ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

পানি সংকটে সিলেটের ‘নীলনদ’ খ্যাত সারি নদী!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১
পানি সংকটে সিলেটের ‘নীলনদ’ খ্যাত সারি নদী! মনোমুগ্ধকর সারি নদীর দৃশ্য। ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: সিলেটের ‘নীলনদ’ খ্যাত নদী সারি। সবুজ প্রকৃতি নদীর দুই তীর সাজিয়ে রেখেছে যে স্থান, তার নাম লালাখাল।

লালাখালে ভূ-প্রকৃতি যেনো সৃষ্টির আপন খেয়ালে সাজানো। তাইতো রূপের রানি জৈন্তেশ্বরীর এলাকায় লালখালকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে পর্যটন ও হোটেল-মোটেল।  

সিলেটে ঘুরতে যাওয়া মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু সারির স্বচ্ছ নীল জলের লালাখাল। উৎপত্তিস্থল থেকে স্বচ্ছ জল লালাখালে এসে ধারণ করেছে নীল বর্ণ। আর এই স্থানকে ঘিরেই পর্যটকদের আকর্ষণ। বিশেষ করে শীত মৌসুমে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে লালাখালে সারি নদীর রূপ লাবণ্য।  

কিন্তু পর্যটকদের কাছে সমাদৃত লালাখালে ‘নীলনদ’ খ্যাত সারি এখন পানি সংকটে রয়েছে। সারি নদীর বুকে জেগেছে চর। নাব্যতা হারিয়ে নদীর বুকে এখন নৌকাও চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ভরা মৌসুমেও পর্যটকরা লালাখালের আকর্ষণ থেকে বিমুখ হচ্ছেন।  

সরেজমিন দেখা গেছে, স্বচ্ছ নীল জলের সারি নদীর লালাখাল এলাকায় নাব্যতা হারিয়ে চর জেগেছে। তাছাড়া সারি সেতু সম্পন্নের পর পুরোনো সেতু ভেঙে দিলেও নদী গর্ভে স্থাপনা রয়ে গেছে। এতে করে নদী ভরাট হয়ে গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। স্থাপনা সরিয়ে নিতে পারিবেশবাদিরা একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ এর প্রভাবে নদী শাসন হচ্ছে।  
সরেজমিন দেখা গেছে, লালাখালে নাব্যতা হারানোয় নদীতে চর জেগেছে। কিছু নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে নৌকার আসা যাওয়া। সেক্ষেত্রে নদীতেও বালুবোঝাই নৌকা আটকে গিয়ে নৌ-যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। নদী ভরাট হওয়াতে প্রতিবন্ধকতা নৌকা আটকে যাচ্ছে।  
স্থানীয়রা জানান, সারি নদীর লালাখাল অংশে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ঘোষণা করে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থিতাবস্থা জারি রয়েছে। এজন্য ওই অংশে বালু উত্তোলন করা বন্ধ রয়েছে। বালু উত্তোলন করলে নাব্যতা ফিরে পেতো সারি নদীর লালাখাল অংশ।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৩২ সালের দিকে ভারতের শিলং থেকে নেমে আসা সারি নদী তথা নীলনদ উত্তরপূর্ব সিলেটের নদীপথ ছিল। বাংলাদেশে সারি-লালাখাল হয়ে প্রবেশ করে প্রবাহিত হয়। সিলেট-তামাবিল সড়ক অতিক্রম করে সারিঘাট হয়ে আঁকাবাঁকা পথে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরকে অতিক্রম করেছে সারি-গোয়াইন নদী নামে। ক্রমশ দক্ষিণ দিকে গিয়ে সিলেট সদর ও গোয়াইনঘাটকে পৃথক করে নাম বদলে হয়েছে চেঙ্গের খাল। চেঙ্গেরখাল নদীর পাশেই অবস্থিত রাতারগুল। সেখান থেকে মোড় নিয়ে পশ্চিম দিকে গোয়াইনঘাটের সালুটিকর হয়ে ছাতক গিয়ে সুরমায় মিলিত হয়েছে।
লালাখালে ঘুরতে যাওয়া ঢাকার মুগদা এলাকার বাসিন্দা শাহীন আহমদ ও তার বন্ধু আতাউর রহমান বলেন, শীতে নীলজলের দৃশ্য দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু নদীতে পানি একেবারে কমে গেছে। নৌকা নিয়ে ঘুরতে গেলে বালুতে আটকে যায়।  
সিলেট সারি বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল হাই আল হাদি বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের নিচের অংশ জিরোপয়েন্ট থেকে শুরু করে কয়েক কিলোমিটার বালু মহাল হিসেবে স্বীকৃত। নদীর লালাখাল অংশে বালু উত্তোলন হচ্ছে না। বালু উত্তোলন না করতে লালাখালে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ঘোষণা করে উচ্চ আদালত থেকে স্থিতাবস্থা জারি রয়েছে। তবে নাব্যতা হারানোয় জলজ প্রাণীর চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এখানে আসা পর্যটকরাও নীলজলে নৌকা যোগে ঘুরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না।
 
তিনি বলেন, নদীর নাব্যতা বাড়াতে হলে আন্তঃদেশীয় আলোচনা সাপেক্ষে নোম্যান্সল্যান্ড থেকে নদী খনন প্রয়োজন রয়েছে। এটা করলে সারি নদী প্রাণ ফিরে পাবে। লালখালে ঘুরতে আসা মানুষজনও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২১
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।