ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে বাঁচান পাখির ছানাদের

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২০
ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে বাঁচান পাখির ছানাদের

মৌলভীবাজার: এখন চলছে পাখির প্রজনন মৌসুম। অর্থাৎ তাদের বংশবৃদ্ধির কার্যক্রম। বাসার স্থান নির্বাচন, বাসা তৈরি, ডিম দিয়ে তাতে তা দেওয়া এবং সবশেষে ডিম ফুটে ছানা বের হওয়া। এভাবে নির্ধারিত হয় পাখিদের জীবনচক্র।

কিন্তু কালবৈশাখীসহ ঝড়বৃষ্টির এই মৌসুমটি পাখির জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। বিশেষ করে পাখির ছানাদের ক্ষেত্রে।

এই সময়ের বিরামহীন ঝড়বৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রে পাখির ছানাগুলো তাদের বাসা থেকে মাটিতে পড়ে যায়।

এই দৃশ্য দেখে কারো কারো হৃদয়ে মায়া-মমতার জন্ম হয়। ঝড়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া কোনো পাখির ছানাকে পুনরায় গাছের তুলে দেওয়া কিংবা পাশের গাছের পাখির বাসায় রেখে দেওয়ার আনন্দ সীমাহীন।

মাটিতে পড়ে যাওয়া পাখির ছানাকে গাছে তুলে এমন ভালোলাগার আশ্চর্য অনুভূতির সঙ্গে আমরা অনেকেই জড়িয়ে পড়তে পারি। শুধু ইচ্ছেটাই এখনে প্রধান।

বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ =কর্মী সুলতান আহমেদ এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, এই সিজন (মৌসুম) অনেক পাখির বাচ্চা দেওয়ার সময়। আমার বাড়ির আশপাশে পাখির ডাইভার্সিটি মোটামুটি সন্তোষজনক। গত মাসখানেক ধরেই নিয়মিত দেখছি অ্যাবটের ছাতারে (Abbott’s Babbler) ধলাগলা ছাতিঘুরুনি (White-throated Fantail) শ্বেতাক্ষী (Oriental White Eye), কালাঘাড়-রাজন (Black-naped Monarch) ধলাবুক-মাছরাঙা (White-breasted Kingfisher ) ধলাকোমর-শামা (White-rumped Shama ) খুড়লে পেঁচা (Spotted Owl)সহ অনেক পাখি বাচ্চা দেয়। কিন্তু এই সময়ে বেশ ঝুঁকিও থাকে।

তিনি বলেন, ঝড়, দমকা বাতাস, বৃষ্টির জন্য অনেক সময় বাচ্চা বা পুরো বাসা পড়ে যায়। অন্যদিকে শিকারি পাখি তো আছেই, এটা ন্যাচালার। এছাড়াও বড় সমস্যা হচ্ছে এলাকায় অল্পবয়সী ছেলে-মেয়ে, যারা এই সময় পাখির বাসা খোঁজে এবং পাখি ধরে বেড়ায়।

মাটিতে পড়ে যাওয়া অ্যাবটের ছাতারে (Abbott’s Babbler) এর ছানা।  ছবি : বাংলানিউজ

ছোট পাখিগুলা সাধারণত বাসার আশপাশে গাছের ডালে বাসা করে, যারা বাড়িতে আছেন একটু খেয়াল করলে দেখবেন পাখি খাবার নিয়ে যাচ্ছে নয়তো বাসা তৈরির জন্য খড়কুটো নিচ্ছে বলে জানান।

মাটিতে পড়ে যাওয়া পাখির ছানার ব্যাপারে তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে আমার বাসার আশপাশেই একটা অ্যাবটের ছাতারের বাচ্চা, একটা শ্বেতাক্ষী, দুটো ঘুঘুর বাচ্চা উদ্ধার করে তাদের বাসায় রেখে আসছি। সম্প্রতি দুটো চড়ুই (House Sparrow) পাখির ছানাকে উদ্ধার করে তার বাসায় ফিরিয়ে দিয়েছি। কী যে ভালো লাগার সেই অনুভূতিগুলো! সেটা বলে ঠিক বোঝানো যাবে না।

যারা এখন বাড়িতে আছেন একটু খেয়াল করবেন, ঝড়ের পরপরই কখনোবা আপনার বাসার আশপাশে গাছের পাখির ছানাটিও মাটিতে পড়ে যেতে পারে। তাই পাখির চিরশত্রু বিড়াল, কুকুর এদের হাত থেকে পাখির ছানাটিকে বাঁচাতে তাড়াতাড়ি গাছে তুলে দিন। যদিও কাজটা একদমই ছোট, তবে আমাদের প্রকৃতির রক্ষায় পাখির পরবর্তী প্রজন্ম রক্ষার্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতান আহমেদ।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২০
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।