ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বাগেরহাটে আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি, ভেসে ঘেছে ঘের-পুকুর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২
বাগেরহাটে আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি, ভেসে ঘেছে ঘের-পুকুর

বাগেরহাট: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্ন চাপের প্রভাবে গত তিনদিন নিরবিচ্ছিন্ন বৃষ্টি হচ্ছে বাগেরহাটে। সেই সঙ্গে পূর্ণিমার জোয়ারে স্বাভাবিকের থেকে ৩-৪ ফুট পানি বেড়েছে।

জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার অন্তত আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে কয়েশ মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি জমে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। রান্নাও বন্ধ রয়েছে কিছু কিছু পরিবারে। ঘেরে পার ও খেতে থাকা কিছু সবজির ক্ষতি হলে, বৃষ্টিতে আমন ধানের উপকার হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা এলাকার পিচের রাস্তা উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকতে দেখা যায়। ভৈরব নদীর পানিতে মাঝিডাঙ্গা, পোলঘাটসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাটির রাস্তা ধসে গেছে। এসব এলাকার ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে পানিতে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারুইখালি, বহরবুনিয়া, পঞ্চকরণ, নিশানবাড়িয়া জিউধরা, খাউলিয়া, চিংড়াখালি, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের অন্তত দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। শরণখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন।

এছাড়া মোংলা ও রামপাল উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।

এদিকে, তৃতীয় দিনের মতো জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে সুন্দরবনের বিস্তৃীর্ণ এলাকা ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র প্লাবিত হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, তিন দিন ধরে জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের প্রধান প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পানি বেড়েছে। কমরজলে পানির উচ্চতা ছিল চার ফুট। সাম্প্রতিক সময়ে নদীতে যে হারে পানি বাড়ছে তাতে সুন্দরবনের প্রাণীকুল হুমকির মুখে পড়ছে। বনের বাঘ, শুকর, হরিণ, বানর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এই প্রাণীকুল রক্ষায় সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন এই বন কর্মকর্তা।

কৃষি সম্প্রসারণ অঅধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিজুর রহমান বলেন, গত দুই দিনে জেলায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে ফকিরহাট উপজেলায় একদিনে সর্বোচ্চ ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমে বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে মৌসুমি সবজি খেত ডুবে গেছে। দ্রুত এই পানি নেমে না গেলে সবজি চাষিদের বেশ ক্ষতি হবে। তবে এই বৃষ্টিতে রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে চলতি রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে। জেলায় ইতোমধ্যে ৮৭ ভাগ জমিতে আমন ধান রোপন শেষ হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন বলেন, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার অন্তত দুই হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসহায় মানুষের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। পানিবন্দি লোকজনকে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোরেলগঞ্জ পৌরসভার বেশকিছু এলাকা উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরে নদীতীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হবে। জোয়ারের পানি ওঠা রোধ করতে ৯৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলার বড় একটা অংশ নদীর পানি থেকে মুক্তি পাবে। এছাড়া বাগেরহাট সদরের জোয়ারের পানি ঠেকাতে জাইকার অর্থায়নে নদীতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, বেশকিছু এলাকায় ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে যাওয়ার খবর রয়েছে। উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের নির্দেষ দেওয়া হয়েছে। নিরুপণ শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জেলার বেশকিছু পরিবার সাময়িকভাবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও)নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ  সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।