ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

মিলন ছাড়াই বংশ বিস্তারে সক্ষম অজগর

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫
মিলন ছাড়াই বংশ বিস্তারে সক্ষম অজগর ছবি: বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): অবাক হলেও সত্যি, মিলন ছাড়াই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সক্ষম স্ত্রী অজগর। তবে এ পদ্ধতিটির প্রয়োগ তারা যে সবসময় করে- বিষয়টি এমন নয়।

এটি কয়েক প্রজাতির পোকা ও সাপের মতো তাদের বিশেষ এক ক্ষমতা।  

পুরুষ অজগরের যৌন সংস্পর্শ ছাড়াই ডিম পেড়ে অনায়াসে বংশবৃদ্ধি করতে পারে স্ত্রী অজগর। এদের মধ্যে সন্তান উৎপাদনের এ বিশেষ ক্ষমতা পুরুষ প্রজাতির আধিপত্যকে কিছুটা খর্ব করে ফেলেছে বলেই ধারণা গবেষকদের।

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, কিছু প্রজাতির পোকা, কেঁচো এমনকি টিকটিকির মধ্যেও এই ক্ষমতা রয়েছে। মিলন ছাড়াই তারা প্রজননে শতভাগ সক্ষম। শুধু অজগর নয়; এই তালিকায় রয়েছে মরু অঞ্চলের র‌্যাটেল স্নেকও। এরা অনেক ক্ষেত্রে তাদের পুরুষ প্রজাতির সঙ্গে মিলন ছাড়াই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে বংশবৃদ্ধি করতে পারে।

অজগর গবেষণা প্রকল্পের গবেষক ও প্রখ্যাত সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ শাহরীয়ার সিজার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মিলন ছাড়া ডিম দেওয়ার ক্ষমতার নাম পার্থেনোজেনেসেস (Parthenogenesis)। অজগরের মধ্যে এ ধরনের বিশেষে ক্ষমতার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

তিনি বলেন, কিছু কিছু পোকা-মাকড় ও কেঁচো রয়েছে যাদের পুরুষ প্রজাতির নেই বলে তারা প্রকৃতিগতভাবেই এই পার্থেনোজেনেসেস ব্যাপারটি সফল প্রয়োগ ঘটিয়ে পৃথিবীতে টিকে রয়েছে। কিন্তু অজগর সাপের পুরুষ ও স্ত্রী দুটো প্রজাতি রয়েছে। তারা শারীরিক মিলনের মাধ্যমে অথবা ক্ষেত্রবিশেষে শারীরিক মিলন ছাড়াই প্রজনন ঘটাতে পারে।

মিলন বহির্ভূত স্ত্রী অজগরের ডিম সম্পর্কে শাহরীয়ার সিজার বলেন, প্রকৃতিতে পুরুষ ও স্ত্রী অজগরের মিলনের ফলে স্বাভাবিকভাবে স্ত্রী অজগর যতগুলো ডিম দেয় তার শতভাগ ডিমই যে ফুটে বাচ্চা বের হয় এমনটি নয়। কিছু ডিম এমতিতেই নষ্ট হয়ে পড়ে। মিলন বহির্ভূত স্ত্রী অজগরের ডিমগুলোর ক্ষেত্রেও তাই।   

তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালে এটি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন। আমেরিকার ওকলাহমা রাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব তুলসার-এর প্রফেসর ওয়ারেম বুথ এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেন। এছাড়াও হ্যারিডিটি নামের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নালেও এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে।  

বিজ্ঞানীরাই কিন্তু গবেষণা করে বের করেছেন, বিষাক্ত সাপের বিষ দিয়ে মানবদেহের বিভিন্ন রোগ-জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিজ্ঞানীদের এমন গবেষণাগুলোই কিন্তু মানবকল্যাণের লক্ষ্যে।

অজগর গবেষণা প্রকল্প সূত্র জানায়, অজগর (Python) Serpentes বর্গের অন্তর্গত Boidae গোত্রের বিষমুক্ত সাপ। বাংলাদেশে অজগরের দুটি প্রজাতি আছে। একটি বার্মিজ পাইথন (Burmese Python) এবং অপরটি রেটিকিউলেট পাইথন (Reticulated Python)। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের মিশ্র-চিরহরিৎ বনাঞ্চলে এদের পাওয়া যায়।

অজগরের দাঁত অত্যন্ত শক্ত। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ইঁদুর, খরগোশ, ছাগল, ভেড়া, শিয়াল এবং হরিণ শিকার করে বেশি। খাওয়ার আগে অজগর তার শিকারকে পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলে। স্ত্রী অজগর ডিমের চারদিকে কুণ্ডলী পাকিয়ে তা দেয়। প্রায় দু’ মাস পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।