ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

প্যাডে ভাত নাই, কিস্তি দেতে পারি না

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
প্যাডে ভাত নাই, কিস্তি দেতে পারি না ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাথরঘাটা উপকূল ঘুরে: বাপ-দাদার নিজস্ব কোনো জমি-জমা নেই। বলেশ্বর নদের পাড়ে বাঁধের ওপর দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বসবাস করছেন ইসমাইল হাওলাদার (৭০)।

পূর্ব পুরুষের বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নে। ৫০ বছর আগে চরদুয়ানী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামে বিয়ে করে এখানেই বসবাস শুরু করেন ইসমাইল হাওলাদার।

একটা সময় ছিলো ইসমাইলের যেমন শক্তি ছিলো তেমনি নদী-খাল-বিলে মাছ ছিলো ভরপুর। খরস্রোতা বলেশ্বর পাড়ি দিয়ে গভীর সুন্দরবনের সুপতি রেঞ্জে গিয়ে ১০/১২ হাত পানির নিচ থেকে আড়াই থেকে পাঁচ কেজি ওজনের কাওন মাছ ধরেছেন ইসমাইল। এখন বৃদ্ধ বয়সে না পারছেন কাজ করতে, না পারছেন আগের মতো নদীতে জাল বাইচ করতে। একমাত্র ছেলে নিজে নদীতে জাল বাইচ করে, কিন্তু ইসমাইলের কোনো খোঁজ নেন না।

বাংলানিউজের উপকূল থেকে উপকূলে অনুসন্ধানী টিমের সঙ্গে কথা হয় ইসমাইল হাওলাদারের।

তিনি বলেন, ‘কাম কাইজ করতে পারিনা। প্যাডে ভাত নাই, কিস্তিও দেতে পারি না। সিডরে পাওয়া ত্রাণের টিন বেইচ্যাও প্যাড (পেট) চালাইতে অইছে। প্যাডে ভাত থাকলে কাম করতে পারমু, আর কাম করতে পারলে টাহাও পামু। কিস্তি দেতেও সমস্যা অইবে না। ’

ইসমাইল, ছগির বিশ্বাস ও মজিবর বিশ্বাসের মতো উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে সম্প্রদায়সহ অধিকাংশ মানুষই ঋণের জালে বন্দি। শুধুই এনজিওর টাকাই নয় আড়তদারদের দাদনের জালেও আটকা তারা।

কথা হয়, পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপির) পদ্মা গ্রামের নুরুল আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘একবার ঋণের জালে পড়ে গেলে বের হওয়ার সুযোগ নেই। মানুষের হাতে টাকা না থাকলে ঋণ উত্তোলন করে তা কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। টাকা না থাকলে কিস্তি পরিশোধ করতে পারে না, তখন অন্যের (ব্যক্তি বিশেষ) কাছ থেকে সুদে ধার হিসেবে টাকা এনে কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। ’

পাথরঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপির) ইউপি সদস্য মো.সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আর জেলে সম্প্রদায়ের কথাতো বলার অপেক্ষাই রাখে না। শেষমেষ কিস্তি দিতে না পারলে জেলেও যেতে হয় এ অঞ্চলের মানুষদের।

কখনো সাগর-নদীতে মাছ থাকে না, আবার কখনো মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। ভরা মৌসুমে সাগর কিংবা নদীতে তেমন ইলিশ পাওয়া যায় না। উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটার অধিকাংশ মানুষ মাছের ওপর নির্ভরশীল। সাগরে প্রচুর পরিমাণ মাছ পাওয়া গেলে এ অঞ্চলের মানুষই দেশের অর্থনৈতিক চাকা ঘুড়ায়। এমনকি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও নীরবে কাজ করছেন এ অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা। অভাবে পড়ে ঋণের জালে বন্দি হয়ে অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন আবার অনেকেই দেশান্তরি হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, জুন, ২৯, ২০১৬
এনটি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।