ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

১৫ হাজার চারায় সৃজিত বাগান নজর কাড়ছে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
১৫ হাজার চারায় সৃজিত বাগান নজর কাড়ছে

নীলফামারী: রাস্তার দুধারে ও খালের পাড়ে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির চারা। যত্ন পেয়ে মাত্র ৬ মাসে লকলকিয়ে বেড়ে উঠেছে সেসব চারা। ফলে সৌন্দর্যের ঝিলিক দিচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার প্রজাতির লাগানো চারার বাগানটি। নজর কাড়ছে পথচারীসহ সবার। 

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের হামুরহাট পেরিয়ে একটু এগুলেই মিলবে সেই গাছের বাগান। সারি সারি গাছ এখন বেড়ে উঠছে পরম পরিচর্যায়।

গাছগুলো গরু ও ছাগল থেকে অনেকটা বিপদমুক্ত। ৫ থেকে ৬ ফুটের বেশি লম্বা হয়েছে। বৃহত্তর রংপুর জেলায় টেকসই সামাজিক বনায়ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় (২০১৮-১৯) অর্থবছরে গাছের চারাগুলো উপকারভোগীর মাধ্যমে লাগানো হয়।  

ওই ইউনিয়নের এস৭টি৫ খালের খাতামধুপুর মাঝাপাড়া হতে পোড়াখামার পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার জায়গায় লাগানো হয় এসব চারা। উল্লেখযোগ্য গাছের মধ্যে রয়েছে আকাশমনি, মেহগিনি, বকাইন, হরিতকি, বহেরা, অর্জুন, জারুল, নিম, জাম, কাঁঠাল, জলপাই, পিটালি প্রভৃতি। এসব গাছ দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করছেন চার নারীসহ এক পুরুষ ওয়াচার। তারা প্রতিমাসে মাত্র ২ হাজার টাকার বিনিময়ে এসব গাছ দেখভাল করছেন।

নীলফামারীতে ১৫ হাজার প্রজাতির লাগানো চারার বাগান।  ছবি- বাংলানিউজ

নারী ওয়াচার আয়রাতন (৩৮) জানান, বাগানের গাছপালা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। বাগানের গাছপালা দেখে প্রতিমাসে যে সামান্য টাকা পাই তাতে দুঃখ নেই। কারণ অজানা-অচেনা গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছি। নির্দিষ্ট সময়ের পর এসব গাছ বিক্রি করে লভ্যাংশ পাবেন ৭৫ জন উপকারভোগী, ইউনিয়ন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর। উপকারভোগী বৈরাগীপাড়ার সুশান্ত, ডাঙ্গী চৌধুরীপাড়ার ইসাহাক আলী, জনাব আলী, রাখালপাড়ার ক্ষিতিশ চন্দ্র রায় ও খালিশার হান্নান জানান, পরিত্যক্ত জায়গায় নানা জাতের এসব চারা লাগিয়ে সবাই পরিচর্যা করছি। সন্তানের মতো লালন-পালন করে চলেছি। কারণ একদিন লাভের অংশতো আমরাই পাবো।

প্রকৃতি যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য এক নিরিবিলি স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে স্থানটি। বিকেল হলে এলাকার ছেলে-মেয়েরা ঘুরতে আসেন নানা প্রজাতির গাছে সাজানো বাগানে। পরিচিত হন গাছগুলোর সঙ্গে।  

কথা হয় ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি জানান, সৈয়দপুরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম গোলাম কিবরিয়ার পরামর্শে ও স্থানীয় সামাজিক বনায়ন নার্সারি এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সহযোগিতায় রাস্তা ও খালের দুধারে বনায়ন সৃষ্টি করা হয়েছে। দুর্লভ ওষুধী গাছের চারাও লাগানো হয়েছে বাগানে। পরিশ্রম ও আন্তরিকতা থাকলে যে ফল আসে তার প্রমাণ আমার ইউনিয়নের সৃজিত বাগান।  

সৈয়দপুর সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হাসান জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার মানুষের আগ্রহের কারণে ওই বাগান সৃজন করা হয়েছে। উপকৃত হবেন এলাকার মানুষ। তাই তারা খুব আদরে বড় করছেন গাছগুলোকে। তিনি বলেন, এসব গাছের কারণে পাশের জমিওলার ক্ষতি হলেও বৃহৎ স্বার্থে জমির মালিকরা তা মেনে নিয়েছেন। উপকারভোগী, ওয়াচারের পাশাপাশি তাদের ভূমিকাও কম না। অর্থাৎ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পল্লিতে এ ধরনের নানা প্রজাতির বাগান মানুষের নজর কাড়ছে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সৈয়দপুর সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।  

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দৃষ্টিনন্দন বাগানটি পরিদর্শন করেছেন রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা। সবাই বেকার যুবকদের জন্য এটি অনুকরণীয় হতে পারে বলে মত দিয়েছেন। পরিপূর্ণ হবার পর যখন কাটা হবে তখন উপকারভোগীরা এর সুফল বুঝতে পারবেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।