ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

কাটছে না খুলনার উপকূলের দুর্গতদের দুঃখ-দুর্দশা!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২০
কাটছে না খুলনার উপকূলের দুর্গতদের দুঃখ-দুর্দশা! ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষত বয়ে বেরাচ্ছেন খুলনার উপকূলবাসী। দুর্গত এলাকার অনেকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন উঁচু বাঁধের ওপরে খোলা আকাশের নিচে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে উপকূলবাসীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সহায়তায় কিছু কিছু এলাকায় সরকারি ত্রাণ পৌঁছালেও বেশিরভাগ দুর্গত এলাকাতেই তা পৌঁছায়নি।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে খুলনার উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ভেঙে মাছের ঘের ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এছাড়া কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছা উপজেলার হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে।

 

বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়রায় লবণ পানি ডুকে পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। গত ২০ মে ঝড়ের পর বেশ কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে দুর্গতদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। প্রতিদিন জোয়ারে পানি উঠে যাওয়ায় বানভাসিদের বেঁচে থাকাতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

ঝড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বাড়ি-ঘর মেরামতের আর্থিক সঙ্গতি হারিয়ে ফেলেছেন তারা। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না থাকায় মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। বিচিত্র জীবনে রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন এসব উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। দুর্গত এলাকার এসব মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে এখন দিশেহারা। এসব বানভাসি ক্ষতিগ্রস্ত পানি বন্দি মানুষের মধ্যে চলছে শুধু হাহাকার।
ছবি: বাংলানিউজকয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে চাহিদার চেয়ে ত্রাণ অপ্রতুল। কয়রার মানুষ পানি বন্দি হলেও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। গো-খাদ্যের সংকট তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।  

তিনি বলেন, প্রতিদিনই স্বেচ্ছাশ্রমে এলাকাবাসী বাঁধ নির্মাণের কাজ করছেন।   কয়রার ন্যায় গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে পাইকগাছায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপজেলাটির গোটা এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কৃষি সমৃদ্ধ ২২ নম্বর পোল্ডার। প্লাবিত হয় ২০ ও ২০/১ পোল্ডারের ১৫ গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তীতে চলছে স্বেচ্ছায় বাঁধ মেরামতের কাজ।  
ছবি: বাংলানিউজ
দাকোপ উপজেলাও আম্পানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দাকোপের সুতারখালী ইউপির চেয়ারম্যান মাছুম আলী ফকির বাংলানিউজকে জানান, সুপার সাইক্লোন আম্পানে সুতারখালী, কালাবগী ও নলিয়ানের নিম্নাঞ্চলসহ ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। চার থেকে পাঁচ ফুট পানির উচ্চতায় এখানকার বেড়িবাঁধের বাইরের অংশে ঝুলন্তপাড়া নামক এলাকায় পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে।  

এদিকে আম্পানের আঘাতের নয় দিন পার হলেও সরকারিভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে ভিটে মাটি রক্ষায় নিজেরাই মাটি, খড় ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন রিং বাঁধ।  
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক কয়রা-পাইকগাছায় ভাঙন কবলিত এলাকা ও ক্ষতিগ্রস্ত বেঁড়িবাধ পরিদর্শনের দু'দিনের সফরের শেষদিন শুক্রবার (২৯ মে) সোলাদানা ইউপি'র পাটকেলপোতা ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেন।
ছবি: বাংলানিউজএ সময় তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে নদী ভাঙনে প্লাবিত এলাকাসহ ঝুঁকিপূর্ণ পাউবো'র বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কার করে বাঁধের দু’পাশে লবণ সহিষ্ণু গাছ লাগিয়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে।  

চিংড়ি ঘেরের জন্য ওয়াপদা কেটে বা ছিদ্র করে যত্রতত্র অবৈধ পাইপ বসিয়ে পোল্ডারে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধে স্থানীয়দের দারির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে তিনি বেঁড়িবাধ থেকে নির্দিষ্ট দূরে বিকল্প বাঁধ দিয়ে ঘের করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

এর আগে প্রতিমন্ত্রী গড়ইখালী ইউপির শিবসা নদীর ভাঙন কবলিত কুমখালীর (খুতখালী) বেড়িবাঁধ ও দেলুটির কালীনগরে বেড়িবাঁধ ভাঙনে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়কালে স্থানীয় এমপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের নিরাপদ বসবাসের জন্য আগামী অক্টোবর মাস থেকে টেকসই ও মজবুত বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হবে।  
ছবি: বাংলানিউজ
ক্ষতিগ্রস্ত বেঁড়িবাধ পরিদর্শনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আক্তারুজ্জামান বাবু, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী ও স্থানীয়দের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার ইকবাল মন্টু, সহ-সভাপতি সমিরন কুমার সাধু প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২০
এমআরএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।