ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

শীত-করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে সংসার চালাচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২০
শীত-করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে সংসার চালাচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ অলিতে-গলিতে, পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন স্থানে বসেছে ভাপা পিঠার দোকান/ ছবি: বাংলানিউজ

ঠাকুরগাঁও: মহামারি করোনা ভাইরাস, ঝড়-বৃষ্টি ও শীতের প্রকোপের মধ্যেই জীবনযাপন করছে নিম্নআয়ের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন বাজি রেখে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয় এসব মানুষকে।

ঠাকুরগাঁওয়ে দিনদিন শীতের প্রকোপ বেড়েই চলছে। সন্ধ্যা নামলে শুরু হয় বৃষ্টির মত কুয়াশা পড়া। শীত শুরু হতেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বৃদ্ধ ও নিম্নআয়ের মানুষেরা। তাইতো শীত মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে বলে জানান উত্তরাঞ্চলের মানুষ। এ বছরে বন্যা, মহামারি করোনা আর শীত এই তিনটি দুর্যোগ অসহায় খেটে খাওয়া মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।  

একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে জীবন যুদ্ধ করছে খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ। শীতের সময় ঘর থেকে বের হওয়া খুবই কষ্টদায়ক। কিন্তু তার মধ্যেও সংসার চালাতে ও পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে হয় অসহায় নিম্নআয়ের মানুষদের।

উত্তরবঙ্গে শুরু হয়েছে শীতের বার্তা। ঠিক সেই সময় শুরু হয়েছে কৃষকের সোনালি ধান কাটার মৌসুম। তাইতো শীতকে উপেক্ষা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ।  

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নতুন সেনুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বৃদ্ধ রশিদুল ইসলাম (৮০) বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি যে বছরে বন্যা ও বৃষ্টিপাত বেশি হয় সে বছর শীতের প্রকোপও বেশি হয়।  

এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীতের প্রকোপ দিনে হালকা গরম করে থাকলেও দিন শেষে শুরু হয় হিমেল বাতাস আর ঝিরঝিরে বৃষ্টির মতো কুয়াশা।
 
ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র শীত বাড়ার আগেই সরকার প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আগাম শীতবস্ত্র দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান অসহায় নিম্নআয়ের মানুষ।

আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি ডেলিভারির কাজ করি প্রতিদিন আমাকে কাজের সন্ধানে ছুটে আসতে হয় ঠাকুরগাঁওয়ে। তবে সরকার ও প্রশাসনের কাছে আমাদের জোর দাবি আমরা নিম্নআয়ের অসহায় মানুষেরা খুব কষ্টে জীবনযাপন করি, শীতের সময় আরও বেশি কষ্ট হয়। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করি। তাই সরকার ও প্রশাসনের কাছে আমাদের জোর দাবি তীব্র শীত পড়ার আগেই যদি আমাদের শীতবস্ত্র দেন তাহলে হয়তো আমরা রাতে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।

এদিকে শীত শুরু হতে না হতেই অনেকে শীতের বিভিন্ন ধরনের পিঠা পুলি তৈরি করে সদর উপজেলায় ছোট-বড় বিভিন্ন হাটে বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বিভিন্ন হাটে বাজারে দোকানে শীতের বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরির উৎসব। অনেকেই ছুটে যান পরিবারসহ পিঠাপুলির দোকানে।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা ফজলে আলম বুলবুল জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে দুর্ভোগে  পড়েন অসহায় নিম্নআয়ের মানুষরা। অনেকে এসময় ভাপা পিঠার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্ভর করেন। গত কয়েক বছর আগে ঠাকুরগাঁও শহরে হাতেগোনা কয়েকটি ভালো দোকান ছিল। এখন অলিতে-গলিতে পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন স্থানে ভাপা পিঠার দোকান হয়েছে।  

ঠাকুরগাঁও শহরের বাসিন্দা সুমাইয়া ইসলাম শরীফ জানান, শীতের সময় বাড়িতে ভাপা পিঠা তৈরি করে খাই কিন্তু দোকানের ভাবির পিঠার মজাটাই আলাদা। কারণ তাদের দোকানে বিভিন্ন ধরনের ভর্তা থাকে যেমন শুঁটকি, সরিষা, মরিচ ও সিদলের ভর্তা, এইসব ভর্তা দেখেই জিভে জল এসে যায় তাইতো শীতের সময় দোকানের শীতের ভাপা পিঠা না খেয়ে মনে তৃপ্তি আসে না।

ঠাকুরগাঁও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাবেক প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তোরাব মানিক জানান, একদিকে মহামারি করোনা ভাইরাস অন্যদিকে জেঁকে বসেছে শীত। শীত ও করোনা ভাইরাস এই দুইটি কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অসহায় খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ।  

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। মাস্ক বাধ্যতামূলক হতে হবে। যেহেতু শীত পড়েছে সে ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এ নিয়ে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালসহ উপজেলার সব হাসপাতালে শীতের জন্য অতিরিক্ত করে আরো ৫০টি বেড বৃদ্ধিসহ স্টাফদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ২৫ হাজার কম্বল পেয়েছি। সেগুলো বিভিন্ন উপজেলায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবারের মতো এবারো অসহায়দের শীত নিবারণের জন্য শীতবস্ত্র তৈরি করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জেলার দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির সভায় শীত ও করোনা ভাইরাস দুটি বিষয়ের ওপর আলোচনা করা হয়েছে। শীতে যাতে করোনার বিস্তার না হয় সেজন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। জেলার করোনা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে এজন্য আমরা জনগণকে সচেতন করছি। একইসঙ্গে সবাই যাতে মাস্ক পড়ে সেই বিষয়টিতে আমরা বেশি জোর দিয়েছি। এরই মধ্যে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে এবং যারা মাস্ক পড়ছে না তাদের জরিমানা করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২০
আরএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।