ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৪
প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মুছাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী ঘুরে এসে: বছরের পর বছর মানুষের অপেক্ষা, কবে শেষ হবে বাঁধ নির্মাণ, কবে জেগে উঠবে চর, কবেই বা ফিরে আসবে চাষির সেই সুদিন।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ আর ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার হাজারো মানুষের এই অপেক্ষার প্রহর আর কাটে না।



এপারে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর আর ওপারে ফেনীর সোনাগাজীর চর দরবেশ ইউনিয়ন। মাঝখানে বয়ে চলেছে বিক্ষুব্ধ ফেনী নদী। এই নদী প্রতি বছর ভাসিয়ে নেয় বাড়ি-ঘর, ফসলি মাঠ। বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র ছোটে।

নদীর এই বিক্ষুব্ধতা কমিয়ে মানুষের জীবিকায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতেই এখানে নেওয়া হয় দীর্ঘমেয়াদী এক প্রকল্প।

প্রকল্পের অধীনে কাজ হচ্ছে ধাপে ধাপে। এখন ফেনী নদীর ওপর দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়ার কাজ চলছে। এর আগে স্লুইজগেট, ডাইভারশন চ্যানেলসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০০৩ সালে চার দলীয় জোট সরকারের আমলে প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ উদ্বোধন করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২০১২ সালে দ্বিতীয় ধাপের কাজ উদ্বোধন করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ ধাপ আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। নানামুখী জটিলতায় এ কাজ বারবার পিছিয়ে গেছে। বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ বারবার কাজ সমাপ্তির তারিখ নির্ধারণ করলেও আসলে কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে কেউই ঠিকভাবে বলতে পারছেন না।

এদিকে প্রকল্পের অধীনে আগে সম্পন্ন হওয়া ডাইভারশন চ্যানেল এরই মধ্যে ভরাট হতে শুরু করেছে। চর পড়ে স্লুইজগেট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হলেও এলাকার মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা সেই দিনের। তারা আশায় বুক বাধছেন, কবে ফিরে পাবেন হারানো সম্পদ।

মুছাপুর রেগুলেটর ঘাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, নদী বান্ধার কাজ শেষ হইলে আমাগো জমি জাইগা উঠবো। আবার ফসল ফলাইতে পারবো। কিন্তু কাজ তো শুধু চলছেই। শেষ হচ্ছে না।

মুছাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, মাত্র দুই বছরে তার প্রায় ২০ একর জমি নদীতে ডুবেছে। এখন সামান্য পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ আর বাইরে কিছু কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সম্পদ হারিয়ে জীবন চলছে চরম সংকটে।

অন্য অনেকের মতো আনোয়ার হোসেনও আশা করছেন, বাঁধ হলে হারানো সম্পদ ফিরে পাবেন তিনি।

প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় পরিবেশের বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানান এলাকাবাসী। তারা বলেন, ফেনী নদীর এই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগে রেগুলেটর এলাকায় স্লুইজগেট ও ডাইভারশন চ্যানেলসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সেগুলো এখন অচল হয়ে যেতে বসেছে। ডাইভারশন চ্যানেল খননের সময় এসেছে।

ফেনী নদীতে বাঁধ নির্মাণের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে বাংলানিউজ কথা বলেছে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. মাসুদ ভূঁইয়ার সঙ্গে।

তিনি জানান, কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজ করতে হচ্ছে। এখানকার সব মালামাল আনতে হচ্ছে ঢাকা থেকে। এক্ষেত্রে রয়েছে পরিবহন সমস্যা। অন্যদিকে রয়েছে বৈরি প্রকৃতির প্রভাব।

তবে এলাকার মানুষ বলছেন, এভাবে বহু আশ্বাস তারা পেয়েছেন। আর সেই আশ্বাসের ভিত্তিতে তারাও আশায় বুক বাধছেন। কিন্তু আশ্বাস থেকে গেছে আশ্বাসেই।

সূত্র বলছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিক্ষুব্ধ ফেনী নদীকে নিস্ক্রিয় করে ফেলা হবে। এর ফলে ভাঙন রোধ হবে, আশপাশের এলাকায় চর জেগে উঠবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি চাষ হবে। জমিতে লবণ পানি ঢুকতে পারবে না। মাছের চাষ হবে। রবিশস্য আবাদ হবে। এলাকার মানুষের জীবনধারা বদলে যাবে। কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা এবং ফেনীর সোনাগাজীর বিরাট এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।

সরেজমিনে ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপকালে বাংলানিউজ জানতে পারে, প্রায় ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফেনী নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানীগঞ্জ, ফেনী, সোনাগাজী, দাগনভূঁইয়া এলাকার মানুষ।

প্রকল্পের আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দেখা মেলে যাদের অনেকেই ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে পথে বসেছেন। বাঁধের পাশে ছোট্ট ঝুঁপড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন। অথচ এই মানুষগুলো এক সময় অনেক সম্পদের মালিক ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।