ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের জীবন-জীবিকা

বাঁধের উপরেই তাদের বসবাস

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২০
বাঁধের উপরেই তাদের বসবাস

বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরসহ উপকূলীয় বাসিন্দাদের জীবন চলে অতি কষ্টে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, দুর্যোগের সঙ্গে তাদের বসবাস। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে উপকূলবাসী। একমাত্র বসতবাড়িটুকু নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় অনেকেই বাঁধের উপর বসবাস করছে। উপকূলবাসীর অন্তহীন দুর্দশা এবং জীবন-জীবিকার চিত্র নিয়ে পাথরঘাটা উপজেলা করেসপন্ডেন্ট শফিকুল ইসলাম খোকনের প্রতিবেদনের ষষ্ঠ পর্ব।

পাথরঘাটার প্রান্তিক উপকূল ঘুরে: ‘ছবি তোলেন ক্যা? ছবি তুইল্যা কোনো লাভ নাই। মোগো কপালের পরিবর্তন অইবে না।

স্বামীর বাড়িতে আওয়ার পর তিন ভাঙা দিছে ঘর, এহন ওয়াপদার (বেড়িবাঁধ) উপরে থাহি। ’ বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক ছবি তুলতে গেলে এভাবেই কথা বলছিলেন বাঁধের উপর বসবাসকারী বিধবা ফুলভানু (৮০)।  

তিনি আরও বলেন, মোগো জন্মই হইছে কষ্টের কপাল নিয়া। ছবি তুইল্যা মোগো কপালের পরিবর্তন আনতে পারবেন না। নদীতে সব লইয়া গ্যাছে, এহন ওয়াপদার (বাঁধ) উপর থাহি। মোগো দেখার কেউ নাই। একটা সিদা (বাক প্রতিবন্ধী) পোলা লইয়া কোনো রকম দিন কাটাই।  

জানা যায়, একটা সময় ছিল যখন ফুলভানুর গোয়াল ভরা গরু ছিল, উঠান ভরা ধান আর কত রকমের ফলফলাদির গাছ, ছিল অনেক জমি। যে জমিতে ফসল ফলিয়ে বছরের খোরাক হয়েও বিক্রি করতেন। বিষখালী নদীর কড়াল গ্রাসে সব কিছু তছনছ করে দিয়ে যায় ভানুসহ অসংখ্য বাসিন্দাদের। ফুলভানুর ভিটে একে একে তিনবার নদীতে বিলীন হয়ে আজ তিনি নিঃস্ব ভূমিহীন।  

বিশ্বঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ঘেঁষা পশ্চিমে বলেশ্বর, পূর্বে বিষখালী নদী আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর মাঝখানেই পাথরঘাটা উপজেলা। এখানের অধিকাংশ মানুষ খেটে খাওয়া দিনমজুর এবং মৎস্য পেশার উপর নির্ভরশীল। উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটার মানুষ সব সময়ই দুর্যোগের সঙ্গে এক রকমের আলিঙ্গন করেই বসবাস করেন। সিডর, আইল, মহাসেন, নার্গিস, কোমেন, রোয়ানু, ফণি, বুলবুল আর আম্পান। সব কিছুই যেন তাদের জীবন সঙ্গী।  

বাঁধের উপরের বাসিন্দারা।  ছবি: বাংলানিউজসরেজমিনে পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের কুপদোন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিধবা ফুলভানু, রাহিমাসহ অসংখ্য বাসিন্দা এ বাঁধের উপরই কুঁড়ে ঘর উঠিয়ে বসবাস করছেন। এক সময় যাদের ছিল গোয়াল ভরা গরু, উঠান ভরা ধান আর কত রকমের ফলফলাদির গাছ। প্রকৃতি যেন তাদের উপর ক্ষুব্দ আজ। সব কিছু নদী গর্ভে বিলীন হয়ে এখন তারা নিঃস্ব।  

বাঁধের উপর বসবাসকারী ৮০ বছরের বিধবা ফুলভানু বলেন, স্বামী মারা গ্যাছে ২০ বছর আগে। ৩০ বছর ধইরা ওয়াপদার উপরে থাহি। ভাঙতে ভাঙতে এহন কূলে আইসা পরছি। জমি যা ছিল নদীতে লইয়া গ্যাছে।  

ওয়াপদার পাড়ে থাকা এবং বন্যার সময় ভয় পান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফুলভানু বলেন, কি আর করমু, থাকতো অইবে তো। যার রুহু আছে, হ্যার ডরও আছে। বেশি পানি উডলে সাইক্লোন শেল্টারে যাই।  

কথা হয় আরেক প্রতিবেশী রাহিমা বেগমের সঙ্গে। তার স্বামী মারা গেছেন ৬ বছর আগে। একমাত্র ছেলে সন্তান নিয়ে থাকেন বেড়িবাঁধের উপরে স্বামীর রেখে যাওয়া ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে।  

রাহিমা বেগম বলেন, ওয়াপদার উপরে ভাঙা ঘরে থাকতে কষ্ট হয় আর ঝুঁকিও আছে। তারপরেও থাকতে হয়। কারণ স্বামীর রেখে যাওয়া তেমন কোনো জমি নেই। যতটুকু আছে একমাত্র ছেলে সংসার নিয়ে থাকে।  

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, আমি পাথরঘাটায় আসার পরে এখন পর্যন্ত ভূমিহীনদের তালিকা পাইনি। বর্তমানে ভূমিহীনদের তালিকার কাজ চলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্ট, জুন ০৭, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।