ঢাকা, শনিবার, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

দক্ষ জেলে হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ওরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৬
 দক্ষ জেলে হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ওরা

রামদাসপুর (ভোলা) থেকে: মেঘনার কূল ঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এক বিপন্ন জনপদ। হাজারো জেলের বসবাস এখানে।

পৈত্রিক পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন সাহসি জেলেরা।

এ জনপদে শিক্ষার আলো পৌঁছালেও শিশুদের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। আর লেখাপড়া করানোর টাকা নাই বলে জেলেরাও তাদের শিশুদের পড়াশুনা করাতে চান না। তাই এ জনপদের শিশুরা শিক্ষিত না যেন দক্ষ জেলে হওয়ার স্বপ্নেই বিভোর।

দক্ষ জেলে হওয়ার স্বপ্নে বিভোর শিশুরা সারাদিন তীরের কাছে খালি জায়গায় নৌকা তৈরি করে খেলাধূলা করছে।

সম্প্রতি এমন চিত্রই দেখা গেছে ভোলা সদরের মেঘনার তীর ঘেঁষা এক বিপন্ন জনপদ রামদাসপুরে। নদী ভাঙনে দিশেহারা ওই জনপদে এক সময় সব থাকলেও এখন সম্বলহারা মানুষের বসতি ছাড়া কিছুই নেই। সেখানকার এক তৃতীয়াংশ বসতি জেলে। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।

বই খাতা, আর খেলাধূলা নিয়ে শিশুদের মেতে ওঠার কথা থাকলেও যেন রামদাসপুরের চিত্র ভিন্ন। এখানকার শিশুরা খেলা করছে নৌকা নিয়ে। নিজেদের তৈরি নৌকা ও ট্রলার ভাসিয়ে দিচ্ছে নদীতে। আধুনিক সভ্যতা থেকে পিছিয়ে পড়া এ জনপদে অভিভাবকদের অসচেতনতা ও নদী ভাঙনের কারণেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছেনা শিশুরা।

কথা হয় জেলে শিশু আরিফের সঙ্গে। সে বলে, স্কুল আছে কিন্তু পড়ালেখার খরচ জোগাড় করতে পারে না বাবা-মা, পড়ালেখা করুম কীভাবে? আমার বাবা নদীতে মাছ ধরে, তার বাবাও মাছ ধরতো, কয়েকদিন পরে আমিও নদীতে মাছ শিকার করবো, এছাড়া আর কি করবো ?

আরেক জেলে শিশু শরীফ জানায়, নৌকা তৈরি করেছি, আমাদের খেলাধূলার অন্য কোন কিছু নেই, তাই আমরা নৌকা নিয়েই খেলা করি। আমাদের মতো বয়সি অনেকেই তাদের বাবার সঙ্গে মাছ শিকারে নদীতে যায়, মাছ ধরতে ভালো লাগে।

একই কথা জানালো নৌকা নিয়ে খেলাধূলায় মেতে উঠা শিশু বশির, সিরাজ, মিলু, নোমান ও সাহাবুদ্দিন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও যেন এসব শিশুরা স্কুলে না গিয়ে নৌকা নিয়ে খেলাধূলা করতেই বেশি পছন্দ করে।   সন্তানদের পড়ালেখা করানোর প্রতি আগ্রহ নেই তাদের বাবা-মায়েরও।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ভোলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের রামদাসপুর। প্রায় ২শ’ বছরের পুরনো এ জনপদে স্কুল, মাদ্রাসা, ক্লিনিক, দোকানপাঠ, মৎস্য ঘাট, চিংড়ি ঘের ছিলো। ব্যবসায়ীভাবে এক জমজমাট এলাকা ছিলো রামদাসপুর।

কিন্তু আগ্রাসী মেঘনায় সব বিলীন হয়ে গেছে। এখনও ২/৩টি বিদ্যালয় থাকলেও যেন দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। কারণ, ভিটে হারা মানুষ স্থানচ্যুত হয়ে ঠিকানা পাল্টাচ্ছেন। এখন আর চোখে পড়ে না সেই কোলাহলমূখর হাট-বাজার আর চিংড়ি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানালেন, চিংড়ির জন্য বিখ্যাত ছিলো রামদাসপুর। প্রায় ৫ হাজার ঘের ছিলো এখানে। খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে চিংড়ি ব্যবসায়ীরা এখানে এসে চিংড়ি কিনতেন। চিংড়ি ঘের তৈরি করে হাজারো মানুষের আত্মকর্মসংস্থান হয়েছিলো এখানে।   কিন্তু এখন আর নেই সেই চিংড়ি ঘের, যা ২/৪টি আছে তাও হয়তো কয়েকদিন পর বিলীন হয়ে যাবে।

রামদাসপুর ঘুরে কথা হয় কয়েকজন জেলের সঙ্গে। তারা বলেন, মাছ ধরা আমাদের পৈত্রিক পেশা। আমরা এ পেশাকে ধরে রেখেছি, এখন আমাদের সন্তানরাও সেই পেশা ধরে রাখবে।

তারা আরো বলেন, ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা করানোর টাকা জোগাড় করতে পারি না তাই নদীর কাজ শিখাচ্ছি। ছোটবেলা থেকেই কাজ শিখলে বড় হয়ে একজন দক্ষ জেলে হতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৬
আরএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।