ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শক্ত লেজে ভর দিয়ে খাড়া গাছে উঠে ‘খয়রা-কাঠকুড়ালি’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
শক্ত লেজে ভর দিয়ে খাড়া গাছে উঠে ‘খয়রা-কাঠকুড়ালি’ ‘খয়রা-কাঠকুড়ালি’ প্রকৃতি রয়েছে, তবে সহজে দেখা যায় না। ছবি :আবু বকর সিদ্দিক

মৌলভীবাজার: ভয় বা লাজুকতা যা-ই বলা হোক না কেন এটা অধিকাংশ পাখিদেরই বেশি। তবে সব পাখিদের নয়। প্রতিবেশী বুলবুলি, শালিক, দোয়েল প্রভৃতি পাখিরা সাহস দেখিয়ে আমাদের বাড়ির চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। মধুর ডাকে স্বার্থক করে তোলে রাঙাসকাল।

কিন্তু কাঠঠোকরা (Flameback) বা কাঠকুড়ালি (Woodpecker) অর্থাৎ যারা ঠোঁট দিয়ে গাছের গায়ে আঘাত করে খাদ্য খুঁজে বেড়ায় তাদের কিছু প্রজাতি অত্যন্ত লাজুক। তার মাঝে ‘খয়রা-কাঠকুড়ালি’ অন্যতম।

এরা সহজে মানুষে সামনে আসতে চায় না। পাতার আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে চলাচল করে।

অন্যপাখি যেমন উড়ে এসে সহজে ডালে বসে, কাঠ-ঠোকরা বা কাঠ-কুড়ালি তা নয় কিন্তু। ডালে বসা খুব সহজ। কিন্তু গাছের খাড়া ডালে বা কাণ্ডে উঠা-নামা বা স্থির থাকা অনেক কঠিন। এ কঠিক কাজটিই সহজভাবে করতে পারে ‘খয়রা-কাঠকুড়ালি’।

‘খয়রা-কাঠকুড়ালি’ পাখির ইংরেজি নাম Rufous Woodpecker এবং বৈজ্ঞানিক নাম Micropternus brachyurus। এরা আকারে আমাদের শালিক পাখির মতো। প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার।

প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘খয়রা-কাঠকুড়ালি’ একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো- সে তার নখ দিয়ে গাছের শরীর আকড়ে ধরে শক্ত লেজে ভর দিয়ে খাড়াভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে গাছে উঠতে এবং নামতে পারে। শুধু তা-ই নয়, লেজে ভর রেখে সে খাড়াভাবে থাকতেও পারে এবং উঠেও ওইভাবে। দুই পা দিয়ে গাছটা ধরে থাকে আর লেজে ভর দিয়ে শরীরটা ঠেকিয়ে রাখে। তারপর লেজে ভর দিয়ে একটা লাফ দিয়ে উপরে ওঠে। তারপর অল্পক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার লাফ দেয়। এভাবে সে লাফিয়ে লাফিয়ে গাছে উঠতে থাকে অথবা লাফিয়ে লাফিয়ে নামতেও থাকে।

তিনি আরো বলেন, গাছের খাড়া কাণ্ড ধরে এভাবে উঠানামার এই কাজটি অন্যকোনো পাখি করতে পারে না। সেজন্যই ওদের লেজের পালক এবং লেজের শলা বা ডাটাটা খুবই শক্ত। কাঠির মতো। অন্য পাখিদের লেজের মতো নরম নয়। এটাই অন্যতম বৈশিষ্ট্য যে ‘খয়রা-কাঠকুড়ালি’র মতো অন্য কোনো পাখি লেজে ভর দিয়ে এভাবে গাছে উঠতে নামতে পারে না।

পাখিটির খাদ্যতালিকা এবং প্রজনন সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, ‘খয়রা-কাঠকুড়ালি’ মূলত পিঁপড়েভুক। গাছের শরীরে ঘুরে বেড়ানো নানান ধরনের পিঁপড়ে সে খেয়ে থাকে। পিঁপড়েই তার প্রধান খাবার। অন্য পোকা খুবই কম খায়। ও আবার অনেক সময় পিঁপড়ের বাসার মধ্যে নিজে বাসা তৈরি করে থাকে। সুপারি বা নারকেল গাছে একধরনের পিঁপড়ের বাসা হয় দেখবেন- বড়সড় একটা নারিকেলের মতো। সে রকম পিঁপড়ের বাসা খুদে (খনন করে) সে তার নিজের বাসাও করে। অন্য কাঠঠোকরাদের থেকে ‘খয়রা-কাঠকুড়ালি’র বিশেষত্ব এটি।  

প্রকৃতিতে এ পাখিটির প্রাপ্যতা সম্পর্কে প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বলেন, পাখিটিকে কিন্তু আপনি সহজে দেখতে পাবেন না। তবে আমাদের সবুজ বনগুলো প্রচুর পরিমাণে আছে। অন্য কাঠঠোকরারা যেমন প্রকাশ্যে চলে আসে এ পাখিটি কিন্তু তা নয়।  ও খুব নিরিবিলিতে থাকে এবং লুকিয়ে থাকে।

এ পাখিটির সারাদেহ কালচে-বাদামি এবং চঞ্চু (ঠোঁট) ও পা ইস্পাত বর্ণ। ডানা, বগল ও লেজের মধ্যে রয়েছে সারি সারি আড়াআড়ি ডোরা। পুরুষ পাখিটির কানের ঢাকনিতে সিঁদুর রঙের পালক রয়েছে বলে জানান প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
বিবিবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।