ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

হঠাৎ আসা দুর্যোগ মোকাবিলায় পিছিয়ে আমরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
হঠাৎ আসা দুর্যোগ মোকাবিলায় পিছিয়ে আমরা জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: গত এক যুগে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ অনেকটাই উন্নতি করেছে। তবে আচমকা বড় কোনো দুর্যোগ এলে তা মোকাবিলার প্রস্তুতিতে আমরা এখনো পিছিয়ে।

এ ক্ষেত্রটিতে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে আরো মনোযোগ দিতে হবে।  

মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিকেলে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এমনটা বলেছেন।  

কালের কণ্ঠ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইডাব্লিউএমজিএল কনফারেন্স হলে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।  

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, পানিসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক আতিকুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা প্রধান, শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক রাবেয়া বেগম, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) এর উপ-পরিচালক ব্রজ গোপাল সাহা, অ্যাকশন এইডের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক এ এম নাছির উদ্দিন, ইউএনডিপির প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট আরিফ আব্দুল্লাহ খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক সুব্রত পাল চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপসচিব ড. হাবিব উল্লাহ বাহার, নাহাবের কোঅর্ডিনেটর রওশন আলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব হিউম্যানটেরিয়ান অ্যাক্টর বাংলাদেশের সভাপতি এবং আহছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক এম এহছানুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ আব্দুল লতিফ খান।  

গোলটেবিল বৈঠকে পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, গেল বছর অক্টোবর মাসে তিস্তাতে একদিন এতো পরিমাণ পানি বেড়েছিল যেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো নদীতে ওই গতিতে পানি বাড়ে না। একঘণ্টার জন্য আমরা বেঁচে গেছি। আর একঘণ্টা যদি পানি বাড়তে থাকতো তাহলে লালমনিরহাটের ওই অংশ ভেসে চলে যেতো। এই যে হঠাৎ করে দুর্যোগ। এসব মোকাবিলার জন্য স্থানীয় সংগঠন এবং মানুষকে এক করতে হবে। ঢাকা থেকে গিয়ে কাজ করতে করতে অঘটন ঘটে যাচ্ছে। রংপুরে ২০২০ সালে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। যেখানে একদিনে ৪৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এই বছর ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা শহরে যদি এমনটা হতো তবে ঢাকা শহরের ৮০% পানির নিচে থাকতো। এতোদিন যে ধরণের দুর্যোগ আমরা দেখছি, সেটি বদলে যাবে। নতুন ধরনের দুর্যোগ আসবে।

আইনুন নিশাত বলেন, আবার দেখা যায় হঠাৎ বৃষ্টি। আমরা ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া দেখি। কিন্তু তিন ঘণ্টায় যে অঘটন ঘটে যেতে পারে সেটি ভাবি না। তাই প্রথম দাবি থাকবে ভবিষ্যতের দুর্যোগ মোকাবিলায় গতিশীলতা আনতে গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের যে হঠাৎ ওলোট-পালট দেখা যাচ্ছে সেটি হবে। এবং এটি বাংলাদেশের একেক জায়গায় একেক রকম হবে। শহর এবং গ্রাম কেন্দ্রিক আলাদা হতে পারে। অপ্রত্যাশিত যে দুর্যোগগুলো আসছে। যেমন হঠাৎ বৃষ্টি, বৃষ্টির সময় না হওয়া ইত্যাদি। আগামী সময়ের দুর্যোগ যে বিশ বছর অপেক্ষা করবে সেটিও কিন্তু বলা যাচ্ছে না। সামনের বছরও হতে পারে। তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এখন থেকে আগামী ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে এমন মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হবে যা আজও হয়নি। বাংলাদেশে ক্যাটাগরি-৫ এর ঘূর্ণিঝড় এখনো হয়নি। আইলা সিডর ১২০, ১৩০, ১৪০ এগুলো ক্যাটাগরি এক দুই। ক্যাটাগরি পাঁচ মানে ২৫০ গতির ঘণ্টায়। আমাদের দেশে ১৯৯১ সালের যে বড় ঘূর্ণিঝড় রেকর্ড আছে সেটি ধারণা করা হয় ২৫০ কিলোমিটার। এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে ভাবতে হবে।  

