ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হুমকিতেই থাকে উপকারী লক্ষ্মীপেঁচার প্রজনন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
হুমকিতেই থাকে উপকারী লক্ষ্মীপেঁচার প্রজনন জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের লক্ষ্মীপেঁচা। ছবি : ড. কামরুল হাসান

মৌলভীবাজার: মানুষের খুব কাছাকাছি বাস করে উপকারী লক্ষ্মীপেঁচা। পুরাতন গাছের কোটরে, পুরাতন মঠ-মন্দির বা দালান, বাড়ির কার্নিশ বা গোপনীয় কোণা, দালানের ভেন্টিলেটারের ভাঙা অংশ প্রভৃতি জায়গায় স্বস্তিতে বাস করতে দেখা যায় তাদের।

এক সময় সেই জায়গাগুলোতে তারা ডিম পাড়ে। কিন্তু প্রজনন মৌসুসে সেসব জায়গায় ডিম ফুটে বাচ্চা তোলার পরই ঘটে যত রকমের বিপত্তি।

লক্ষ্মীপেঁচার ছানাদের এমন অবাক করা মুখ বা ব্যতিক্রমী চেহারা দেখে অনেকেই ভয় পেয়ে যায়।
 
ভাবতে থাকেন এ অবার কোন অবাক প্রাণী! এক জোড়া বা তিন কিংবা চারটা ছানা থাকে একেকটি বাসায়। সেই ‘ভয়’ এমনি ভয়াবহ যে অনেক ক্ষেত্রে প্রাণে মরতেও হয় মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই প্রাণীটিকে।
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে লক্ষ্মীপেঁচারা হুমকির মুখে। বিশেষ করে প্রজনন মৌসুমের পরে ছানাগুলোকে বড় করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখিসহ অনেক ক্ষেত্রে প্রাণও যায় তাদের ।
 
এর কারণটা হলো, এরা দেখতে একটু অন্যরকম। বিশেষ করে তাদের মুখের আকৃতির কারণেই এই প্রাণীটিকে অনেকে না চিনে ভয় পেয়ে আমাদের বলেন, ‘কী যেন একটা পাখির মতো দেখতে। ...’ অনেক জায়গা থেকে আমরা এভাবেই লক্ষ্মীপেঁচার ছানাদের উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি।
 
তিনি আরও বলেন, এর প্রধান খাবারই হলো ইঁদুর। এ কারণেই এরা আমাদের বাড়িঘরের আশপাশে থাকে। গাছের কোটরে অথবা বিল্ডিংয়ের কার্নিশগুলোতে। দিনেরবেলা লুকিয়ে থাকে আর সন্ধ্যায় বের হয়। এরা প্রচুর পরিমাণে ইঁদুর খায়। আমাদের ক্যাম্পাসে এগুলো রয়েছে মোটামুটি পরিমাণে।
 
ক্ষতিকর ইঁদুর খেয়ে ওরা আমাদের পরিবেশের অত্যন্ত উপকার করে। আমরা আমাদের বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র থেকে যত প্রাণী এ পর্যন্ত উদ্ধার করেছি তার বেশিরভাগই হলো এই লক্ষ্মীপেঁচা এবং তাদের ছানা। এরা দেখতে একটু অন্যরকম হওয়াতে বিশেষ করে মুখটা চ্যাপ্টা হওয়ায় লোকজন এ প্রাণীটিকে কি না কি ভাবে। তবে এরা অত্যন্ত নিরীহ এবং মানুষ ও পরিবেশের উপকারী প্রাণী- যোগ করেন ড. কামরুল।
 
ড. কামরুল উদাহরণ টেনে বলেন, ‘ধামরাই থেকে এক ভদ্রলোক আমাদের ফোন করে বলেন, আমাদের বাড়ির কার্নিশে পাখির মতো দেখতে কয়েকটা প্রাণী দেখা যাচ্ছে। এগুলো তাড়াতাড়ি নিয়ে যান; তা না হলে আমরা তাদের মেরে ফেলবো। পরে আমরা তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি ওগুলো লক্ষ্মীপেঁচার ছানা। পরে ওগুলো উদ্ধার করে নিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসে ছেড়ে দিই।
 
লক্ষ্মীপেঁচার ইংরেজী নাম Common Barn Owl এবং বৈজ্ঞানিক নাম Tyto alba। এরা আকারে কবুতরের মতো। ৩৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। হালকা সোনালি পিঠ এবং সাদাটে পেট। এদের মুখমণ্ডল হার্ট আকৃতির। অর্থাৎ দেখতে হৃদয়াকৃতির। কাছে গিয়ে দেখলে বা ছবিটা জুম করে দেখলে চোখ আর ঠোঁটটা অধিকরত ফুটে ওঠে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, ২৩ নভেম্বর, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।