ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের জীবন

অপরিণত বয়সেই মা

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
অপরিণত বয়সেই মা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হাজারো সংকটে ভরা উপকূলের শৈশব-কৈশোর। এখানকার জনপদে প্রত্যেকের, বিশেষ করে মেয়েদের শৈশব-কৈশোরের অপরিহার্য বিষয় অপুষ্টি আর অশিক্ষা।

কাঁধে বইয়ের ব্যাগের বদলে বয়ে বইতে হয় সংসারের ঘানি। অপরিণত বয়সেই হতে হয় মা। জাতীয় কন্যা শিশু দিবসে উপকূলের প্রান্তিক জনপদের মেয়ে শিশুদের নিয়ে পাথরঘাটা উপজেলা করেসপন্ডেন্ট শফিকুল ইসলাম খোকনের তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের  প্রথম পর্ব:

উপকূলের প্রান্তিক জনপদ ঘুরে: নিজে সন্তানের মা, তবু মাঝে-মধ্যেই স্বর্ণার (১৫) ওপর ভর করে শিশুর সারল্য, কৈশোরের উচ্ছলতা। মনের মধ্যে তার গুমরে মরে সমবয়সীদের মতো দুরন্তপনায় মেতে উঠতে। কিন্তু বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় তার সংসার ও সমাজ।

শুধু স্বর্ণাই নয়, তার মতো অবস্থা উপকূলের প্রায় প্রতিটি পরিবারের শিশু-কিশোরীদের।

সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদীঘেঁষা উপকূলের প্রান্তিক জনপদে স্বর্ণার মতো কিশোরীদের যে বয়সে পুতুল খেলার কথা, স্কুলে যাবার কথা। সেই বয়সে বসতে হচ্ছে বিয়ের পিঁড়িতে। এমনকি এ বয়সে মেয়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষার প্রয়োজন সম্পর্কে জানেন না তাদের অভিভাবকরাও। এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে চলছে একই নিয়ম, ঘটছেও একই ফল।

কিশোরী স্বর্ণা পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামের বাদশা জোমাদ্দারের একমাত্র মেয়ে। আর সবার মতো স্কুলে যেতে শুরু করে সেও। সমাজের প্রচলিত সংস্কার মেনে পঞ্চম শ্রেণি ‍না পেরুতেই তার বিয়ে ঠিক হয়। সে যাত্রা স্থানীয় এনজিও ও সংবাদকর্মীদের কল্যাণে ভেস্তে যায় তার বাল্যবিয়ের আয়োজন।

তবে কিছুদিন পরে গোপনে তাকে পাশের উপজেলা মঠবাড়িয়ার বাসিন্দা আ. ছোমেদ আকনের ছেলে শাহিনের সঙ্গে বিয়ে দেয় পরিবার।

বিয়ের বয়স না হলেও অনেকটা জোর করেই বিয়ে দেওয়া হয় স্বর্ণাকে। সে এখন এক সন্তানের মা। কিন্তু সংসারের গুরুত্ব উপলদ্ধি কিংবা পরিচালনার সামর্থ্য কোনোটাই তার তৈরি হয়নি। এমনকি নিজের ও সন্তানের ‍পুষ্টি বিষয়েও জানে না স্বর্ণা।
Swarna_pathargatha
এদিকে, সুখের কথা চিন্তা করে অল্প বয়সে বাবা-মা তাকে বিয়ে দিলেও ভাগ্যে তার সুখ জোটেনি স্বর্ণার। কিছুদিন শ্বশুর বাড়িতে থাকার পর গর্ভাবস্থায় স্বর্ণাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় স্বামী শাহিন। এর কয়েক মাস পর মেয়ের জন্ম দেয় কিশোরী স্বর্ণা। কিন্তু এভাবে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার কোনো খোঁজ রাখে না।

স্বর্ণার মা শাহেদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে জানান, তার মেয়েকে সিজার করে সন্তান প্রসব করা হয়েছে। এজন্য ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা খরচ করেছেন। কিন্ত মেয়ে জামাই কোনো খোঁজ রাখেনা। তারা গরিব মানুষ, সাগরে মাছ ধরে সংসার চলে। এখন মেয়ে ও নাতনীকে নিয়ে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

বাল্যবিয়ে নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের পাথরঘাটা উপজেলা ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাল্যবিয়ে হওয়ার কারণে যখন একটি মেয়ের শরীরের গঠন পরিবর্তন হয় তখনই স্বামী অন্যমনষ্ক হয়ে যায়। এতে করে বিয়ে বিচ্ছেদ বেশি হয়ে থাকে।  

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।