ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

এক ঘুমেই ৫ বছর

জীববৈচিত্র্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৫
এক ঘুমেই ৫ বছর

ঢাকা: ঘুম‍ানোর বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেক পাঠকই মনে রেখেছেন মহাভারতের চরিত্র কুম্ভকর্ণকে। এই যুগে কোনো মানুষ আছে কিনা তা জানা না গেলেও এমন এক মাছের সন্ধান পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আফ্রিকার লাংফিশ। খাবার এবং পানি ছাড়াই এরা  কেবল ঘুমিয়ে শীত যাপন করে।

সাধারণত শীতকালে পানি থেকে উঠে এরা ডাঙ্গায় চলে আসে এবং খাবার ছাড়াই বিরতিহীনভাবে ঘুমিয়ে তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কাটিয়ে দেয়।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাংফিশের ঘুম ভাঙতে পরিষ্কার পানির দরকার হয়। যখন এর চারপাশে পরিষ্কার পানি আসে, তখন মাছটি জেগে ওঠে।

এতো দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে থাকার একটা বড় কারণ, একবার ঘুমিয়ে পড়লে এদের আর খাদ্যের দরকার হয় না। আবার এরা কোনো ময়লাও উৎপাদন করে না।

গবেষকদের মতে, মাছটি তাদের ‘বায়োলজিক্যাল ক্লল’ এর গতি কমিয়ে দেয়। ফলে জীবন ধারণের জন্য তাদের খুবই কম শক্তির দরকার হয়।

দ্য ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা লাংফিশের এ অবস্থাকে বলছেন, এসটিভেশন। অর্থাৎ জীবকোষের কার্মকাণ্ডে পরিবর্তন আনা।

আরও সহজ করে বলতে গেলে, কম শক্তি খরচ করে বেঁচে থাকা এবং কম আবর্জনা উৎপাদন করার পেছনে যে বিষয়টি রয়েছে ‍তা হলো- কোষের কর্মকাণ্ড সীমিত করে এবং শরীরে মজুদ থাকা শক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেওয়া।

গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন দ্য বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক আইপ জুয়েন কঙ।

তিনি ছয় মাস ঘুমিয়ে থাকার পরে একটি লাংফিশ যখন পরিষ্কার পানিতে ফিরে আসে তখন এর লিভারের জিন পরীক্ষা করেন। এতে দেখা যায়, ছয় মাস পরে লিভার- জমে থাকা ক্ষতিকারক উপাদান পরিষ্কার করে এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাব মুক্ত করে।

ঘুমিয়ে থাকা এই অবস্থার সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধা, আয়রন-দস্তা এবং পরিপাকেরও সম্পর্ক রয়েছে।

আফ্রিকান লাংফিশ টেট্রাপড শ্রেণীর খুব কাছাকাছি একটি প্রাণী। এদের ‍এনাটমি করে দেখা গেছে, এই শ্রেণীর যে প্রাণীগুলো পানিতে বাস করে, তারা নির্দিষ্ট সময় পানির উপরে শ্বাস নিয়ে জীবন ধারণ করতে পারে। ঢোক গিলে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে এবং অন্যান্য প্রাণীর মতোই শ্বাস-প্রশ্বাস ছেড়ে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখে এরা।

বিষয়টি মানুষের ক্ষেত্রেও সম্ভব কিনা তা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

কেননা এটি সম্ভব হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটে যাবে বলে আশা করছেন তারা। যেমন গুলিবিদ্ধ রোগীর চিকিৎসা বা মস্তিষ্কের অস্ত্রপচারে আরও সময় পাওয়া যাবে।

পাশাপাশি মহাকাশ গবেষকরাও এ অবস্থায় দীর্ঘ দূরত্বে ‘স্পেস মিশন’ চালাতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৫
এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।