ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

কোথাও চিকিৎসক নেই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৩ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
কোথাও চিকিৎসক নেই

গাবুরা (শ্যামনগর) সাতক্ষীরা থেকে: সোমবার। বেলা ১টা।

ডুমুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক। ভেতরে পুষ্টি সেবার আওতায় থাকা পরিবারগুলোর হিসেব নিচ্ছেন ব্র্যাকের কয়েকজন স্বাস্থ্য সেবিকা। তবে কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার হাফিজুলকে পাওয়া গেল না।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবিকা আকলিমা জানান, হাফিজুল একজন রোগীকে দেখতে গেছেন। তবে আজ আর আসবেন না।

মঙ্গলবার বেলা ১২টায় গাবুরা চোদ্দরাশি বাজারে গাবুরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। দোতলা ভবন অনেকটাই জীর্ণ। তালা মারা দরোজায় বোঝা যায় চিকিৎসক নেই। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখা যায়, ভেতরের দেয়ালে কিছু স্বাস্থ্যবাণী ঝোলানো রয়েছে।

আশপাশের বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে চিকিৎসকের নাম জানা গেলো, শফি ডাক্তার।

চোদ্দরাশির দোকানদার সুলায়মান বাংলানিউজকে বলেন, এখানে শুধু বুধবারেই চিকিৎসক আসেন। অন্য কোনদিন এখানে চিকিৎসক থাকেন না। মানুষ দূর দূরান্ত থেকে এসে ফিরে যায়। একবার ফিরে গেলে আর আসে না।

মধ্য খোলপেটুয়ার গৃহিনী আমেনা বেগম বলেন, এ পর্যন্ত দু'বার তিনি গাবুরার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেছেন। একবার ডাক্তারের দেখা পেয়েছেন, আবার পাননি।

স্থানীয় যুবক সবুজ বলেন, বুধবার হাটের দিনই চিকিৎসক থাকেন। অন্য সময় অসুস্থ হলে এখানকার বাজারের ডাক্তারদের দেখান।

বাজারের ডাক্তার বলতে বোঝায় ওষুধের দোকানদার। খোলপেটুয়ায় এ ধরনের ওষুধ বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছেন- গোলাম মাওলা। গাইনবাড়িতে লাবলু ও আবু দাউদ। চিকিৎসার জন্য এদেরই শরনাপন্ন হন গ্রামবাসী।

গাবুরা ইউনিয়নবাসীকে সবচেয়ে বড় সমস্যা চিহ্নিত করতে বললে সবাই এক কথায় উত্তর দেন, চিকিৎসা। এখানে প্রসবকালীন মা ও শিশুর মৃত্যুর ঘটনা অহরহ।

১৫ দিন আগেই আল আমিনের স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে ফার্মেসির দোকানদার লাবলু দ্রুত উপজেলা হাসপাতালে নেয়ার জন্যে বলেন। তবে নৌকায় নদী পার হয়ে বুড়িগোয়ালীনি ঘাটে গেলেই সন্তান প্রসব হয়ে যায়। তবে সে সন্তানকে আর বাঁচানো যায়নি।

মাত্র ৭ দিন আগেই শাহীন নূল আলমের ৬ মাস বয়সী সন্তান নিউমোনিয়ায় মারা যায়। কারণ এখানে চিকিৎসক না থাকায় রোগই বুঝতে পারেননি অভিভাবক। উপজেলা হাসপাতালে পৌছাতে পৌছাতে দেরি হয়ে গেছে ততক্ষণে। চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন শিশুকে।

অথচ ইউনিয়নে সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য রয়েছে দুটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র।

গাবুড়া ওয়াপদা রোডের ওপর দেকানদার আবু মুসা বাংলানিউজকে বলেন, তিনি গত সপ্তাহে ডুমুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গেছেন। বললেন সেখানে চিকিৎসা ভাল। তবে রোগী গিয়ে চিকিৎসকের দেখা পান না। হেলেনা নামে একজন নারী ডাক্তারও এই কমিউনিটি ক্লিনিকে বসেন বলে জানান তিনি।

হরিষাবাড়ি মসজিদের কাছে বৃদ্ধ আবুল কালাম বলেন, ডুমুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা দেয়া হয় মোটামুটি। কিন্তু ওষুধ কম দেয়। পেসক্রিপশনে দিনে দুবার করে ১ সপ্তাহের ওষুধের পরামর্শ দিলে ওষুধ দেয় ৫টি।

কালামের অভিযোগ, বাকি ওষুধের কথা বললে তারা কিনে খেতে বলেন এবং ওষুধের সংকটের কথা জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।