ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

যে কারণে শতভাগ অঙ্কুরিত হয় না আমের মুকুল

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২০
যে কারণে শতভাগ অঙ্কুরিত হয় না আমের মুকুল

মৌলভীবাজার: ফাল্গুন মাস প্রায় শেষের দিকে। এরইমধ্যে গাছে গাছে ভরে গেছে আমের মুকুল। এত্ত এত্ত ফুল যে গাছের পাতাই দেখা যায় না। মাস গড়াতেই গাছ ভরে উঠবে ছোট ছোট গুটিতে। ঝড়-ঝঞ্ঝা মোকাবিলা করে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা আমে চলবে বাঙালির মধুমাস উদযাপন।

আম গাছের এই এত্ত এত্ত ফুলের সবগুলো যদি ফলে পরিণত হতো তাহলে কী হতো? তাতে এত আম হতো যে খেয়ে হয়তো শেষই করা যেত না। তবে চারদিকের এই কাল্পনিক আমময় অবস্থা হওয়ার সুযোগ নেই।

বিজ্ঞান অন্তত সে কথা বলে না।  
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এবং উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, শতভাগ ফুল আমে পরিণত না হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে পরাগায়ন। শতভাগ পরাগায়ন না হওয়ার ফলে আমগাছের সবগুলো স্ত্রী-ফুল আমে রূপান্তরিত হয় না। আমের মুকুলে যদি শতভাগ পরাগায়ন হতো আম দিয়ে সারাদেশ ভরিয়ে দেওয়া যেতো। আমের মুকুলে কখনোই শতভাগ পরাগায়ন ঘটে না।
 
তিনি বলেন, দেখা যায় একটি আমের স্টিকে প্রায় হাজার ফুল থাকলেও আম থাকে গুটি কয়েক। তার মানে বাকিগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। দুই থেকে চারটা মাত্র সাকসেস (সফল) হয়। আমের সব ফুলে যদি পরাগায়ন না ঘটে তাহলে সেগুলো আমে পরিণত হবে না। পরাগায়ন হলো পুরুষ এবং স্ত্রী ফুলের মিশ্রণ। এই পরাগায়ন কাজটি করে থাকে নানার ধরনের কীট-পতঙ্গ; মৌমাছি ও প্রাকৃতিক বাতাস।
 
আমের মুকুলে ছেয়ে গেছে আম গাছ 

উদাহরণ টেনে ড. জসীম উদ্দিন বলেন, উদাল গাছেও কিন্তু হাজার হাজার ফুল হয়। কিন্তু উদালে যদি সবগুলো ফল হতো; তাহলে উদাল গাছ ঝুলে পড়তো। এখানেও আম গাছেও ধরেন, সব ফুলগুলো যদি আমে পরিণত হতো তাহলে আমগাছ ভেঙে নিচের দিকে ঝুলে পড়তো। সে ফলের ভারও বহন করতে পারতো না। এটা ব্যালেন্স (নিয়ন্ত্রণ) করার জন্য প্রতিটি আমগাছে শতভাগ পরাগায়ন কখনো নিশ্চিত হয় না। নিশ্চিত না হওয়াতে যতটুকু ব্যালেন্স হওয়া দরকার ততটুকু হয়ে থাকে। এটি সম্পূর্ণ ন্যাচারাল (প্রকৃতিক)।
 
কৃত্রিম পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আমরা তো ধরেন উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমগাছে নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই। সে ক্ষেত্রে আমি জানি না, কৃত্রিমভাবে এটা কেউ করে কিনা যে, আমগাছ বা আম বাগানে মৌমাছির সংখ্যা যদি বাড়ানো যায় তাহলে এর সাফল্য বাড়বে। কারণ, আমের ফুলে ফুলে তো মৌমাছি ভিজিট (ভ্রমণ) করে। এখন মৌমাছি ভিজিট করলে পরাগায়নের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ার কথা।
 
আম গাছকে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে ড. জসীম উদ্দিন বলেন, যে সব ফুল ক্রসপলিনেটেড (পরপরাগী) সেসব উদ্ভিদের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে ফুল হয়। যেহেতু পরাগায়নটা অনিশ্চিত যে জন্য সে সব গাছে প্রচুর পরিমাণ ফুলের সৃষ্টি হয়। কোনোটা না কোনোটা যাতে ফল হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। পরপরাগী গাছে প্রচুর ফুল ঘটলেও ফল হয় কম। ফল হওয়ার সুযোগ বাড়ানোর জন্য ফুল পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। একটা না একটা যাতে কাজে লাগে। আমের ক্ষেত্রেও হয়তো এমন একটা ঘটনা ঘটেছে।
 
‘আম গাছ যেহেতু পরপরাগী তাই এর প্রচুর ফুল হয় পরাগায়নকে সাকসেস (সফল) করার জন্য। এখন প্রকৃতিতে যদি বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ কম থাকে তখন পরাগায়নের হার আস্তে আস্তে কমে যায়। এটা কমে গেলে ফলধারণও কমে যাচ্ছে। আর পরাগায়নের হার যত বেশি হবে ফলও তত বেশি হবে। এটা নির্ভর করছে প্রকৃতিকে কীটপতঙ্গ যেগুলো আছে তার পরিমাণের উপর।
  
 বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২০
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।