ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

সড়কে জিরাফ, থমকে গেল বাস!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
সড়কে জিরাফ, থমকে গেল বাস! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শতাধিক যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষায়। তবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য এই অপেক্ষা নয়।

বাসে চড়ে জিরাফ, সিংহ, বন মহিষ, হরিণ, ভাল্লুক ও বাঘ দেখার জন্যই এই দীর্ঘ অপেক্ষা। গাড়ি ছাড়া কোনো পযর্টক এখানে প্রবেশ করতে পারে না।

কারণ ১ হাজার ২১৭ একর এলাকায় আলাদাভাবে উন্মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করছে জিরাফ, বন মহিষ, হরিণ, বাঘ, সিংহ, কালো ভাল্লুক, হাতী, জলহস্তী। এছাড়া সাফারি পার্কে উন্মুক্ত অবস্থায় আরও রয়েছে ক্যাঙ্গারু, গয়াল, সাম্বার, জেব্রা, চিত্রাহরিণ ইত্যাদি।
 
এগুলো দেখতে বাসে ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে হবে যাত্রীকে, গুণতে হবে ১০০ টাকা। আমরাও যাত্রী হলাম সাফারি পার্ক পরিবহনে। বাস চলার ১০ মিনিট যেতে না যেতেই সড়কে থেমে গেল বাস। হর্ন তো আর বাজানো যায় না। কারণ পার্কটি পশু, পাখি ও নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দখলে। এদের কোনো ধরনের বিরক্ত করা যাবে না।

বাসের চালকের আর কি করার আছে। কারণ দুটি জিরাফ যে তালগাছের মতো সড়কের উপরে দাঁড়িয়ে।

‍যাত্রীরা অনেক মজা পেলেন। আমার পাশের সিটে বসা ছিলেন নরসিংদী শিবপুর থেকে আসা যাত্রী ইমরান আহম্মেদ।

তিনি বাসে বসেই তার বাবাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলেন, জিরাফের কারণে বাস থমকে যাওয়ার কথা।

প্রায় মিনিট চারেক থমকে থাকলো বাসটি। এর পরেই আপন মনে সড়ক থেকে সরে গেল জিরাফ এবং ধীরে ধীরে এগিয়ে চললো বাসটি। চারদিকে সবুজের সমারোহ। দুই একটি বন মহিষ দৌঁড়াদৌড়ি করছে। এর মধ্যেই প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে অসংখ্যা বানর।

তবে ইচ্ছে করলে জিরাফের বেষ্টনীতে পায়ে হেঁটে চলা যায়। এর পরেই হরিণের জন্য বিস্তৃর্ণ সবুজের সমারোহ। খানিক পায়ে হেঁটে গিয়ে দেখা গেলো, বন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু করছে হরিণের দল।

বনের মধ্যেই হরিণের জন্য পানি খাওয়ার স্থান করে দেয়া হয়েছে। বাসে উঠে এবার রওনা হলাম ভাল্লুক, সিংহ ও বাঘের বেষ্টনীর দিকে।
 
বিশাল আকৃতির গেট খুলে বাসটি প্রথমে প্রবেশ করলো ভাল্লুকের রাজ্যে। তবে তপ্তরোদে শেডের নীচে আরাম আয়েস করছিলো ভাল্লুকগুলো। এর পর দ্বিতীয় গেট খুলে সিংহের রাজ্যে প্রবেশের পালা। প্রায় ১০ থেকে ১২টি সিংহ মনে হচ্ছে আমাদের বাসকে ঘিরে ফেলবে। সমস্ত যাত্রী জ্বালানাগুলো হাত দিয়ে দেখে নিলেন।
 
জ্বালানা খোলা থাক মানে ক্ষুধার্ত সিংহের শিকারে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা।

অনেক সিংহ শেডের নীচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। এর মধ্যে বাসের যাত্রীরা সিংহের সঙ্গে ছবি তোলায় ব্যস্ত। কেউ আবার ভিডিও কলে প্রিয়জনের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথাও বলে নিলেন। হয়তো আনন্দঘন মুহুর্তটি স্মৃতির অ্যালবামে স্মরণীয় করে  রাখার জন্য।
 
সিংহের রাজ্য পেরিয়ে বাস এগিয়ে চলছে বাঘের বেষ্টনীর দিকে। সিংহগুলোকে বিদায় দিয়ে বাঘের বেষ্টনীর মধ্যে প্রবেশ করলো বাসটি। গেটে ঢুকতে দেখা গেলো, বিশাল জিহবা বের করে তপ্তরোদে বিশ্রাম নিচ্ছে বাঘ মামা। বেষ্টনীর মধ্যে তাদের জন্য ছোট ছোট লেক তৈরি করা হয়েছে। এই লেকে তিনটা বাঘ পানি ও কাদার মধ্যে লুটোপুটি খেলছে। ওদের মধ্য থেকেই একটি বাঘ আমাদের বাস লক্ষ্যে করে এগিয়ে আসতে শুরু করলো। বাসের যাত্রীদের এবার সেলফি ও ফটো তোলার পালা।
 
বাঘ মামাকে বিদায় দিয়ে বাস ভ্রমণ শেষ হলো।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
এমআইএস/জেডএম

** বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে মাছের সঙ্গে খেলা!
** মানুষের ঠোঁট থেকে খাবার ঠুকরে নেওয়া ম্যাকাও
** সিংহ শাবকের পুরুষ মা!
** পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে বিরল প্রজাতির ‘তারকা কচ্ছপ’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।