ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

বাবা আসবে ফিরে, নতুন জামা নিয়ে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৪ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
বাবা আসবে ফিরে, নতুন জামা নিয়ে!

প্রান্তিক উপকূলের জেলে পল্লী থেকে ফিরে: বয়স এখন দুই বছর পেরিয়ে। অনেক কিছুই বুঝতে শুরু করেছে আয়শা। চার মাস বয়সে শিশু আয়শা হারিয়েছে বাবাকে। বাবা হিরু মিয়া সাগরে যাওয়ার দিন ঘুমের ঘরে দুই গালে চুমু দিয়ে চলে যান জীবিকার সন্ধানে যান সাগরে। 

বাবা হিরুর ইচ্ছে ছিল সাগর থেকে ফিরে এসে শিশু সন্তানের জন্য দুধ এবং নতুন জামা কাপড় নিয়ে আসবেন। কিন্তু আয়শাকে দেওয়া বাবার এই আদর যে শেষ আদর হবে তা কি কেউ বুঝতে পেরেছিল।

 

চার মাসের শিশু আয়শা আজ দুই বছর দুই মাস পেরিয়ে। এখন আয়শা বাবাকে ডাকছে। যখনই বাবার কথা মনে পড়ে তখনই নিজের খেয়ালেই আকাশে দিকে হাত দুটো উঁচু করে বাবাকে ডাকছে, ‘বাবা, বাবা, আব্বা, আব্বা’। বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্না শুরু করে। অবুঝ শিশু আয়শা এমন অজানা আর্তনাদে আশপাশের অনেক পরিবারকেই অবাক করছে। এই শিশু বোঝাতে চায় বাবা আসবে, নতুন জামা নিয়ে। আবার বাবার ভালোবাসা, আদর স্নেহ পাবে। বাবার আদর এখনো বুঝতে পারেনি আয়শা।  

বলছি অবুঝ শিশু আয়শার কথা। পাথরঘাটা উপজেলার সদর পাথরঘাটা ইউনিয়নের বাদুরতলা গ্রামের জেলে হিরু মিয়ার সন্তান। দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে আয়শা ছোট। বাবা হিরু মিয়া অনেক আদর করেই মেয়ের নাম রেখেছিলেন আয়শা। সেই আদরে মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনতে পারবেন না এটা ভাবতেও পারেননি হিরু।  

২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বাড়ি থেকে হিরুসহ একই গ্রাম থেকে ৮ জন জেলে সাগরে মাছ ধরতে যান। পাথরঘাটার শাহিন ফিটারের মালিকানা মাছ ধরা ট্রলারে ১৯ জন জেলে ২১ জুলাই শনিবার সকালে হঠাৎ গভীর সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে। ওই ট্রলারে থাকা ১৮ জেলে নিখোঁজ হন। কয়েকদিন পর কয়েকজন জেলে ভাগ্যক্রমে জীবিত উদ্ধার হলেও বিকৃত কয়েকজন জেলেকে গভীর সমুদ্রের একটি দ্বীপে বালুর নিচে চাপা দিয়ে আসে উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু প্রায় দুই বছর হতে চললো আজও ট্রলারসহ নিখোঁজ আট জেলে ফিরে আসেনি।  

জেলে পল্লী বাদুরতলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ আট জেলে পরিবারের আর্তনাদ। আজও পথপানে চেয়ে আছেন তারা। সন্তান হারা বাবা-মা, স্বামী হারা স্ত্রী আর পিতৃহারা সন্তানরা এখনো অপেক্ষায়...। নিখোঁজ হওয়া জেলে হিরুর কন্যা সন্তান আয়শাকে তার মা শারমিন বাবাকে ডাকতে বলায় আয়শা হাত দুটো আকাশের দিকে উঁচু করে বাবা বাবা বলে ডাকছেন। অবুঝ শিশুর বাবা ডাকার আর্তনাদ সবাইকে কাঁদিয়েছে। উপস্থিত সকলকেই কাঁদিয়েছে অবুঝ শিশু আয়শা।  

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ দুইবছর প্রতি মুহুর্তে স্বজনহারা বেদনা আর অভাব-অনটনের মধ্যইে বয়ে গেছে। এসব সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। একদিন রান্না করলে দুদিনেও রান্না হয় না। অভাবের সংসারে আর শিশুদের মুখে অন্ন তুলে দিতে অন্যের বাড়িতে ঝি-এর কাজসহ নানা কাজ করে যা পায় তা দিয়েই সংসার চালায়। মুগডালের মৌসুমে মুগডাল তুলে দৈনিক এক থেকে দেড়শ টাকা আয় হয়।  

আয়শার মা শারমিন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, সাগরে যাওয়ার সময় আয়শাকে দুই গালে চুমা দিয়া, মাইয়্যাডারে ঠিকমতো দেখতে কইয়া যায়। তহনও বুঝিনাই মোর স্বামী আর ফিইরা আইবে না। মোর মাইয়াডা বাবারে আর দেখতে পারবে না।  

ঈদের কথা বললেই কেঁদে উঠে শারমিন বাংলানিউজকে বলেন, মোগো আর ঈদ। ঠিকমতো খাইতে পারিনা, মাইয়াডারে ক্যামনে জামা কাপড় দিমু।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।