ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বন্যায় ৫ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২০
বন্যায় ৫ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি

ঢাকা: এবার চার দফায় ৪৬ দিনের বন্যায় সারা দেশে পাঁচ হাজার ৯৭২ কোটি ৭৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।

মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরেন।

এসময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির চিত্র অনুযায়ী মন্ত্রণালয়গুলো পুনর্বাসন পরিকল্পনা নেবে। দেশের ৩৩ জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে, সব মিলিয়ে ৪০ জেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এবারের বন্যায় ঘরবাড়ি, আশ্রয় কেন্দ্র, গবাদিপশু, শস্যখেত ও বীজতলা, মৎস খামার, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ লাইন, মোবাইল ফোন লাইন, টেলিফোন টাওয়ার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সড়ক, ব্রীজ-কালভার্ট, নদী, হাওর, নৌকা-ট্রলার, বাঁধ, জাল, বনাঞ্চল, নার্সারী, কৃষি, নলকূপ, ল্যাট্রিন, জলাধার, হাসপল-ক্লিনিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।

ক্ষতিগ্রস্ত ৩৩টি জেলা হলো- লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁ, শরীয়তপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, নাটোর, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ ও পাবনা।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, এবারের বন্যা ৪৬ দিন স্থায়ী ছিল। ১৯৯৮ সালে দেশের ৫০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়, আর এবার প্লাবিত হয়েছিল ৩০ ভাগ এলাকা।

প্রতিমন্ত্রী জানান, এবার ২৬ জুন প্রথম দফায় বন্যা শুরু হয়। ১০ জুলাই দ্বিতীয় দফা, ১৯ জুলাই তৃতীয় দফা এবং ১৮ অগাস্ট উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়।

এনামুর রহমান বলেন, এবার বন্যার সময় ২০ হাজার ৩১০ মেট্রিকটন চাল, চার কোটি ৪১ লাখ টাকা নগদ, শিশু খাদ্য কিনতে এক কোটি ৫৮ লাখ টাকা, গো-খাদ্য কিনতে তিন কোটি ৩৪ লাখ টাকা, এক লাখ ৮১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ঘর নির্মাণের জন্য সাড়ে ১৯ লাখ টাকা, ৬৫০ বান্ডিল ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া করোনা ভাইরাস ও বন্যাকে মাথায় রেখে কোরবানির ঈদের আগে এক কোটি ছয় লাখ পরিবারকে এক লাখ ছয় হাজার মেট্রিকটন চাল দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়গুলো ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নেবে। সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয়গুলো কর্মপরিকল্পনা পেশ করেছে, সেটা নিয়ে পুনর্বাসন পরিকল্পনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দ্রুত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালুর নির্দেশ দিয়ে যেখানে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন সেখানে তা খরচ করতে বলেছেন। আরও অর্থের প্রয়োজন হলে তিনি বরাদ্দ দেবেন। তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন ঘরবাড়ির ওপর। কারণ পানি নেমে গেছে, মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। বাড়ি গিয়ে যাতে মানুষের কষ্ট না হয় এজন্য প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রত্যেক মানুষের ঘরবাড়ি পুননির্মাণ করে দিতে বলেছেন। বন্যয় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতে টিন এবং নগদ অর্থ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

প্রতিমন্ত্রী জানান, বন্যা পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি নির্মাণ ও মেরামতে প্রত্যেক পরিবারকে ঢেউ টিন ছাড়াও নগদ টাকা দেওয়া হবে।

জাইকা থেকে ১১৭ কোটি টাকা সহায়তা পাওয়া গেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যা পুনর্বাসনে রাষ্ট্রকে যেন আরও বন্যা সহনীয় করতে পারি সেজন্য আরও ১১০টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ২০টি ঘুর্ণিঘড়আশ্রয় কেন্দ্র এক বছরের মধ্যে করা হবে। আশা করি আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি বন্যা সহনীয় রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।

বন্যার সময় দুর্গতদের দ্রুত সরিয়ে আনতে ৬০টি উদ্ধার বোট নির্মাণের চুক্তি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তিন বছরের মধ্যে এসব পাওয়া যাবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

এনামুর বলেন, আরও এক হাজারটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, এক হাজারটি সাইক্লোন শেল্টার করার প্রক্রিয়া চলমান আছে।

এনামুর রহমান বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যায় যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো জরুরিভিত্তিতে মেরামত করবে। সড়ক বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল করবে। কৃষি পুনর্বাসনের জন্য বীজতলা তৈরি, চারা, সার ও বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করবে কৃষি মন্ত্রণালয়।

তিনি জানান, মৎস্যখাতে ক্ষয়ক্ষতি কাটাতে যাদের মৎস্য খামার ভেসে গেছে তাদের সহজশর্তে ঋণ দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা খোলার আগেই মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মেরামত করবে।

সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিভিন্ন পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নগদ টাকা, জিআর চাল, শিশু খাদ্য, গবাদিপশু, শুকনা খাবার, টিন, গৃহ নির্মাণের জন্য পর্যান্ত বরাদ্দ আছে। নতুন করে শুকনা খাবার, টিন ও কম্বলের টেন্ডার হয়েছে, আমরা সেগুলো পাব। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, অতিরিক্ত লাগলে আমরা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২০
এমআইএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।