ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ঐতিহ্য ও আধুনিকতা বিনিময়ের কর্মশালা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৬
ঐতিহ্য ও আধুনিকতা বিনিময়ের কর্মশালা ছবি- শুভ্রনীল সাগর- বাংলানিউজ

ইনানী রয়্যাল রির্সোট থেকে: চামরোং, চুংদুই, মররিং, ফুংপ্রেরা এসেছেন বান্দরবানের বিভিন্ন পার্বত্য এলাকা থেকে। দু’টি দলে ভাগ হয়ে একদিকে চলছে পুঁতির পর পুঁতি সাজিয়ে নজরকাড়া বিছা, দুল, গয়না বানানোর কাজ।

অন্যদলের হাতে বাঁশ হয়ে উঠছে বাহারি জিনিসপত্র। বংশ পরম্পরায় পাহাড়ের ভাঁজ-উপভাঁজের এ বাসিন্দারা এসব করেই থাকেন। তবে কক্সবাজারের ইনানী রয়্যাল রিসোর্টে ফ্যানের তলায় বসে এসব করার কী মাহাত্ম্য?
 
তাদের সঙ্গে আবার যোগ দিয়েছেন শহুরে, শিক্ষিত, আপাদমস্তক আধুনিক একদল প্রশিক্ষক। কাগজে-কলমে পার্বত্য বাসিন্দাদের দক্ষিণ মেরু। কোন বিষয়টি তাদের একছাদের তলায় আনলো? কৌতুহলের পারদ চড়বে বৈকি!
বুঝিয়ে বললেন ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বণ্যপ্রাণি গবেষক সিজার রহমান বলেন, পার্বত্য এলাকা বিশেষ করে বান্দরবান, বর্তমানে যেখানে আমরা কাজ করছি- সেখানে প্রধান যে সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটি হলো, মানুষ বেড়েছে। এ কারণে তাদের যে ঐতিহ্যবাহী পেশা, জুম চাষ ও শিকার- সেগুলো করে আর চলছে না। এগুলো টেকসই পেশাও নয়। তা চালিয়ে গেলে জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাবে। পাশাপাশি বন ও বণ্যপ্রাণি সংরক্ষণের বিষয়টি চলে আসে। সেক্ষেত্রে মানুষের দরকার অল্টারনেটিভ ইকনোমিক লাইভলিহুড। বন ও বণ্যপ্রাণি সংরক্ষণের পাশাপাশি আমাদের সংগঠনের আরেকটি কার্যক্রম হচ্ছে, স্থানীয়দের লাইভলিহুড সৃষ্টি করে বনের ওপর তাদের অবলম্বন কমানো। এর একটি অংশ হচ্ছে, ক্র্যাফট। আবার শুধু ক্র্যাফট বানালেই চলবে না, সেগুলো বিক্রির জন্য বাজারও তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা পাশে পেয়েছি এ কর্মশালার আরেক সহযোগী প্রতিষ্ঠান বি-ক্র্যাফটকে। দুই প্রতিষ্ঠান মিলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের নিয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।
 
এবার বোঝা গেলো, কর্মশালার নাম কেন ‘এ নলেজ একচেঞ্জ ওয়ার্কশপ’। পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক জ্ঞান নিয়ে এসেছেন মররিং-চামরোংরা।  

অন্যদিকে, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বুটিক হাউজ অরণ্য ও বি-ক্র্যাফট থেকে এসেছেন আধুনিক ডিজাইনাররা। আধুনিক জ্ঞানের ভাণ্ডারে তারা যোগ করবেন পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী রসদ। বিনিময়ে পাহাড়ি কারুকাজে যোগ হবে আধুনিকতার ছোঁয়া। দু’টি ধারার জিনিসপত্রেরই আলাদা চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দু’টি মিলে যদি এক হয়? যাকে বলে ফোক আর্টের সঙ্গে ফাইন আর্টের মেলবন্ধন। হ্যাঁ, ঠিক এটাই উদ্দেশ্য। তাতে দুইয়ের শক্তি এক হয়ে মূলধারার বাজারে আরও বেশি চাহিদা ও আগ্রহের জায়গা তৈরি হবে বলে মনে করছে আয়োজকপক্ষ।
তাহলে বান্দরবান থেকে তাদের উঠিয়ে এখানে আনা কেন? ‘পাহাড়িরা সারাবছর তো পাহাড়েই থাকেন। তাদের অনেকেই রয়েছেন এখনও সমুদ্র দেখেননি। এজন্য সমুদ্রকূলে এ আয়োজন। তারাও উপভোগ করছেন। এমন নয় একটানা কাজ চলছে। কাজ হচ্ছে, খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, গল্প, সৈকতে ঘোরাঘুরি- এর মধ্য দিয়েই কর্মশালা এগিয়ে চলছে। দিনের পাশাপাশি রাতেও চলবে কাজ। ’
 
এর আগে ছোটখাটো পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চললেও, এরকম ঘটা করে কর্মশালা এবারই প্রথম। এতে অংশ নিয়েছেন ১১ জন, সঙ্গে দু’জন দোভাষী- যারা বাংলা-পাহাড়ি দু’টিতেই চালিয়ে নিতে পারেন। নারী ক্ষমতায়নকে প্রাধান্য দেওয়ায় এদিকের ১৩ জনের দলে পুরুষ চারজন। অন্যদিকে, ডিজাইনাররা রয়েছেন চারজন। কর্মশালা চলছে পুঁতি, তাঁত ও বাঁশের জিনিসত্রের ওপর।  
 
সিজার রহমান জানান, এই ১৩ জনের দায়িত্ব আবার অনেক বেশি। তাদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যেনো তারা পাহাড়ে গিয়ে অন্যদের শেখাতে পারেন। এরপর বান্দরবানে গিয়েও এরকম কর্মশালা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
 
মঙ্গলবার (০৪ অক্টোবর) ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে শুরু হলেও কর্মশালা চলবে ০৫ থেকে ০৭ অক্টোবর। সেই হিসেবে বুধবার থেকেই শুরু হলো এর যাত্রা।

** কক্সবাজারে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কর্মশালা 

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৬
এসএনএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।