হঠাৎ আসা দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, আইনুন নিশাতের কথা শুনে তো আমি খানিকটা ভড়কে গেলাম। আমরা যে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করেছি সেগুলো ক্যাটাগরি-৫ এর ঝড়ে টিকবে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখব। আর আগামীতে যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো হবে সেগুলোও যেন ক্যাটাগরি-৫ এর ঘূর্ণিঝড় সহনশীল হয় সে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখব।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, দুর্যোগ বন্ধ করা যাবে না। প্রকৃতির নিয়মে দুর্যোগ আসবেই। সেক্ষেত্রে এ দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়লে দুর্যোগ বাড়বে, আর উষ্ণতা কমলে দুর্যোগ কমবে। আমরা গ্রিন এনার্জি, ইলেকট্রিক যানবাহন ব্যবহার করে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে পারি। নদী, খাল, বন রক্ষা করা, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার মধ্যে দিয়ে আমরা বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আশার কথা হলো আমাদের দেশে ইলেকট্রিক যানবাহনের কারখানা স্থাপন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মোট যানবাহনের ৩০ শতাংশ ইলেকট্রিক যান হবে।
এনামুর রহমান বলেন, দুর্যোগে মানুষ ও গবাদিপশুর ঝুঁকি কমাতে আমরা এখন বিশ্বে রোল মডেল। অবকাঠামোসহ অন্য বিষয়গুলোতে আমরা উন্নতির পথে রয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা অনেক এগিয়ে যাব। বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে যদি আমরা অর্থ নাও পাই নিজেদের অর্থেই ধাপে ধাপে আমরা দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতির কাজ করব।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায়ও আমরা একটা জায়গায় এসেছি। ৭ দশমিক ৫ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণে ‘বিল্ডিং কোড’ করা হয়েছে। এটা মেনেই নতুন ভবনগুলো তৈরি করতে হবে। পুরনো ভবনগুলো পরিদর্শনের মধ্যে দিয়ে সেগুলোর প্রকৃত অবস্থা যাচাই করা হবে। এভাবে আমরা ভূমিকম্প সহনশীল শহর তৈরি করব। এ কাজে জাইকা অর্থায়ন করতে রাজি হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বলেন, সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আমরা যেহেতু প্রযুক্তির যুগে বসবাস করছি, এটার দুটি দিক রয়েছে একটি সফটওয়্যার, আরেকটি হার্ডওয়্যার। দুইটি বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করছি, প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করছি, নীতি-আইন ও বিধি, কৌশলপত্র প্রস্তুত করছি। আমরা দুর্যোগ সহনীয় ঘর প্রস্তুত করছি, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র করছি ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র করছি। ’

শরিয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (এসডিএস) নির্বাহী পরিচালক রাবেয়া বেগম বলেন, স্থানীয় যে অভিজ্ঞতাগুলো আছে সেগুলো নিয়ে আমরা যখন কোনো নতুন পলিসি করবো বা পলিসি পরিবর্তন করবো সেখানে যদি স্থানীয় মানুষ কী চায়, তারা এই সমস্যাগুলোকে কীভাবে ভাবছেন তাদের অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে যদি আমরা আগাই তাহলে বিষয়গুলো বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা যারা আছেন তারা অনেকগুলো কমিটিতে আছেন। কিন্তু সেই কমিটিগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কাজ করার আরো সুযোগ রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক বলেন, আমাদের ৬৪ জেলা অফিস এবং ৪৯৫টি উপজেলা অফিসের মাধ্যমে আমাদের জনবলকে প্রশিক্ষিত করা। আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্টেকহোল্ডার এনজিও, আইএনজিও, ইউএনঅর্গানাইজেশনসহ যারা রয়েছে তাদের সকলের সহযোগিতা পেলে দুর্যোগ সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে পারবো। আমাদের অনেক কমিটি আছে। একেকটি জেলা কমিটিতে ৫৬ জন, উপজেলা কমিটিতে ৪২জন সদস্য রয়েছে। উপজেলা কমিটিতে সদস্য সংখ্যা কম বেশি নির্ভর করে ইউনিয়নের সংখ্যার উপর। তাদেরকে একত্রিত করে সভা করা সম্ভব হয় না।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক শামীমা প্রধান বলেন, ‘দুর্যোগ প্রস্তুতির গতিশীলতার আনার জন্য আমাদের শুধু মাত্র জাতীয় পর্যায়ের প্রস্তুতি সেটা না। আমাদের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে ঘর থেকে। আমার নিজেকে ইমপাওয়ার করতে হবে, আমাকে জানতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে হবে। একটি মেয়ে ও ছেলের সমানভাবে সবার জন্য কাজের ভার থাকবে। ’

