ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শতবর্ষী কৃষ্ণচূড়া আর ছড়াবে না রাঙা মঞ্জুরি!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৯
শতবর্ষী কৃষ্ণচূড়া আর ছড়াবে না রাঙা মঞ্জুরি! ফণীর আঘাতে রাস্তার ওপর উল্টে আছে শতবর্ষী কৃষ্ণচূড়া, ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: গ্রীষ্মের অতি পরিচিত ফুল কৃষ্ণচূড়া। সারাবছর চোখে না পড়লেও গ্রীষ্মে এর রূপ দেখে থমকে দাঁড়াতে হয়। ঋতুবৈচিত্রের ধারায় প্রকৃতিতে এখন বিরাজমান বৈশাখ। বৈশাখের প্রখর রোদ যখন তাপদাহ ছড়ায় তখন কৃষ্ণচূড়া ফুল তার সৌন্দর্যের বার্তা ছড়িয়ে দেয় প্রকৃতির বুকে।

‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে/আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কৃষ্ণচূড়া গাছ আর ফুল নিয়ে ছিলো মনোমুগ্ধকর একটি গান।

গ্রীষ্মের এ রুক্ষ মেজাজ ছাপিয়ে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে প্রকৃতিতে মেলে ধরে আপন মহিমায়।

লাল রঙে কৃষ্ণচূড়া পসরা সাজিয়ে যেন প্রকৃতিতে তার আপন মহিমা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়। যা প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের চোখ মন ভরিয়ে দেয়।

তাই বিশ্ব কবি বরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়, ‘গন্ধে উদাস হাওয়ার মত উড়ে তোমার উত্তরী, কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরি’ আজ টিকে আছে নড়বড়ে অস্তিত্ব নিয়ে। নানা স্থানে নানা জায়গায় বৃক্ষ নিধনের মধ্যেও বগুড়ায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে ঠেঙ্গামারা এলাকায় শতবর্ষী একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ দাঁড়িয়ে ছিলো স্বমহিমায়।

কিন্তু অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ শতবর্ষী এ কৃষ্ণচূড়াকে যেন সহ্য করতে পারলো না। অনেক কিছুর মতো এ কৃষ্ণচূড়া গাছের ওপর আঘাত হানে ‘ফণী’। মুহুর্তে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় শতবর্ষী এ গাছটি। ‘ফণী’ প্রভাবে ডালপালা ভেঙে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। এতে করে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ঘণ্টাখানেকের মতো যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

শনিবার (৪ মে) দুপুরে বগুড়া সদর উপজেলার ঠেঙ্গামারা এলাকায় মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী কৃষ্ণচূড়া গাছটিতে আঘাত হানে ‘ফণী’। এতে বিশাল দেহ নিয়ে মহাসড়কের ওপর আছড়ে পড়ে গাছটি। খবর পেয়ে বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। পরে উন্নতপ্রযুক্তি মাধ্যমে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে গাছটি কেটে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।

গাছটি মহাসড়কের পাশে টিএমএসএস নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। বিশাল দেহ বিশিষ্ট গাছটি বহুদিন ধরে রোদ তপ্ত পথিককে ছায়া দিয়ে আসছিলো। লাল রঙের পসরা সাজিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের মন মাতিয়ে দিতো। কিন্তু শনিবারের পর থেকে ক্লান্ত-শ্রান্ত পথিক আর ছায়া নিতে পারবে না। প্রকৃতিপ্রেমীরা আর দেখতে পাবে না লাল রঙের সেই মন মাতানো আভা।

মফিজুল ইসলাম নামে এক প্রবীণ বাংলানিউজকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র আঘাতে ভেঙে পড়া কৃষ্ণচূড়া গাছটির বয়স একশ’ বছরের বেশি বৈ কম হবে না। মহাসড়কের পাশে গাছটি থাকায় অনেক মানুষ এর নিচে এসে বসতেন। কিন্তু গাছটি ভেঙে পড়ায় মানুষ সেই ছায়া থেকে বঞ্চিত হলো।

রেজাউল করিম নামে এক নবীন জানান, ব্যস্তময় এলাকার ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষগুলো শতবর্ষী এ কৃষ্ণচূড়ার নিচে বসে ছায়া নিতো। ক্ষণিকের জন্য আরাম করতো। কিন্তু গাছটি ভেঙে পড়ায় এখন আর সেটি সম্ভব না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৯
এমবিএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।