ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

টানা তাপদাহে পুড়ছে রাজশাহী, ঝরছে আমের গুটি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
টানা তাপদাহে পুড়ছে রাজশাহী, ঝরছে আমের গুটি খরায় আমের গুটি শুকিয়ে যাচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহীতে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকেই এবার তাপদাহ শুরু হয়েছে। কখনো মৃদু কখনো বা মাঝারি তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর ওপর দিয়ে।

অব্যাহত তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজশাহীর জনজীবন। বিপন্ন হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। সবুজ প্রকৃতি যেন তামাটে হয়ে উঠেছে। একটু বৃষ্টির জন্য চারিদিকে হাহাকার পড়ে গেছে।  

সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল বৃষ্টি হয়েছে। তবে, তার পরিমাণ ছিল খুবই কম। ফলে বৃষ্টিহীন রাজশাহীতে খরার কবলে পড়েছে গাছের আম। মাত্রাতিরিক্ত তাপের কারণে গাছে কেবলই গুটি বাঁধা আম ঝরে পড়তে শুরু করেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ফলনেও বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন রাজশাহীর আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।  তাপমাত্রা বাড়ায় কেবল আমের গুটিই নয় ঝরছে লিচুর গুটিও। তবে তাপদাহের কারণে এই আম-লিচুর এই গুটি ঝরাকে স্বাভাবিক বলছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র জানান, এখন রাজশাহীর গড় তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। সর্বশেষে গত ৬ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা খুব একটা কামার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে খরার কবলে পড়ে গাছ থেকে মাটিতে পড়ছে আমের গুটি। বাগান মালিকরা বলছেন, বেশ কয়েকদিন থেকে আমের গুটি ঝরছে। তাই সবাই গাছে পানি দিচ্ছেন। তবে, এভাবে গুটি ঝরলে তারা চলতি মৌসুমে লোকসানের মুখে পড়বেন।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার আম চাষি আলী হোসেন জানান, টানা তাপদাহ চলছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। তারা চেষ্টা করছেন পানি দিয়ে গুটি ঝরে পড়া রোধ করার। এ বছর অনেক গাছে আমের মুকুল আসেনি। তার পরেও যে মুকুল এসেছে; সেগুলো ঝরে যাচ্ছে। সবমিলে বিষয়টি নিয়ে আমরা শঙ্কিত। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার স্থানীয় আম ব্যবসায়ী শহীদুল আলম। তিনি জানান, দুইটি বাগান পাতা অবস্থায় কিনে ছিলেন। কিন্তু পরে মুকুল কম এসেছে। যে মুকুল এসেছে সেখান থেকে অনেক মুকুল ঝরে যাচ্ছে। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেছেন সমস্যা নেই। কম মুকুল থাকলেও ফলন ভালো হবে। রাজশাহী খরা প্রবণ এলাকা। এখানে বৃষ্টি কম হয়। তাই এই সময় মুকুল ঝরা স্বাভাবিক।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন জানান, এ সময়ে গুটি ঝরা স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণত চারটি কারণে আমের গুটি ঝরে। এর মধ্যে পুষ্টির অভাব, পোকার আক্রমণ, রোগের আক্রমণ ও ধারণক্ষমতার বেশি আমের গুটি আসলে ঝরার সম্ভাবনা থাকে। এখন আম ও লিচুর গাছে শতভাগ মুকুল থেকে গুটি হয়ে গেছে। কিছু ঝরলেও বড় ধরনের ঝড়-বৃষ্টি না হলে ফলনে সমস্যা হবে না। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীতে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ মেট্রিক টন ফলন হয়। অর্থাৎ ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন আম হয়। গতবার এই পরিমাণ আমই উৎপাদন হয়েছে।  

আর গতবারের ফলনই চলতি মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা হয়। সেই হিসাবে রাজশাহীতে এবার ২ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন ফলন ভালো হলে এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে আর কম হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। এখন বৈশাখে ঝড়-ঝঞ্ঝা বেশি না হলে এবার রাজশাহীতে ৮শ কোটি টাকার আমের ব্যবসা হবে। আর তাপপ্রবাহের কারণে গাছ থেকে আমের গুটি ঝরা রোধে তারা স্থানীয় চাষিদের আমের গাছে পানি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।