দুর্যোগ মোকাবিলায় ঢাকা ঘোষণার আলোকে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদানের উপরে গুরুত্ব দেন সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) এর উপপরিচালক ব্রজ গোপাল সাহা। তিনি বলেন, ঢাকা ঘোষণার যে ট্রেনিং ম্যানুয়াল আছে সেটা ধরেই দেশব্যাপী সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। দুর্যোগের সময়ে একজন স্বাভাবিক মানুষ ও একজন প্রতিবন্ধীকে উদ্ধার তৎপরতা ভিন্ন। যেমন- অনেক প্রতিবন্ধী আছে যারা কোনো বিশেষ রং দেখে ভয় পেয়ে যেতে পারে। ফলে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রতিবন্ধীদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্যও উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কিউ.এম. মাহবুব বলেন, ‘আমি ভূগোলের শিক্ষার্থী ছিলাম। তাই শিখেছি যেকোনো ভৌগলীক সমস্যার সমাধানের সূত্র সেখানেই আছে। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশর দুর্যোগ মোকাবিলার সূত্র এই দেশের ভৌগলীকসীমার মধ্যেই আছে। ঢাকার মানুষের চিকিৎসার জন্য শাহবাগ এবং এর আশপাশে উন্নতমানের তিনটি হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু বড় দুর্যোগের ক্ষেত্রে সেটি যথেষ্ট  কিনা ভাবতে হবে। ঢাকার চারপাশের যে নদী আছে নদীগুলোকে যদি সঠিক ব্যবহার করা যায় তাহলে বড় ধরণের দুর্যোগে কাজ হতে পারে। নদী পথ দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসা সম্ভব। তাই ঢাকার অদূরে নদীতে হাসপাতাল নির্মাণ করা যেতে পারে। বড় বড় লঞ্চ যদি নদীতে চলতে পারে হাসপাতাল চলতে পারবে। এটি বিশ্বের অনেক দেশে হচ্ছে। তাহলে দুর্যোগে মানুষের চিকিৎসা পেতে সহজ হবে। ’

নাহাব ও নির্বাহী পরিচালক ঢাকা আহছানিয়া মিশন এর সভাপতি ড. এম এহ্ছানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রস্তুতি বিষয়টি একটি ঐতিহ্যগতভাবে আমরা অনেক উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছি। কারণ দেশের জনগণ দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করে বলে দুর্যোগকালীন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে এগিয়ে। প্রতিবেশী, স্থানীয় সরকার, স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনগুলো ছাড়াও ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসেন। আমরা দেখেছি সাভারে রানা প্লাজায় দুর্যোগের ঘটনা প্রাথমিকভাবে সবাই মিলে আমরা কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। স্থানীয় পর্যায়ে পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি আমাদের অত্যন্ত শক্ত। ’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ আব্দুল লতিফ খান বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে জাতীয় ও স্থানীয় সংগঠনের ভূমিকা রাখা জরুরি। বিদেশী কনসাল্টেন্টের পাশাপাশি স্থানীয় সংগঠনের কাজে লাগাতে হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে স্থানীয় পর্যায়ের সংগঠনগুলোই এগিয়ে এসেছিল। যার কারণে দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা সকলে এক। দুর্যোগ প্রস্তুতিতে সকলের অংশগ্রহণ আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক হবে। এটাই প্রত্যাশা।

ইউএনডিপি-এর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট আরিফ আব্দুল্লাহ খান বলেন, বর্তমানে দুর্যোগে অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টি সামনে আসছে। যেহেতু আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছি। আমাদের যে অর্জন সেটাকে যদি ধরে রাখতে হয় তাহলে দুর্যোগের পর সঠিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। দেখা যায়, দুর্যোগে বাঁধ ভাঙ্গে, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি নষ্ট হয়। এখন যদি আগে বাঁধ না ঠিক করে তাহলে রাস্তা ঠিক হবে না। আবার রাস্তা ঠিক না হলে অবকাঠামোগতভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে না। যেহেতু বিভিন্ন মন্ত্রণালয়গুলো আলাদা আলাদা কাজ করে তাই বড় কোনো দুর্যোগের পরে একটি পরিপূর্ণ ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করা যাবে না। আসলে আমাদের এখন প্রস্তুতি নিতে হবে দুর্যোগের পর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। দুর্যোগের পরে কত দ্রুত রিকভারি করা যায় সেটি বড় বিষয় এবং এটার জন্য প্রস্তুতি খুব জরুরি। একটি বড় দুর্যোগে যত দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো যাবে তত তাড়াতাড়ি আমরা এগিয়ে যাবো।  

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক এ এম নাছির উদ্দিন বলেন, দুর্যোগ উত্তরণের জায়গাটিতে এখন নারীদের অংশগ্রহণও পুরুষের সমান। সামনে সারা দেশে ওয়ার্ড ও শহরে ৪ লাখ ২৫ হাজার কমিটি করা হচ্ছে। এখানে প্রতি কমিটিতে যদি দুজন করে নারী সদস্যকেও ঢুকানো যায় তাহলে তৃণমূল থেকে সবমিলিয়ে ১০ লাখ নতুন নেতৃত্ব দেওয়া হাত তৈরি হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সেই নেতৃত্ব তৈরি করার সুযোগ রয়েছে। দেশের আর কোন মন্ত্রণালয়ের এতোটা তৃণমূল সম্পৃক্ততা আছে বলে আমার জানা নেই।  

কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট পর্যায়গুলোতে মানবিক ও সহনশীল মানুষ প্রয়োজন। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে কাজগুলোর সুন্দর বাস্তবায়ন সম্ভব। দুর্যোগ মোকাবিলায় তথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য পেলে দুর্যোগ মোকাবিলায় গণমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৭ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
এসই/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।