এবং অন্যের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে শিখবে।
 
আমাদের অবশ্যই এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যা শিশুদের একে অপরের সঙ্গে কোনো কিছু আদান-প্রদান ও যত্নশীল আচরণে উৎসাহিত করবে। তবে কোনো শিশুকে কখনো তার জিনিস অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে বাধ্য করা উচিত নয় বরং তাকে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। বিভিন্ন পরিস্থিতি ও সুযোগ তৈরি করে শিশুদের মধ্যে এ গুণের বিকাশ ঘটাতে হবে। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে ঘরের সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মতো কিছু ছোট উপহার, জলখাবার বা খেলনা দিতে পারেন। শিক্ষকরাও স্কুলে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন যেখানে শিশুরা সবার সঙ্গে কোনো কিছু ভাগ করে নেওয়ার বা অন্যের প্রতি যত্নশীল হওয়ার যে আনন্দ তার সঙ্গে পরিচয় করাতে পারেন। পেইন্টিং ও চিত্রাঙ্কনের মতো যেকোনো আর্ট প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের তাদের জিনিসপত্র এবং নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে উৎসাহিত করতে পারে।

আমরা যদি শুরু থেকেই শিশুদের প্রতি যত্নবান হই তবে তা সব শিশু ও আমাদের সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাই সুস্থ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আমাদের অবশ্যই শৈশবের শুরু থেকেই শিশুদের মধ্যে মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে হবে।

লেখক: লীনা শারমীন হক, প্রাইমারি বাংলা টিচার, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২২
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।