ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

নরওয়েতে রাশিয়ান স্যালমনের আগ্রাসন!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৯
নরওয়েতে রাশিয়ান স্যালমনের আগ্রাসন! পিঙ্ক স্যালমন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে রাশিয়ান আগ্রাসন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে, নরওয়ে বাস্তবিকই রাশিয়ান আক্রমণের শিকার। এতটুকু পড়ে ভাববেন না, রাশিয়া অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে নরওয়েতে হামলা চালিয়েছে। সেখানে আগ্রাসন চালাচ্ছে মূলত ‘রাশিয়ান স্যালমন’ (হাম্পব্যাক/পিঙ্ক স্যালমন) মাছ! এতে বিপন্ন হতে চলেছে স্থানীয় মাছের প্রজাতি।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা স্পুটনিক জানায়, নরওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলো দিয়ে বিপুল সংখ্যক রাশিয়ান স্যালমন প্রবেশ করছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতি আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির গবেষকরা।

 

জীববিজ্ঞানী রুন মালাদাল স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের আশঙ্কা, এবছর অনেক নদীতেই স্থানীয় মাছের চেয়ে রাশিয়ান স্যালমনের সংখ্যা বেশি হয়ে যাবে।  

স্থানীয় জেলে ও বিজ্ঞানীদের শঙ্কা, বিদেশি স্যালমনের এ আগ্রাসন খুব শিগগিরই দীর্ঘস্থায়ী হয়ে দাঁড়াবে। আর, এ বিপর্যয়ে সবার আগে পড়বে নরওয়ের সর্বউত্তরের শহর ফিনমার্ক।

হাম্পব্যাক স্যালমনের উৎপত্তি প্রশান্ত মহাসাগরে হলেও ১৯৫০ সালের দিকে শ্বেত সাগর ও কোলা উপদ্বীপ এলাকায় এ মাছের পোনা ছাড়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার। স্যালমনের ওজন গড়ে দুই কেজির মতো হয়ে থাকে।

২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো নরওয়েতে রাশিয়ান স্যালমন বিস্তারের খোঁজ পান দেশটির বিজ্ঞানীরা। চলতি বছর নরওয়েমুখী স্যালমনের সংখ্যা গতবারের চেয়ে কয়েকগুন বেশি। দ্বি-বর্ষ চক্র অনুসারে ২০২১ সালে ফের এর আগ্রাসন দেখা যাবে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।  

নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট ফর ন্যাচার রিসার্চের (নিনা) গবেষক হেনরিক বার্নস্টেন বলেন, ২০১৭ সালে আমরা বিষয়টিকে আকস্মিক ঘটনা মনে করেছিলাম। কিন্তু, এ নিয়ে পর পর দু’বার একই ঘটনা ঘটলো। সুতরাং বলতেই পারি, ভবিষ্যতেও এ ধরনের আরও কিছু দেখা যাবে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে রাশিয়ান মাছের আগ্রাসনে আটলান্টিক স্যালমন, সি ট্রাউটের মতো স্থানীয় মাছের প্রজাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, হাম্পব্যাক স্যালমনের কারণে স্থানীয় মাছগুলো এলাকাছাড়া হয়ে যাবে। একারণে, বিদেশি মাছগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

নিনার গবেষক ও ইউনিভার্সিটি অব ট্রমসোর অধ্যাপক ইভা থর্স্ট্যাড বলেন, রাশিয়ান স্যালমন নরওয়ের জীববৈচিত্র্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তিনি নদী থেকে এ মাছগুলো পুরোপুরি বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত ব্যাপক হারে শিকার করার পরামর্শ দিয়েছেন।

এরই মধ্যে ফিনমার্ক কাউন্টির কার্পেলভা এলাকায় ফাঁদ পেতে রাশিয়ান স্যালমন শিকার শুরু করেছেন স্থানীয় জেলেরা।

তাদের মতে, নরওয়ের নদীতে রাশিয়ান স্যালমনের বিস্তার রোধে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। কারণ, তারা এখনো ডিম ছাড়া শুরু করেনি। সাধারণত, আগস্টের মাঝামাঝি হাম্পব্যাক স্যালমন ডিম ছাড়ে।  

তবে, গবেষক হেনরিক বার্নস্টেনের মতে, সবচেয়ে খারাপ খবর হচ্ছে, যত চেষ্টাই হোক, নরওয়েতে রাশিয়ান স্যালমনের আগ্রাসন থামানো অসম্ভব।  

তিনি বলেন, নরওয়ের নদীতে স্যালমনের ডিম ছাড়া বন্ধ করা গেলেও, তাদের আসা বন্ধ হবে না। রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এ মাছ বিপুল সংখ্যায় জন্মায়। সেখান থেকে বড় বড় নদীগুলো দিয়ে তারা আসতেই থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।