ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

অতিব্যস্ত পাখি ‘ধলাগলা-ছাতিঘুরুনি’ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৮
অতিব্যস্ত পাখি ‘ধলাগলা-ছাতিঘুরুনি’  গাছের ডালে নাচছে ‘লেজনাচুনে’। ছবি- খালেদ সাইফ

মৌলভীবাজার: ছাতিঘুরুনির রয়েছে লেজের বাহার। এ লেজের নাচানাচি দারুণ মুগ্ধতায় ভরা। তাকিয়ে থাকলে শুধুই দেখতে ইচ্ছে করে। গাছের ডালে ডালে কিংবা মাটিতে তার আনন্দপ্রকাশের এই বাহার দেখে জুড়িয়ে যায় চোখ। 

লেজের এই সৌন্দর্যে উপর ভিত্তি করেই ওর নাম রাখা হয়েছে ছাতিঘুরুনি। শুধু নির্জন ভূমি নয়; লোকালয়েরও পাখি সে।

এক নজরে দেখলে দেখা যায়- ঘোলাটে বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের দেহ তার।  

ধলাগলা-ছাতিঘুরনির অপর বাংলা নাম ‘সাদাগলা-লেজনাচুনে’। ইংরেজি নাম White-throated Fantail এবং বৈজ্ঞানিক নাম Rhipidura albicollis। এই পাখা মেলে আবার এই পাখা হঠাৎই গুটিয়ে ফেলে। দুলে দুলে আপন নৃত্যের ঝংকার তোলে আপন গানের তালে।

প্রখ্যাত পাখি গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, সারাক্ষণ নড়াচড়া করা পাখি ধলাগলা-ছাতিঘুরুনি। এই নড়াচড়ার উদ্দেশ্যই হলো অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকাগুলোকে সে সারাক্ষণ ধরে খায়। এই পোকাগুলো এতোই ছোট যে আমাদের খালি চোখে অনেক সময় তা দেখা না এবং তারা গাছপাতার পাতার ফাঁকে ফাঁকে উড়ে উড়ে বেড়ায়।  

গাছের ডালে নাচছে ‘লেজনাচুনে’।  ছবি- খালেদ সাইফখোলা নর্দমা, সরু ড্রেন কিংবা পচাগলা পানিতে যে সব পোকা হয় ওইসব পোকাকে সে সারাক্ষণ উড়ে উড়ে ধরে। মল-মূত্র যেখানে পড়ে ওখানে এসব অতি ছোট ছোট পোকা জন্মে। এগুলো উড়তে শিখে খোলা নদর্মা, সরু ড্রেন বা তাদের নিজস্ব আবাসস্থল থেকে বের হয়ে আছে তখন ওইসব পোকাকে এই পাখিগুলো ধরে খায় সে। ধরুন, গ্রামের বাড়ির একটা গরুর ঘর থেকে একটা নর্দমা চলে গেলো কিছু দূরে। ওই নর্দমায় যেসব সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পোকা হয়, সেগুলোই ওর প্রধান খাবার বলে জানান ইনাম আল হক।  

পালক মেলে ধরার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দ্রুততার সাথে ছোট ছোট পোকাগুলোকে ধরে ধরে খায় বলে বাতাসে তার পালকগুলো মেলে ধরে। যাতে সে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে না যায়। আর এই পালক মেলে ধরার ফলেই তার পালকময় শারীরিক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। ১২টি সুবিন্যাস্ত পাখা পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে সৌন্দর্যের বিস্তার ঘটিয়েছে। গাছের ডালে ডালে কী অপূর্ব ভঙ্গিতে সে নেচে নেচে বেড়ায়।

‘এখন তো আমাদের শহরে চারপাশে উন্মুক্ত নির্জন নর্দমা বা ড্রেন নেই। তাই তাদের খাদ্য সংকটও রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে এই পাখিদের এখনও দেখা যায়। তবে আগের মতো নেই। খাদ্য ও আবাসস্থল বিপন্ন হওয়ার কারণে তাদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। ’

এর আকৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ছাতিঘুরুনি আকারে আমাদের চড়ুইয়ের থেকে সামান্য বড়। আকৃতি ১৯ সেন্টিমিটার। এর গলা সাদা। চোখের উপর সাদা ভ্রু-রেখা রয়েছে। চোখ বাদামি। পা মেটে বাদামি। বুক কালো। লেজের নিচের দিকটা সাদাটে। লেজের প্রতিটি পালকের আগা সাদা।  

আমাদের বাংলাদেশে এই Rhipidudidae পরিবারের শুধু ‘ধলাগলা-ছাতিঘুরুনি’ প্রজাতির পাখিটিকে দেখা যায়। তবে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্য দেশে এই পরিবারের অন্য প্রজাতির পাখি রয়েছে। আইইউসিএন এর গবেষণায় এই প্রজাতিকে Least Concern  বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান প্রখ্যাত পাখিবিদ ইনাম আল হক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৮
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।